ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪

বোরোর ভরা মৌসুমে হিলিতে বেড়েছে সবধরনের চালের দাম 

হিলি প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ১৭:৪৩, ২৭ মে ২০২২ | আপডেট: ১৭:৪৪, ২৭ মে ২০২২

বোরোর ভরা মৌসুমে দিনাজপুরের হিলিতে অস্থির হয়ে উঠেছে চালের বাজার। হুহু করে বাড়ছে চালের দাম কদিনের ব্যবধানে কেজিতে ৬-৭ টাকা করে বেড়েছে। চালের দাম বাড়ায় বিপাকে পড়েছেন নিন্ম আয়ের খেটে খাওয়া দিনমজুর মানুষজন। অটো মিল মালিকরা চাল মজুত রেখে বিক্রি বন্ধ করে দাম বাড়িয়েছেন বলে দাবী ব্যবসায়ীদের। 

হিলি বাজারে চাল কিনতে আসা ভ্যানচালক গোলজার হোসেন বলেন, আমি ভ্যান চালিয়ে যা আয় হয় তা দিয়ে কোনরকম করে সংসার চালাই। সারাদিন ভ্যান চালিয়ে দু থেকে আড়াইশো টাকা আয় হয় কিন্তু যে হারে চালের দাম বাড়ছে তাতে করে চাল কিনতেই সব শেষ বাকি খরচ আর করবো কিভাবে যার কারনে আমাদের সংসার চালানো আর যাচ্ছেনা। যে চালের কেজি ৪০ থেকে ৪৫টাকা ছিল সেটি বেড়ে ৫৫টাকা হয়ে গেছে কি করে চলাফেরা করবো সেটি বুঝতে পারছিনা আমাদের মতো মানুষদের করুন পরিস্থিতি হয়ে গেছে। সরকার কিভাবে দাম কমাবে কমাক না হলে গরীব মানুষদের তো অধপতন চলে আসছে। দামটা একটু কমলে অন্তত আমরা ডালভাত খেয়ে পড়ে বাচতে পারবো।

মোস্তাফিজুর রহমান নামের পঞ্চাশর্দ্ধ এক কৃষিশ্রমিক বলেন, চালের দামটা কমলে কিনে খাওয়া হতো আমাদের জন্য কেনা ভালো হতো বেশি হলে কিনবো কিভাবে। এখন না হয় ধান কাটা মাড়াইয়ের কাজ হলো দুটা টাকা পেয়েছি চাল কিনতে পারলাম। কিন্তু কদিন পরে তো ধান কাটা শেষ হলে আমাকে তো কেউ কাজে নিবেনা তাই টাকা কোথায় পাব আর কিভাবে এতদাম দিয়ে চাল কিনে খাবো।

মেহেরুল ইসলাম নামের এক ক্রেতা বলেন,নতুন ধান উঠেছে এই সময়টাতে তো চালের দাম কমার দরকার কিন্তু উল্টো চালের দাম বাড়ছে কোন নিয়ন্ত্রন নেই। এতে করে আমাদের মতো সাধারন মানুষদের চলাফেরা তো খুব কষ্টকর ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে। বাড়তি দামের কারনে মানুষ যে চাল কিনে খাবে সেটিও পারছেনা। আমাদের তো সংসার চালাতে নাভিশ্বাস উঠে যাচ্ছে বাধ্য হয়ে আগে যেখানে ৩ কেজি চাল কিনতাম এখন সেখানে ২কেজি চাল কিনে আধপেট খেয়ে পার করতে হচ্ছে। 

হিলি বাজারের চাল ব্যবসায়ী বাবুল হোসেন বলেন, প্রতিবছর এমন সময় চালের দাম কমে কিন্তু এবারই ব্যাতিক্রম চালের দাম বাড়ছে। এর কারন হলো ধানের দাম বৃদ্ধি যে ধান হাজার টাকার নিচে ছিল সেই ধান বর্তমানে এগারোশ থেকে এগারোশ ২০টাকা মন চলছে। সেই সাথে আবহাওয়া খারাপ এর উপর শ্রমিক সংকটের কারনে স্থানিয় হাসকিং মিলগুলো চাল উৎপাদন করতে পারছেনা। এই সুযোগে অটো চাল মালিকরা পর্যাপ্ত পরিমানে ধান ক্রয় করে চাল করে সব চাল মজুদ রেখে তারা চাল বিক্রি বন্ধ করে রেখেছেন। বর্তমানে চাল চাইলেই বলছে চাল নেই এর প্রভাব পড়েছে চালের বাজারের উপর। আমরা যে চাল কোথাও থেকে কিনবো সেটিও পাচ্ছিনা এর উপর ভারত থেকে চাল আমদানি বন্ধ যার কারনে ভারতীয় চাল পাওয়া যাচ্ছেনা বাধ্যহয়ে আমাদের যেমন বাড়তি দামে চাল কিনতে হচ্ছে তেমনি বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। চালের বাজার নিয়ন্ত্রনে ভারত থেকে চাল আমদানিসহ অসাধু মিল মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করলে দাম নিয়ন্ত্রনে আসবে বলেও জানান তিনি।

হিলি বাজারের চাল বিক্রেতা সুব্রত কুন্ডু বলেন, চালের দাম সপ্তাহের ব্যবধানে ৬/৭ টাকা করে বেড়ে গেছে। এর কারন হলো লোকাল মিলগুলো সব বন্ধ যার কারনে এখন অটো মিল মালিকরা যা করছে সেটাই হচ্ছে। ভরা মৌসুমে যদি চালের দাম বাড়ে তাহলে আর তো দিন পড়েই আছে তাই সরকারের উচিৎ পদক্ষেপ নেওয়া। এখন যে কেজিতে ৬/৭টাকা বেড়েছে পদক্ষেপ না নিলে চালের দাম আরো বাড়বে। মোটা চালের চেয়ে চিকন চালের দাম সবচেয়ে বেশী বেড়েছে। যে মিনিকেট জাতের চাল পুর্বে ৫৩ থেকে ৫৫ থেকে টাকা বিক্রি করলেও এখন তা বেড়ে ৬২/৬৫টাকা হয়ে গেছে। এছাড়া শম্পাকাটারি ৫২ থেকে ৫৪ টাকা বিক্রি হলেও বর্তমানে তা থেকে বেড়ে ৬৪/৬৫টাকা, আঠাশ জাতের চাল ৪৬ থেকে ৪৮ টাকা বিক্রি হলেও তা থেকে বেড়ে ৫২/৫৪টাকা, স্বর্না-৫ জাতের চাল ৩৮/৪০ টাকা বিক্রি হলেও তা থেকে বেড়ে ৪৫/৪৬টাকা বিক্রি হচ্ছে। 

হিলি স্থল শুল্ক স্টেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা এসএম নুরুল আলম খান বলেন, হিলি স্থলবন্দর দিয়ে বর্তমানে সাধারন যে মোটা চাল সেটি আমদানি একেবারেই হয়না। মাঝে মধ্যে বাশমতি চাল আমদানি হয় চলতি মাসে ১ট্রাকে ৩৫টন ও গত মাসে ১ট্রাকে ৩২টন বাশমতি চাল আমদানি হয়েছে। গতঅর্থবছরে সরকার আমদানি শুল্ক কমিয়ে চাল আমদানির সুযোগ দেওয়ায় বন্দর দিয়ে বেশ পরিমানে চাল আমদানি হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে ওই সুযোগ না দেওয়ায় বন্দর দিয়ে চাল আমদানি বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে চাল আমদানিতে ৬২ভাগ শুল্ক আরোপ রয়েছে আর রেয়াতি হারে সুযোগ দিলে শুল্কহার ২৬ভাগ শুল্ক দিতে হয়। রেয়াতি হারে চাল আমদানির সুযোগ দিলে বন্দর দিয়ে চালের আমদানি বাড়ে।

হাকিমপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নূর-এ আলম বলেন, বাজারে অহেতুক কেউ যেন কোন পণ্যের দাম বৃদ্ধি করতে না পারে সেজন্য আমরা নিয়মিতভাবে বাজার মনিটরিং অব্যাহত রেখেছি। প্রয়োজনে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান চালানো হচ্ছে। দাম বৃদ্ধির কোন অভিযোগ পেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

আরকে//


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি