ঢাকা, রবিবার   ২২ ডিসেম্বর ২০২৪

নওগাঁয় গুজব ছড়ানো মামলায় প্রধান শিক্ষককে কারাগারে প্রেরণ

নওগাঁ প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ২২:০১, ১৭ এপ্রিল ২০২২

প্রধান শিক্ষক ধরণী কান্ত বর্মণ

প্রধান শিক্ষক ধরণী কান্ত বর্মণ

হিজাব নিয়ে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত ও মানহানির অভিযোগে নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার দাউল বারবাকপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক আমোদিনী পালের দায়ের করা মামলার প্রধান আসামি ওই স্কুলেরই প্রধান শিক্ষক ধরণী কান্ত বর্মণকে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে। 

রোববার নওগাঁ আমলী আদালত-৩ (মহাদেবপুর)-এ হাজির হয়ে ওই প্রধান শিক্ষক জামিনের আবেদন জানালে আদালতের বিচারক মো. তাইজুল ইসলাম সে আবেদন না মঞ্জুর করে তাকে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। 

এ নিয়ে গতকাল রোববার পর্যন্ত এই মামলায় তিনজনকে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।

এর আগে একই মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া দুজন হলেন স্থানীয় নিউজ পোটাল ”মহাদেবপুর দর্পণ-এর পরিচালক কিউ এম সাঈদ টিটু (৫০) ও একই সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধি কাজী সামসুজ্জামান মিলন (৩৮) ওইদিন আদালতে জামিনের আবেদন করলে আদালত তাদের দুইজনেরও আবেদন না মঞ্জুর করেন। 

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তারা দুইজনেই স্থানীয় বিএনপির প্রত্যক্ষ রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এলাকাবাসীর অভিযোগ, বর্তমান সরকারকে বেকায়দায় ফেলতেই তারা পরিকল্পিতভাবে গুজব ছড়ানোর চেষ্টা করেছে। যদিও এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন স্থানীয় বিএনপির নেতা। 

গত ৬ এপ্রিল দাউল বারবাকপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে স্কুল ড্রেস পরে না আসার কারণে সহকারী প্রধান শিক্ষক আমোদিনী পাল ছাত্রীদের এবং শরীর চর্চার শিক্ষক বদিউল আলম ছাত্রদের মারপিট করেন। পরে একটি মহল বিষয়টিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার লক্ষে ‘হিজাব পরে না আসার কারণে শিক্ষার্থীদের নির্যাতন করা হয়েছে’ বলে গুজব ছড়িয়ে গত ৭ এপ্রিল ওই বিদ্যালয়ে হামলা চালিয়ে ভাংচুরসহ সহকারী প্রধান শিক্ষক আমোদিনী পালের অপসারণ দাবি করে। 

এদিকে হিজাব বিতর্ক ছড়িয়ে পড়ার আগেই স্থানীয় প্রশাসনের দ্রুত হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয় এবং প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনের জন্য স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে তিন সদস্য বিশিষ্ঠ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটি পুরো ঘটনা সরেজমিন তদন্ত করে ৮ পৃষ্টার একটি তদন্ত রির্পোট দাখিল করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে। 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান জানান, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে ৭টি সুনির্দিষ্ট কারণ ও সুপারিশ উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঘটনার দিন দাউল বারবাকপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা আমোদিনী পাল হিজাবের কারণে নয়; নির্ধারিত স্কুল ড্রেস না পরার কারণেই শিক্ষার্থীদের মারধর করেছিলেন। একই দিনে বদিউল আলম নামে আরেক শিক্ষকও মারধর করেছিলেন শিক্ষার্থীদের। অথচ প্রধান শিক্ষক ধরণী কান্ত বর্মণ শুধু শিক্ষিকা আমোদিনী পালকে শোকজ করেন। এই ঘটনা তদন্ত কমিটির কাছে উদ্দেশ্যমূলক মনে হয়েছে। শুধু শিক্ষিকা আমোদিনী পালকে শোকজ করায় প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি। 

এছাড়া প্রতিবেদনে সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে শিক্ষার্থীদের প্রহার করায় শিক্ষিকা আমোদিনী পাল ও শিক্ষক বদিউল আলমের বিরুদ্ধেও বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

তদন্ত কমিটির ওই প্রতিবেদনে গুজব ছড়ানো প্রসঙ্গে বলা হয়েছে যে, প্রধান শিক্ষক ধরনী কান্ত বর্মণ, শিক্ষিকা আমোদিনী পাল ও ম্যানেজিং কমিটির মধ্যে দীর্ঘদীনের ত্রীমুখী দ্বন্দ্ব চলছিল। যা গুজব ছড়াতে ব্যবহার করা হয়েছে। শুধু তাই নয়; গুজব ছড়ানোর পেছনে স্থানীয় কিছু সাংবাদিক ও সাধারণ মানুষের নামও উঠে এসেছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতেও সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি। 

এরই প্রেক্ষিতে, হিজাব কাহিনীর গুজব ছড়ানো ও মানহানির অভিযোগ উত্থাপন করে গত শুক্রবার সকালে নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার দাউল বারবাকপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের আলোচিত শিক্ষিকা আমোদিনী ওই বিদ্যালয়ের পাল প্রধান শিক্ষক ধরণী কান্ত বর্মণকে এক নম্বর আসামি করে পাঁচজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ২৫ জনকে আসামি করে এই মামলা দায়ের করেন। মামলায় ওইদিনেই কিউ এম সাঈদ টিটু ও কাজী সামসুজ্জামান মিলনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠায়।
 
এদিকে উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তনুদেব, সুমন ও আওয়ামী লীগ নেতা লুৎফর রহমান জানান, এই হিজাব গুজবের পিছনে একটা ঘৃণ্যতম ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। এই স্পর্শকাতর বিষয়টি সামনে নিয়ে এসে স্থানীয় বিএনপি নেতাদের ইন্ধনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে হেয় প্রতিপন্ন এবং সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা চালানো হয়েছে। এই ঘটনার আমরা তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং জড়িতদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি। 

তবে মহাদেবপুর থানা বিএনপি সভাপতি মো. রবিউল আলম বুলেট এই অভিযোগ প্রত্যাখান করে বলেন, তারা সাংবাদিক হিসাবে ঘটনাস্থলে যা পেয়েছে তাই প্রচার করেছে। তারা বিএনপি করে বলেই তাদের ফাঁসানো হয়েছে। আমারা ওই দুই সাংবাদিকের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছি।

প্রধান শিক্ষকের জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করে নওগাঁর পুলিশ সুপার মো. আবদুল মান্নান মিয়া জানান, ওই স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক আমোদিনী পাল বাদী হয়ে একটি মামলা করেছেন। মামলায় তার বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত, তাকে সামাজিকভাবে হেয় করা ও বেআইনিভাবে দলবদ্ধ হয়ে বিদ্যালয়ে হামলার অভিযোগে দন্ডবিধির ১৪৩, ৫০০, ৫০৬ ও ২৯৫ (ক) ধারায় এজাহার দাখিল করেছেন। তিনি মামলায় পাঁচজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ২৫ জনকে আসামি করেছেন। এরমধ্যে ২ জনকে গ্রেপ্তার ও একজনের জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে জেল হাজতে পাঠিয়েছেন আদালত। 

এই ঘটনায় নির্দোষ কাউকে হয়রানী করা হচ্ছে না বলেও জানান পুলিশ সুপার। 

এনএস//


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি