ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪

সেই চৌমুহনীতে সাম্য আর মৈত্রীর মাসব্যাপী ইফতার

নোবিপ্রবি সংবাদদাতা

প্রকাশিত : ২২:১৪, ২৮ এপ্রিল ২০২২

চার অক্ষরের চৌমুহনী। কোটি মানুষের খাদ্য আর নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির বৃহত্তর বাণিজ্যিক নগরী। নোয়াখালীর ৯টি উপজেলার পাশাপাশি কুমিল্লা, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুরের বিভিন্ন উপজেলার পাইকাররা আসেন নিয়মিত। কোটি মানুষের জীবিকা যে বাজারে কেনা-বেচা হয়, সেই বাজারে প্রায় অনাহারে থাকে আরেক দল মানুষ।

সুবিশাল রেলওয়ে স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে খোলা আকাশের নিচে বসবাস দেশের বিভিন্ন প্রান্ত হতে আসা ভাসমান, ছিন্নমূল ও পথশিশুদের। ভিক্ষাবৃত্তি ছাড়াও বিভিন্ন কাজ করে একবেলা খাবার আসে তো আরেক বেলা উপোষ থাকতে হয়। দিন এনে দিন খাওয়া এসব মানুষের জন্য ২০২০ সাল থেকে রমজান জুড়ে মানসম্মত ইফতার আয়োজন হয় প্রতিদিন। "মানবিক ইফতার" নামে প্রজেক্টটি পরিচালনা করে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন "আমরা গোলাপ"।

'বিত্তবানরা এগিয়ে আসায় অর্থায়ন নিয়ে কোনো সমস্যা হয় না'। জানালেন- মানবিক ইফতারের হিসাব রক্ষক সাখাওয়াত রাসেল। 

তিনি বলেন, ব্যবসায়ী, চাকরিজীবি, গৃহিনী থেকে শুরু করে শিক্ষক শিক্ষার্থীরা এখানকার নিয়মিত দাতা। মুসলিমদের পাশাপাশি ইফতারে অনুদানের হাত বাড়িয়ে দেয় হিন্দু ধর্মাবলম্বীরাও। শুধু অর্থায়ন নয়, পরম যত্নে ইফতার তুলে দেন রোযাদারদের হাতে। 

মাসব্যাপী ইফতারের ২৬তম দিনের আয়োজক নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক লিটন ভৌমিক। তিনি জানালেন, ভাসমান-ছিন্নমূলদের বড় পরিচয়- এরা মানুষ। লালন বলেছেন, 'মানুষ ছেড়ে ক্ষ্যাপা রে তুই মূল হারাবি, মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি'। বিষয়টি ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে দেখিনি, দেখেছি মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে। এই ছিন্নমূল মানুষরাই আমার প্রতিবেশী এবং আমাদের রাষ্ট্রের নাগরিক। আমাদের ক্ষুদ্র অংশগ্রহণ যদি তাদের ইফতার নিশ্চিত করে, বিষয়টি একইসাথে আনন্দের এবং দায়িত্বেরও। এভাবে মানুষ মানুষের জন্য এগিয়ে আসলে পারস্পরিক সুসম্পর্ক, সামাজিক শান্তি ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় থাকবে।

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ এন্ড মেরিন সায়েন্স বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আবদুল্লাহ আল মামুন এমন আয়োজনকে সম্প্রীতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত আখ্যায়িত করে বলেন, মানবিক ইফতার আয়োজন সমাজের বিত্তবান ও ছিন্নমূল মানুষের মধ্যে যোগসূত্র তৈরি করছে। রমজানের যে মহান শিক্ষা ক্ষুধার্ত ও অভাবীদের দুখ কষ্ট অনুভব করা এবং তাদের সাহায্যে যথাসাধ্য এগিয়ে আসা এই অসাধারণ উদ্যোগের মধ্য দিয়ে তা প্রতিফলিত হয়েছে। আবার জাত ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা সম্প্রীতির দারুণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এভাবে রাষ্ট্র এগিয়ে যাবে এবং উৎসবগুলো শুভকাজের উপলক্ষ্য হবে।

আয়োজনের সমন্বয়ক মুনীম ফয়সাল বলেন, এখানেই 'মানবিক ইফতার'র সফলতা। ক্ষুধার যেমন ধর্ম হয় না, তেমনি খাবারেরও কোনো ধর্ম নেই। আমরা পরিচয় নির্ধারণ করতেও চাই না। এবারের ইফতারের প্রথম ডোনেশন করেন একজন খ্রিষ্টান ভাই। আবার প্রতিবছর ইফতারের বড় একটা ডোনেশন আসে হিন্দু ভাইদের থেকে। আমরা আনন্দিত, মিলেমিশে থাকতে পেরে।

প্রসঙ্গত, কুমিল্লায় পবিত্র কোরআন অবমাননার খবর সারাদেশে ছড়িয়ে পড়লে চৌমুহনীতে ব্যাপক প্রভাব পড়ে। দশমীর দিনে একযোগে হামলা হয় স্থানীয় সব মন্ডপ আর মন্দিরে। ভাংচুর অগ্নিসংযোগ হয় হিন্দুরের বাড়ি-ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। নজিরবিহীন এই তাণ্ডবে প্রাণ হারান অন্তত দুজন। সেই চৌমুহনীতে এমন সম্প্রীতির বাতাবরণ সুবাস ছড়াবে সারাদেশে এমন প্রত্যাশা সকলের।

এনএস//


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি