আনারসের পাতায় উন্নতমানের সুতা, যাচ্ছে নেদারল্যান্ড
প্রকাশিত : ১১:০৩, ২৭ এপ্রিল ২০২২
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে আনারস বাগানের পরিত্যাক্ত পাতা থেকে হবে উন্নতমানের সুতা। সম্প্রতি পরীক্ষা করে এমনই প্রমাণ পেয়েছে এগ্রো ভিশন নামে একটি সংগঠন। ইতিমধ্যেই ফাইভার বের করে রপ্তানী করা হচ্ছে নেদারল্যান্ডে।
এগ্রো ভিশনের চেয়ারম্যান রাজীব দেব জানান, গাছ থেকে আনারস কাটার পর ওই গাছে আর নতুন করে ফল আসেনা। অধিকাংশ পাতা কেটে ফেলতে হয়। কেটে ফেলা পাতা থেকেই এখন তৈরি হবে সুতা। পরীক্ষায় এমনই প্রমাণ পাওয়া গেছে।
জাপানি কনসালটেন্ট নিয়ে শ্রীমঙ্গলে আসেন এগ্রো ভিশনের চেয়ারম্যান। বিভিন্ন আনারস বাগান পরিদর্শন করে একাধিক বাগান মালিক ও শ্রমিকের সাথে কথা বলেন। এই এলাকার আনারস বাগানকে সামনে রেখে তিনি একটি সুতা তৈরি কারখানা গড়ায় আশাবাদী।
জাপানী কনসালটেন্ট টিমের প্রধান ওয়াদা সুহি দেখেই নিশ্চিত হন আনারসের পাতা দিয়ে উন্নতমানের সুতা হবে। পরে তারা শ্রীমঙ্গলের আনারস উৎপাদনকারী কাজী সামছুল হক ও জলিল খানের মাধ্যমে প্রায় ৫০ কেজি পাতা সংগ্রহ করে ঢাকায় নিয়ে যান।
প্রাথমিক পরীক্ষা সম্পন্ন করে ভালো ফাইভার পান তারা। আনারসের সুতা খুবই মুলাইম। এর থেকে তৈরি কাপড়ও আরামদায়ক হবে বলে ধারণা তাদের।
এ ব্যাপারে চাষী জলিল খান জানান, এগ্রো ভিশনের চেয়ারম্যান রাজীব দেব জাপানি কনসালটেন্ট নিয়ে শ্রীমঙ্গলের মহাজেরাবাদ, বিষামনী, ডুলুছড়া, রাধানগরসহ বেশ কিছু এলাকায় আনারস বাগান পরিদর্শন করেন। জাপানি কনসালটেন্ট আনারসের ডগা ভেঙ্গে এর আঁস বের করে দেখান, যা থেকে সুতা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল।
চাষী কাজী সামছুল হক জানান, একটি পরিপূর্ণ আনারস গাছে ৩৬টা পাতা হয়। একটি গাছে একবারই ফলধরে। আনারস কাটার পর ওই গাছের অন্তত ১৫-২০টা পাতা কেটে ফেলা হয়। আর নতুন গাছ হওয়ার পর পুরোটাই কাটা যায়। এই পাতাগুলো নিচে পড়ে নষ্ট হয়, মাটিতেই পঁচে মিশে যায়। কেউ কেউ গবাদি পশুর জন্যও নিয়ে যান।
শ্রীমঙ্গল কৃষি কর্মকর্তা নিলুপার ইয়াসমিন মুনালিসা সুইটি জানান, গত মার্চ মাসে কৃষি বিপনন অধিদপ্তর উপ-পরিচালক (উপ-সচিব) কৃষিবিদ ড. রাজু আহমদ শ্রীমঙ্গল থেকে পাতা সংগ্রহ করেন। পরবর্তীতে পরীক্ষা করে তা সুতা তৈরির জন্য উপযুক্ত বলে জানান। ইতিমধ্যে তারা একটি প্রজেক্ট নিয়ে মধুপুরে কাজ শুরু করছেন।
তিনি আরও জানান, শ্রীমঙ্গলে ৪০৯ হেক্টর জমিতে আনারসের চাষ হয়। যদি শ্রীমঙ্গলে সুতা তৈরির কারখানা করা হয় তাহলে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে যে ধরণের সাহায্য প্রয়োজন তারা তা করবেন।
আনারসের বাগান ঘুরে দেখছেন জাপানী কনসালটেন্ট টিমের প্রধান ওয়াদা সুহি
মৌলভীবাজার জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কাজী লুৎফুল বারী জানান, মৌলভীবাজার জেলায় এ বছর ১২০২ হেক্টর জমিতে আনারসের চাষ হয়েছে। যার উৎপাদন লক্ষ্য মাত্র ২০ হাজার ৮০০ মেট্রিকটন। এর সাথে সম্পৃক্ত প্রায় ৫শ’ কৃষক। যদি এখানে আনারসের পাতা থেকে সুতা তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয় তাহলে কৃষকরা অতিরিক্ত কিছু আয়ের সুযোগ পাবেন। এতে উৎসাহিত হয়ে এ এলাকায় আনারসের চাষাবাদও বাড়বে বলে জানান তিনি।
কৃষি বিপনন অধিদপ্তর উপ-পরিচালক (উপ-সচিব) কৃষিবিদ ড. রাজু আহমদ জানান, টাঙ্গাইলে গত ৬ মাস আগে পরীক্ষামূলকভাবে প্রসেস শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে আনারসের পাতার ফাইভার নেদারল্যান্ডসে রপ্তানী করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, টাঙ্গাইলের কারখানায় শ্রীমঙ্গলের পাতা থেকেও ভালো ফাইভার তৈরি হয়েছে। সুতা তৈরির যে মেশিন আছে তার জন্য তিন ফুট পাতা প্রয়োজন। তাই এখন বড় পাতাগুলো কাজে লাগানো যাবে।
এ থেকে উৎপাদিত সুতার মান অন্য সুতার চেয়ে তুলনামূলক অনেক ভালো। যদি পুরোপুরি প্রসেস বাংলাদেশে করা যায় তাহলে এ থেকে সরকার প্রচুর রাজস্ব পাবে বলে জানান কৃষিবিদ ড. রাজু আহমদ।
এএইচ/
আরও পড়ুন