ঢাকা, মঙ্গলবার   ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪

মৌলভীবাজারে শেষ হল একুশের ২২ তম জন্ম দিনের সপ্তাহব্যাপী উৎসব 

বিকুল চক্রবর্তী, মৌলভীবাজার 

প্রকাশিত : ২১:২৬, ২১ এপ্রিল ২০২২ | আপডেট: ২১:৩২, ২১ এপ্রিল ২০২২

চা শ্রমিকদের ঐতিহ্যবাহী ঝুমুর নৃত্য, কাঠি নৃত্য, ম্যাজিক প্রর্দশন, ধাঁধার আসর, ঘুড়ি উৎসব, কবি আড্ডা, কবিতা পাঠের আসর, সংগীতানুষ্ঠান, ঈদ উপহার হিসেবে লুঙ্গি ও গেঞ্জি বিতরণ, শোভাযাত্রা, বৃক্ষ চারা রোপন ও বিতরণ এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণের মধ্যদিয়ে শেষ হয়েছে মৌলভীবাজারে একুশে টেলিভিশনের ২৩তম বর্ষে পদার্পনে সপ্তাহব্যাপী উৎসব।

চা শ্রমিকদের এতিহ্যবাহী ঝুমুর নৃত্য:
উৎসবের ৭ম দিন বৃহস্পতিবার সকালে আয়োজন করা হয় মৌলভীবাজারের চা শ্রমিকদের এতিহ্যবাহী ঝুমুর নৃত্য, কাঠি নৃত্য। এটি পরিবেশন করে শ্রীমঙ্গল সাঁতগাও চা বাগানের শিল্পীরা। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাঁতগাও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দেবাশীষ দেব রাখু। 

একুশের মৌলভীবাজার প্রতিনিধি বিকুল চক্রবর্তীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চা জনগোষ্ঠী আদিবাসী ফন্টের সভাপতি পরিমল সিং বারাইক, সাঁতগাও চা বাগানের সহকারী ব্যবস্থাপক আব্দুল মতিন, সাঁতগাও ইউনিয়ন পরিষদের মহিলা সদস্য সান্তনা বারাইক ও অধ্যাপক রজত শুভ্র চক্রবর্তী।

পরে বেলা আড়াইটায় শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত হয় ৭দিনের অনুষ্ঠানমালার সমাপনি ও পরিস্কার বিতরনী অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শ্রীমঙ্গল উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ভানু লাল রায়। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রবীণ সাংবাদিক নিহারেন্দু হোম সজল।

ম্যাজিক সো, সিলেটি ধাঁধার আসর:
এর আগে ৬ষ্ঠ দিন রাতে আয়োজন করা হয়েছিলো শ্রীমঙ্গল ভাড়াউড়া চা বাগানে বাংলাদেশীয় চা সংসদের সিলেট ব্রান্স চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ শিবলীর পরিচালনায় ম্যাজিক সো, সিলেটি ধাঁধার আসর ও সিলেট বিভাগের ইতিহাস নিয়ে সাধারণ জ্ঞান প্রতিযোগীতা। মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে রাত ১২ টা পর্যন্ত মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল ভাড়াউড়া চা বাগানের জিএম বাংলোয় আয়োজিত এই পাঁচমিশালী বিনোদন মূলক অনুষ্ঠানে প্রধান অথিতি ছিলেন  বাংলাদেশীয় চা সংসদের সিলেট ব্রান্স চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ শিবলী। প্রফেসর নৃপেন্দ্র লাল দাশের সভাপতিত্বে ও একুশের মৌলভীবাজার প্রতিনিধি বিকুল চক্রবর্তীর সঞ্চালনায় এ আড্ডায় গীটার বাজিয়ে সুরের মুর্ছনায় আসর জমিয়ে রাখেন শিক্ষিকা সুর্পনা দেবনাথ, ম্যাজিক দেখান অধ্যাপক রজত শুভ্র চক্রবর্তী, ধাঁধা ডাকেন প্রধান অতিথি গোলাম মো: শিবলী, কৌতুক করেন বিকাশ দাশ বাপ্পন, সাধারণ জ্ঞান প্রতিযোগীতার প্রশ্ন কর্তার ভূমিকায় ছিলেন প্রফেসর নৃপেন্দ্র লাল দাশ। আবৃত্তি করেন দেবাশীষ চৌধুরী রাজা, অঞ্জনা দেবী ও কবি সমিরণ দাশ। সংগীত পরিবেশন করেন কৃষ্ণা সুত্রধর ও তারেক ইকবাল চৌধুরী। এ ছাড়াও অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে গল্পের আসরে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক অবিনাশ আচার্য্য, লালতীর সীডের বিভাগীয় পরিচালক তাপস চক্রবর্তী প্রমূখ। অনুষ্ঠান শেষে ধাঁধা ও সাধারণ জ্ঞান প্রতিযোগীতায় বিজয়ীদের মধ্যে দেয়া হয় পুরস্কার। এবং আয়োজন করা হয় নৈশ ভোজের।

ঈদ উপহার হিসেবে হিসেবে লুঙ্গি ও গেঞ্জি বিতরণ:
৬ষ্ঠ দিন মঙ্গলবার দুপুরে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রেসক্লাবে  প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে ঈদ উপহার হিসেবে হিসেবে লুঙ্গি ও গেঞ্জি বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন একুশে দর্শক ফোরাম মৌলভীবাজার এর প্রধান উপদেষ্টা  স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিলেট বিভাগের প্রাক্তন পরিচালক ডা: হরিপদ রায়। 

একুশের মৌলভীবাজার প্রতিনিধি বিকুল চক্রবর্তীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শ্রীমঙ্গল উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মিতালী দত্ত, প্রেসক্লাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি চৌধুরী ভাস্কর হোম, অধ্যাপক রজত শুভ্র চক্রবর্তী, নাট্যাভিনেতা কামরুল হাসান দুলন ও বিশিষ্ট সংগীত শিল্পী তারেক ইকবাল চৌধুরী।  একুশে দর্শক ফোরামের সুহৃদ বেনাপোল সারতী ট্রান্সপোটের স্বত্তাধিকারী কাজী মো: কামরুল ইসলাম ও লন্ডন প্রবাসী মো: মাজহারুল ইসলাম এর সহায়তায় শতাধিক মানুষের মধ্যে এ লুঙ্গি ও গেঞ্জি বিতরণ করা হয়।

বিশেষ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান:
সপ্তাহব্যাপী উৎসবের ৫ম  দিনে মৌলভীবাজারের বিশিষ্ট সংগীত শিল্পীদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় বিশেষ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান । 
সোমবার সকালে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে  গ্রীণলিফ গেস্ট হাউজের কনফারেন্স হলে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শ্রীমঙ্গল উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মিতালী দত্ত।

একুশের মৌলভীবাজার প্রতিনিধি বিকুল চক্রবর্তীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন বিশিষ্ট সংগীত শিল্পী তারেক ইকবাল চৌধুরী, সংগীত শিল্পী অনিতা দেব শ্যাম, সজল ঘোষ ও শ্রীমঙ্গল সাংস্কৃতিক একাডেমীর শিল্পীবৃন্দ। এ ছাড়াও অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন সাংস্কৃতিক কর্মী তুর্জ পাল, বর্ণ চক্রবর্তী ও গ্রীনলিফ গেষ্ট হাউজের ম্যানেজার আশিকুর রহমান।

অনুষ্ঠানে শিল্পীরা বিভিন্ন আধুনিক সংগীতের পাশাপাশি একুশে টেলিভিশনকে নিয়ে লেখা গান ও সিলেটি আঞ্চলিক সংগীত পরিবেশন করেন।

দৃষ্টি নন্দন বৃক্ষ চারা রোপন ও বিতরণ:
রবিবার দুপুরে ৪র্থ  দিনে আয়োজন করা হয়েছিল  দৃষ্টি নন্দন বৃক্ষ চারা রোপন ও বিতরণ কর্মসূচী। মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের র‌্যাব ক্যাম্পের ক্যাম্পাসে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন র‌্যাব শ্রীমঙ্গল ক্যাম্প এর অধিনায়ক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বসু দত্ত চাকমা। একুশের মৌলভীবাজার প্রতিনিধি বিকুল চক্রবর্তীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৌলভীবাজার সহকারী বন সংরক্ষক শ্যামল কুমার মিত্র, অধ্যাপক রজত শুভ্র চক্রবর্তী, প্রথম আলো শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি শিমুল তরফদার ও বৃক্ষপ্রেমী মো: আল আমিন প্রমূখ। 
এ সময় র‌্যাব ক্যাম্পাসে দৃষ্টি নন্দন ১০টি কৃষ্ণচূঁড়া বৃক্ষের চারা রোপান করেন অতিথিরা। এবং কৃষ্ণচূঁড়া, সোনালো, রাধাচূঁড়া ও শিমুলসহ বিভিন্ন প্রকারের অর্ধশত দৃষ্টিনন্দন বৃক্ষ চারা বিতরণ করা হয়।

কবি আড্ডা ও কবিতা পাঠের আসর:
সপ্তাহব্যাপী উৎসবের ৩য় দিনে শনিবার আয়োজন করা হয় কবি আড্ডা ও কবিতা পাঠের আসর। মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের প্রকৃতিঘেরা চা বাগানের সবুজ প্রান্তরে আয়োজিত এ আসরে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কবি প্রফেসর নৃপেন্দ্র লাল দাশ।

একুশের মৌলভীবাজার প্রতিনিধি বিকুল চক্রবর্তীর সভাপতিত্বে কবি আড্ডায় আবৃত্তি ও কবিতা পাঠ করেন আবৃত্তি শিল্পী দেবাশীষ চৌধুরী রাজা, কবি রজত শুভ্র চক্রবর্তী, কবি জহিরুল মিঠু, কবি কয়েস সামি, কবি অনিরুদ্ধ সেনগুপ্ত বাচ্চু, কবি প্রভাষক কবি জলি পাল, কবি অনিতা দেব, কবি জাফর সাদেক, নাট্যাভিনেতা কামরুল ইসলাম দুলন, সংগীত শিল্পী তারেক ইকবাল চৌধুরী, কবি সমিরণ দাশ, কবি এস কে দাশ সুমন ও সংস্কৃতিজন বিকাশ দাশ বাপ্পনসহ আরো নবীন প্রবীণ অনেক কবি লেখক। এ সময় একুশে টেলিভন নিয়ে স্ব রচিত কবিতা পাঠ করেন কবি, আবৃত্তি শিল্পী শিক্ষিকা অনিতা দেব।

ঘুড়ি উৎসব:
উৎসবের ২য় দিনে আয়োজন করা হয়েছিলো ঘুড়ি উড়ানো প্রতিযোগীতা। ১৫ এপ্রিল শুক্রবার সকালে মৌলভীাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলা পরিষদ মাঠে ঘুড়ি উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম।

একুশের মৌলভীবাজার প্রতিনিধি বিকুল চক্রবর্তীর পরিচালনায় এ ঘুড়ি উৎসবে ২০ জনেরও বেশি প্রতিযোগী অংশনেন। প্রতিযোগীতায় ছিলো বিভিন্ন রং বে-রংঙ্গের ঘুড়ি। কেউ নিয়ে আসেন সাপ ঘুড়ি, কেউ প্রজাপতি, কেউ সাগরের মাছ, কেউ বিমান। আর এ ঘুড়ি উৎসব দেখতে দর্শনার্থীও উপস্থিতিও ছিলো লক্ষনিয়।

ঘুড়ি উৎসবে প্রথম হন হাবীবুর রহমান শহীদ, ২য় রজত শুভ্র চক্রবর্তী ও ৩য় হন কবি সমিরণ দাশ। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, সাংবাদিক কাউছার ইকবার, কবি সজল দাশ, নাট্য ব্যাক্তিত্ব জজ মিয়া ও শিক্ষক সমিতির সভাপতি জহর তরফদার।

শোভাযাত্রা ও উদ্বোধন:
এর আগে ১৪ এপ্রিল একুশের ২২তম জন্মদিনে আয়োজন করা হয় আনন্দ শোভাযাত্রা ও সপ্তাহব্যাপী উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৌলভীবাজার-৪ আসনের সংসদ সদস্য উপাধ্যক্ষ ড. মো. আব্দুস শহীদ।

আরকে//


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি