ধর্ষণের ঘটনা ৫১ হাজার টাকায় নিষ্পত্তির চেষ্টা
প্রকাশিত : ০৯:১১, ২১ এপ্রিল ২০২২
নওগাঁর মান্দায় ধর্ষণের একটি ঘটনায় শালিস বৈঠকে ভিকটিমকে ৫১ হাজার টাকা দেওয়ার জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। কশব ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান ধর্ষকের বিরুদ্ধে এই অর্থদণ্ডের রায় প্রদান করেন।
বুধবার বিকাল পর্যন্ত সেই অর্থ ভিকটিমের কাছে পৌঁছেনি। তবে সমুদয় টাকাই ইউপি সদস্য আব্দুল জব্বার হাতিয়ে নিয়েছেন বলে জানা গেছে।
এর আগেই নির্যাতিতা ওই ধর্ষককে অভিযুক্ত করে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করলে বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সেই অভিযোগ থানায় রেকর্ড করা হয়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ।
জানা গেছে, ইউনিয়ন পরিষদের কার্যালয়ে শালিস বৈঠকের মাধ্যমে মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে ধর্ষণের এই ঘটনা টাকার বিনিময়ে নিষ্পত্তি করে দেওয়া হয়। তাৎক্ষণিকভাবে ধর্ষকের নিকট থেকে দণ্ডিত অর্থ আদায় করাও হয়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ওই ইউনিয়নের চকচোয়ার গ্রামের মৃত আছির উদ্দীনের ছেলে মামুনুল ইসলাম ওরফে মামনুর (৩০) নামে এক যুবক একই গ্রামের স্বামী পরিত্যাক্তা নারীকে বিয়ের প্রলোভন দিয়ে দৈহিক সম্পর্ক গড়ে তোলে। পরে ওই নারী মামনুরকে বিয়ের চাপ দিলে সে নানা তালবাহানার আশ্রয় নেই। একপর্যায় প্রতারণার শিকার ওই নারী ধর্ষণের অভিযোগ উত্থাপন করে গত রোববার মামুনুল ইসলামের বিরুদ্ধে মান্দা থানায় লিখিত এজাহার দায়ের করেন।
মামলাটির প্রাথমিক তদন্তে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন মান্দা থানার উপ-পরিদর্শক অর্জুন কুমার। এরপর বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে অভিযুক্ত যুবকের পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনরা বিভিন্ন মহলে তদবির শুরু করেন। এখন পর্যন্ত রেকর্ডভুক্ত করা হয়নি ভুক্তভোগী নারীর মামলাটি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার একাধিক বাসিন্দা জানান, ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে তৎপরতা শুরু করেন স্থানীয় ওয়ার্ডের সদস্য আব্দুল জব্বার। তার নেতৃত্বে মঙ্গলবার রাতে তারাবির নামাজের পর কশব ইউনিয়ন পরিষদে শালিসের আয়োজন করা হয়। শালিসে সভাপতিত্ব করেন চেয়ারম্যানে ফজলুর রহমান।
এছাড়া বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ইউপি সদস্য বুলবুল হোসেন ওরফে বুলু মেম্বার, মোজাফফর মাস্টার, আব্দুর রহিম, আব্দুস সালামসহ অভিযুক্ত যুবকের পক্ষে অনেকে উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান ধর্ষিতাকে ৫১ হাজার টাকা দেওয়ার রায় ঘোষণা করেন।
ভুক্তভোগী নারী অভিযোগ, ‘কৌশলে আমাকে ওই শালিসে উপস্থিত করানো হয়। এরপর আমার কোন কথা আমলে না নিয়ে মাতবররা মামুনুলের পক্ষে কথা বলেন। চেয়ারম্যান জরিমানার যে রায় দিয়েছেন সেই টাকাও আমাকে দেওয়া হয়নি। আমি ন্যায়বিচার দাবি করছি।’
ইউপি চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান বলেন, বিষয়টি নিয়ে উভয়পক্ষের সম্মতিতে শালিস বৈঠক করা হয়েছে। বৈঠকে ৫১ হাজার টাকা জরিমানা নির্ধারণ করা হয়। জরিমানার টাকা মেম্বার আব্দুল জব্বারের কাছে জমা আছে।
ইউপি সদস্য আব্দুল জব্বার বলেন, বিষয়টি মিমাংসা করে দেওয়ার জন্য সবাই চাপাচাপি করেছে। তাই চেয়ারম্যানকে নিয়ে নিষ্পত্তি করে দেওয়া হয়েছে। জরিমানার টাকা তার হেফাজতে রয়েছে বলেও স্বীকার করেন তিনি।
মান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহিনুর রহমান বলেন, এ সংক্রান্ত একটি এজাহার পেয়েছি। বিষয়টি তদন্তের জন্য উপ-পরিদর্শক অর্জুন কুমারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তদন্ত সম্পন্ন হলেই মামলা রেকর্ড করা হবে।
এদিকে শালিসের মাধ্যমে ধর্ষণের ঘটনা নিষ্পত্তি করা যায় কিনা জানতে চাইলে ওসি বলেন, এই অভিযোগ শালিসযোগ্য নয়।
এএইচ/
আরও পড়ুন