ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২১ নভেম্বর ২০২৪

ব্যবসায়ীর মুক্তিপণের টাকায় গার্মেন্টস দেয়ার পরিকল্পনা

পটুয়াখালী প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ০৯:৫৬, ২১ এপ্রিল ২০২২ | আপডেট: ০৯:৫৮, ২১ এপ্রিল ২০২২

ব্যবসায়ী শিবুলাল দাসকে ড্রাইভারসহ অপহরণ করে মুক্তিপণের টাকায় দক্ষিণবঙ্গের বড় গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি দিতে চেয়েছিল অপহরণকারীরা। গ্রেফতারের পর পুলিশের কাছে এমন স্বীকারোক্তি দিয়েছে অপহরণের মূল পরিকল্পনাকারী ল্যাংড়া মামুন ওরফে মুফতি মামুন। 

বুধবার (২০ এপ্রিল) সন্ধ্যায় পটুয়াখালী জেলা পুলিশের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজে দেয়া একটি পোস্টের মাধ্যমে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। 

পটুয়াখালী জেলা পুলিশের রিকুইজিশনের প্রেক্ষিতে গত ১৯ এপ্রিল দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঢাকার মিরপুর, ভাটারা এবং গুলিস্তান এলাকায় ডিবি গুলশান বিভাগের একাধিক টিম ধারাবাহিক অভিযান চালিয়ে ল্যাংড়া মামুনসহ ৪ জনকে গ্রেফতার করে।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন ল্যাংড়া মামুন ওরফে মুফতি মামুন, পিচ্চি রানা, জসীমউদ্দীন এবং আশিকুর রহমান। এসময় অপহরণের কাজে ব্যবহৃত প্রাইভেট কারসহ মোবাইল ফোন, গামছা এবং ৪ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। 

এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত মোট ১১ জনকে গ্রেফতার করে হয়েছে।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত ফেব্রুয়ারি মাসে এই অপহরণের পরিকল্পনা করা হয় পটুয়াখালী লঞ্চঘাটের কাছাকাছি ল্যাংড়া মামুনের গার্মেন্টস অফিসে। তাতে অংশ নেয় ল্যাংড়া মামুন, পিচ্চি রানা, পাভেল ও বিআরটিসির ড্রাইভার জসিম। পরে একাধিক মিটিং ও অপারেশনাল পরিকল্পনা করা হয়। 

মিটিংয়ে ঢাকা থেকে যোগ দেয় জসিম উদ্দিন মৃধা এবং তার ভাই গাড়ির দালাল আশিক মৃধা। ১০ হাজার টাকা এডভান্স দিয়ে এক সপ্তাহের জন্য গাড়ি ভাড়া করা হয় ঢাকা থেকে। সেই গাড়ি ঢাকা থেকে পটুয়াখালী আসে। অপহরণের পর মুক্তিপণ দাবি, নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ ইত্যাদি অপারেশনাল কাজে ব্যবহার করার জন্য ঢাকার সাভার থেকে কেনা হয় পাঁচটি বাটন ফোন। 

বেশি দাম দিয়ে অন্যজনের নামে নিবন্ধনকৃত সিম কেনা হয় জেলা সদর থেকে। স্থানীয়ভাবে সংগ্রহ করা হয় একটি খেলনা পিস্তল, দুটি সুইচ গিয়ার, তিনটি চাপাতি এবং গরু জবাই করার একটি বড় ছুরি। পরে একাধিক দিন রেকি করে ফিল্মি স্টাইলে রোমহর্ষক অপারেশন চালানো হয় ১১ এপ্রিল রাত সাড়ে আটটায়।  

১১ এপ্রির দুপুরবেলা পটুয়াখালী এয়ারপোর্টের কাছে মিলিত হয় অপহরণকারীরা। কার কোথায় কি দায়িত্ব তা  নির্ধারণ করে দেয় ল্যাংড়া মামুন এবং পিচ্চি রানা। ভিকটিমদের গতিবিধি মোবাইলে জানানোর জন্য পিচ্চি রানা তার মোটরসাইকেলে ল্যাংড়া মামুনকে নিয়ে চলে যায় গলাচিপা ঘাটে। 

সন্ধ্যা সাতটার দিকে ব্যারিকেড দেয়ার জন্য পটুয়াখালী-গলাচিপা আঞ্চলিক মহাসড়কের শাঁখারিয়ার নির্জন জায়গায় একটি প্রাইভেট কার এবং একটি ট্রলি নিয়ে অবস্থান নেয় ৫ জন। ল্যাংড়া মামুনের নির্দেশে পূর্বেই একটি ট্রাক্টর ভাড়া করে ড্রাইভার বিল্লাল। ঢাকা থেকে নিয়ে যাওয়া প্রাইভেটকারটি নিয়ে ড্রাইভার আশিক মৃধা, পাভেল, হাবিব, সোহাগ এই চারজন অবস্থান নেয়। 

ল্যাংড়া মামুনের সংকেত পাওয়ার পরপরই সন্ধ্যা আনুমানিক সাড়ে আটটার দিকে ড্রাইভার বিল্লাল ট্রলিটি নিয়ে সুকৌশলে ভিকটিম শিবু দাসের প্রাডো জিপের সামনে আড়াআড়ি করে অবস্থান নেয়। পিছন থেকে অনুসরণ করতে থাকা ড্রাইভার আশিক তার প্রাইভেট গাড়িটি দিয়ে ভিকটিমের গাড়ির পিছনে অবস্থান নিয়ে অবরুদ্ধ করে ফেলে। 

ট্রাক্টর এবং প্রাইভেটকার থেকে অপহরণকারীরা হুড়মুড় করে মুহূর্তেই উঠে যায় ভিকটিমের প্রাডো জীপে। আশিক প্রাইভেটকার ছেড়ে শিবু দাসের গাড়ির নিয়ন্ত্রণ নেয়। গাড়িতে উঠেই বিল্লাল, পাভেল, সোহাগ, আশিক  বেঁধে ফেলে ভিকটিমদ্বয়কে। বরগুনার আমতলী এলাকার গাজিপুরায় গিয়ে ভিকটিমের জিপ গাড়ি থেকে তাদেরকে তোলা হয় ঢাকা থেকে নিয়ে যাওয়া কারটিতে।‌ ভিকটিম দুজনকে ভালোভাবে বেঁধে প্লাস্টিকের বস্তায় ঢুকানো হয়। 

পুলিশকে ধোঁকা দিতে ভিকটিমের জীপটিকে আমতলীর একটি ফিলিং স্টেশনে ফেলে আসে তারা। 

পরের দিন আরও মালামালের সঙ্গে তাদেরকে বস্তায় ভরে অটোরিক্সায় উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় শহরের কাজী পাড়াস্থ এসপি কমপ্লেক্স সুপার মার্কেটের আন্ডারগ্রাউন্ডে।  

অপহরণের দিন রাত পৌনে দুইটায় রানার নির্দেশমতো বিল্লাল ব্যবসায়ীর মোবাইল থেকে তার স্ত্রীকে ফোন দিয়ে পরের দিন দুপুর দুটার মধ্যে ২০ কোটি টাকা মুক্তিপণ দিতে বলে। মুক্তিপণের টাকা না দিলে এবং বিষয়টি পুলিশকে জানালে শিবু লালকে হত্যা করে সাগরে ভাসিয়ে দেয়া হবে বলেও সতর্ক করে দেয়। 

১২ এপ্রিল রাত সাড়ে দশটায় অপহরণের ২৬ ঘণ্টা পরে হাত-পা এবং মুখ বাঁধা বস্তাবন্দি অবস্থায় ভিকটিমদেরকে এসপি কমপ্লেক্স শপিং সেন্টারের আন্ডারগ্রাউন্ড থেকে উদ্ধার করে পটুয়াখালী জেলা পুলিশ। 

ল্যাংড়া মামুন ঢাকার কুক্যাত সন্ত্রাসী পিচ্চি হান্নানের সহযোগী ছিলেন বলে জানা গেছে। অপহরণ বাণিজ্য চালানোর জন্য পটুয়াখালীতে সে গড়ে তুলেছিল টর্চার সেল। সে একজন মাদক সেবী, মাদক ব্যবসায়ী। কৃত্রিম পায়ের ফোকরে অনায়াসে হাজার হাজার পিস ইয়াবা বহন করতো সে।

এএইচ/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি