বেনাপোলে ভারতগামী যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়
প্রকাশিত : ১৬:৫০, ২ মে ২০২২
করোনা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পর ভারত ভ্রমণে টুরিস্ট ভিসা পুনরায় চালু করা করেছে। এবার ঈদের ছুটি কাটাতে ভ্রমণ পিপাসু মানুষের উপচে পড়া ভিড় বেনাপোল চেকপোষ্টে। হাজারও বাংলাদেশি যাত্রী বেনাপোল চেকপোষ্ট দিয়ে ভারতে প্রবেশ করছে। কেউ বেড়াতে, কেউ চিকিৎসা আবার কেউ যাচ্ছেন আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে। এদের অধিকাংশই তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে যাচ্ছেন।
বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট দিয়ে প্রতিদিন ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার যাত্রী ভারতে প্রবেশ করতো। ২০২০ সালে মার্চ মাসে করোনাভাইরাস ব্যাপক আকার ধারণ করলে দু‘পারের চেকপোস্ট বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে মেডিকেল ও বিজনেস ভিসা চালু করা হলে কিছু লোজজন যাতায়াত করতে থাকে। গত মাসে করোনার সকল নিষোধাজ্ঞা প্রত্যাহারসহ টুরিস্ট ভিসা চালু করায় বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে যাত্রী পারাপার ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন বেনাপোল চেকপোষ্ট দিয়ে প্রতিদিন পূর্বের ন্যায় আড়াই হাজার থেকে ৩ হাজার পাসপোর্টযাত্রী দু‘দেশের মধ্যে চলাচল করছে।
গত এক সপ্তাহে বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে ১৫ হাজার ৩শ' জন যাত্রী বেনাপোল চেকপোষ্ট দিয়ে ভারতে গেছেন। আর ভারত থেকে এসেছে ৭ হাজার ২৫৭ জন। লম্বা ছুটি পাওয়ায় বাংলাদেশি যাত্রীদের ভারতে যাওয়ার পরিমান ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানান ইমিগ্রশন কর্মকর্তা। তবে চলাচলে যাত্রীরা নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। একজন পাসপোর্টযাত্রীকে নোম্যান্সল্যান্ডে পৌছাতে বেনাপোল চেকপোস্টে ৮ জায়গায় লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে। সেগুলি হলো সোনালী ব্যাংক, প্যাসেজ্ঞার টার্মিনাল গেট, কাস্টমস স্ক্যানিং পয়েন্টে, কাস্টমস আনসার গেট, ইমিগ্রেশন ডিপারচার এবং ইমিগ্রেশন চেক আউট গেট। ব্যাংক থেকে ইমিগ্রেশন চেক আউট গেট অর্থাৎ নোম্যান্সল্যান্ড পর্যন্ত একজন যাত্রীকে পৌছাতে সময় লাগছে ৩ থেকে ৪ ঘন্টা। তবে মাথাপিছু ৫০০ টাকা দিলে ৫ মিনিটে পৌছানো যায়। আর এসব কাজ করছেন বন্দরে কর্মরত আনসার, লেবারও কয়েকজন মহিলা ক্লিনার। লেবার ও মহিলা ক্লিনাররা যাত্রীদের কাছ থেকে ৫০০ টাকা করে নিয়ে আনসার সদস্যদের কাছে দিচ্ছেন। আনসাররা তখন গেট খুলে টাকা দেয়া যাত্রীদের ইমিগ্রেশনের ভেতরে ঢুকিয়ে নিচ্ছেন।
লাইনে থাকা অন্যসব যাত্রীরা এসময় ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকছেন। একজন যাত্রী সকালে লাইনে দাঁড়ালে ইমিগ্রেশনে পৌঁছাতে সময় লাগছে ৩ থেকে ৪ ঘন্টা। এর পর শুরু হয় নোম্যান্সল্যান্ড এলাকায় হয়রানি। ভারতে যাওয়া যাত্রীদের নোম্যান্সল্যান্ড এলাকায় ঘন্টার পর ঘন্টা রোদ বৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। ১৫ থেকে ২০ মিনিটি পর পর ৭/৮ জন যাত্রীকে ভারতের ইমিগ্রেশনের স্বাস্থ্য বিভাগে প্রবেশ করাচ্ছে। সেখানকার স্বাস্থ্য বিভাগ প্রত্যেক যাত্রীকে করোনার
আরটিপিসিআর টেষ্ট করছেন। এখানে সময় লাগছে ৪০ মিনিটি। এরপর পেট্রাপোল ইমিগ্রেশনে একজন যাত্রী প্রবেশের পর শুরু হয় অন্য কাহিনী। ভারতের পেট্রাপোল ইমিগ্রেশনে সেখানে রয়েছে প্রায় ৪০টি ডেক্স। কিন্তু অফিসার আছে ৩ জন। ৩ জন অফিসার আড়াই হাজার যাত্রীর ইমিগ্রেশন সিল মারতে সময় নিচ্ছেন ১৬/১৭ ঘন্টা। এখানেও যাত্রীরা নানাবিধ হয়রানির শিকার হচ্ছেন।
তাছাড়া ভারতীয় গেটে ধীর গতিতে পাসপোর্ট চেকিং করায় নোম্যান্সল্যান্ড এলাকায় দীর্ঘ লাইনের সৃষ্টি হচ্ছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই লাইনের মাত্রা আরও বাড়তে থাকে। ঘন্টার পর ঘন্টা খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে এসব পাসপোর্টযাত্রীদের। রোদ, বৃষ্টি আর ভ্যাপসা গরমে অতিষ্ট হয়ে উঠছে যাত্রীরা। বিশেষ করে ছোট বাচ্চা ও রোগীদের নিয়ে বিপাকে পড়তে হচ্ছে তাদের।
বেনাপোল চেকপোষ্ট ইমিগ্রেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ রাজু জানান, আমাদের ইমিগ্রেশনে যাত্রী আসলে তেমন কোন সময় লাগছে না। ওপারে স্বাস্থ্য বিভাগে অনেক সময় লাগায় বাংলাদেশি যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়ছেন। প্যাসেজ্ঞার টার্মিনালে যেসব আনসার কর্মরত আছে তাদের নিয়ন্ত্রণ করেন বন্দর ও কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। ওখানকার কোন আনসার বা অন্য কেউ অনিয়ম করলে সেটার দায়ভার বন্দর ও কাস্টমস কর্তৃপক্ষের।
বেনাপোল বন্দরের উপ-পরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবীর তরফদার বলেন, আনসার সদস্যদের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কেআই//
আরও পড়ুন