সুন্দরবনে চিংড়ি জালে সর্বনাশ!
প্রকাশিত : ১৭:৩৭, ১৭ এপ্রিল ২০২২
বঙ্গোপসাগর উপকূলে সুন্দরবনের নদী-খালের মোহনায় জেলেদের পাতা চিংড়ির বাঁধাজালে বিভিন্ন প্রকারের মাছের পোনা নিধন হচ্ছে। জেলেদের ওই বাঁধাজালে এক কেজি চিংড়ি মাছ ধরতে গিয়ে বিভিন্ন প্রজাতির কমপক্ষে এক মন মাছের পোনা মারা পড়ছে। এর মধ্যে রয়েছে ইলিশ, কোরাল, বোয়াল, দাতনে, আইড়, তাড়িয়াল, তপশে, পোয়া, টেংড়া, কাইন ও কাকড়া, কচ্ছপ, হাঙ্গরসহ শতশত প্রজাতির মাছের পোনা রয়েছে। জেলেরা শুধু চিংড়ি মাছ সংগ্রহ করে অন্য সব মারা যাওয়া মাছের পোনা পানিতেই ফেলে দিচ্ছে। ফলে সুন্দরবনসহ উপকূলীয় নদ নদীতে ক্রমান্বয়ে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে।
সুন্দরবন উপকূলের জয়মনি গ্রামের লিয়াকত আলী, নজরুল আকন ও বেল্লাল ফকির জানায়, বঙ্গোপসাগর সংলগ্ন সুন্দরবনের বলেশ্বর নদীর শুকপাড়া, ডিমের চরের বাইর পাশ থেকে বাদামতলা পর্যন্ত, কটকা ও দুধমুখি নদীর মোহনা, ছাপড়াখালি ও শেলা নদীর মোহনা, দুবলার চরের বিভিন্ন নদী খালের মোহনায় চিংড়ি ধরার জন্য সূক্ষ্ম ফাঁসের ওইসব অবৈধ বাঁধাজাল পাতা হয়। সুন্দরবন বিভাগের অফিসগুলোর সাথে যোগ-সাশসে প্রতিবছরের চৈত্র থেকে আষাড় মাস পর্যন্ত শতশত নিষিদ্ধ এই বাঁধাজাল জাল দিয়ে তারা কোটি কোটি মাছের পোনা ধ্বংস করে চলছে। ফলে অন্য জেলেরা সুন্দরবনসহ উপকূলের নদ-নদীতে আর তেমন মাছ পাচ্ছেন না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক জেলেরা জানান, প্রতি আমাবস্যা-পূর্ণিমার সময় ৭ দিন করে নির্দিষ্ট হারে জেলে নৌকা প্রতি জ্ঞানপাড়া, কচিখালি, কটকা, কোকিলমনি, শেলা ও দুবলার বন অফিসের অসাধু কর্মকর্তাদের মোটা অংকের টাকা দিলেই জেলেদের নদী খালের মোহনায় বাঁধাজাল পাততে দেয় সুন্দরবন বিভাগের কর্মকর্তারা।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ মৎস্যজীবি ট্রলার মালিক সমিতির সহ-সভাপতি সাইফুল ইসলাম খোকন জানান, নিষিদ্ধ ওই বাঁধা জালে বঙ্গোপসাগরের সব ধরনের মাছের পোনা মারা পড়ছে। এভাবে চলতে থাকলে অচিরেই সুন্দরবনসহ উপকূলীয় নদ-নদী ও খালে কোন মাছ পাওয়া যাবে না।
শরণখোলা উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা বিনয় কুমার রায় বলেন, বঙ্গোপসাগর থেকে বয়ে আসা নদীর মোহনায় এ ধরনের সূক্ষ্ম ফাঁসের বাঁধাজাল পাতার কারণে ইলিশসহ সব ধরনের মাছের পোনা নিধন হচ্ছে। এলাকাটি সুন্দরবন বিভাগের আওতাধীন। তাই উপকূলের মৎস্য সম্পদ রক্ষায় নিষিদ্ধ ওইসব বাঁধাজাল পাতা বন্ধের জন্য মৎস্য বিভাগের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বন বিভাগকে জাননো হবে।
বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জ কর্মকর্তা (এসিএফ) মো. শহিদুল ইসলাম জানান, সুন্দরবনের বঙ্গোপসাগর উপকূলে নদ-নদী ও খালের মোহনায় বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে এধরনের জাল পাতা হলে থাকালে তা বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কেআই//
আরও পড়ুন