স্ত্রী হত্যার লোমহর্ষক জবানবন্দি দিলেন ঘাতক স্বামী
প্রকাশিত : ১০:২৫, ৩১ মে ২০২২
জয়পুরহাটের কালাইয়ে জমাজমি সংক্রান্ত জেরে প্রতিশোধ নিতে নিজ শয়নকক্ষে স্ত্রী শিপন আক্তারকে (৪৫) গলা কেটে হত্যা করার কথা আদালতে স্বীকার করেছেন ঘাতক স্বামী তোজাম হোসেন সরকার।
সোমবার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন কালাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম মঈনুদ্দীন।
এর আগে রোববার রাত সাড়ে ১০টার দিকে চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেস্ট আতিকুর রহমানের আদালতে ওই ঘটনায় জড়িত পিতা-পুত্রকে হাজির করা হয়। সেখানে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন ঘাতক স্বামী।
পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গৃহবধূ শিপন আক্তারকে গলা কেটে হত্যার লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছেন ঘাতক স্বামী ও তার গর্ভের সন্তান শিহাব (২০)। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহত গৃহবধূর ভাই শাহজাহান আলীর মামলায় পিতা-পুত্রকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
পূর্ব শত্রুতার জেরে ওই গৃহবধূকে দুর্বৃত্তরা জবাই করে হত্যা করেছে বলে প্রথমে পিতা-পুত্র মিলে অভিযোগ তোলেন। তাদের এমন কথায় ক্লু খুঁজতে মাঠে নামে সিআইডি ও ডিবিসহ পুলিশের একাধিক টিম।
ক্লু খুঁজতে গিয়ে গৃহবধূর স্বজন, প্রতিবেশী সূত্রে পুলিশ জানতে পারে যে, ৭-৮ বছর পূর্বে প্রতিবেশী আয়নাল হকের ছেলে আহসানের নিকট থেকে ১০ শতাংশ জমি ক্রয় করেন তোজাম হোসেন সরকার। তখন থেকে অদ্য পর্যন্ত ওই জমির দলিল হয়নি। বর্তমানে জমির দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় বিক্রেতা সেই জমির দলিল করে দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাদের মধ্যে বেশকিছু দিন ধরে ঝগড়া-বিবাদ চলে আসছিল।
পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা জানান, জমি উদ্ধার এবং প্রতিবেশীসহ আরও বেশ কয়েকজনকে উচিত শিক্ষা দিতে গৃহবধূকে হত্যার পরিকল্পনা করেন স্বামী ও সন্তান। যথারীতি শুক্রবার রাতে খাবারের পর ঘরের দরজা খোলা রেখে গৃহবধূ শিপন আক্তার তার ৮ বছর বয়সের ছোট ছেলে তুহিনকে নিয়ে নিজ শয়নকক্ষে ঘুমিয়ে পড়েন।
পরিকল্পনা অনুযায়ী বড় ছেলে শিহাব ও তার বাবা অন্য একটি ঘরে ঘুমাতে যান। রাতের কোনো এক সময়ে বাবা-ছেলে মিলে গৃহবধূর কক্ষে প্রবেশ করে তাকে চাকু দিয়ে জবাই করে হত্যার পর ঘরের মেঝেতে মরদেহ ফেলে রাখেন।
হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই প্রতিবেশীদের অভিযোগ ছিল, নিরাপরাধ লোকজনদের ফাঁসাতে বাবা-ছেলে মিলে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটাতে পারেন। তাই তারা গৃহবধূর স্বামী এবং ছেলেকে আলাদা করে জিজ্ঞাসাবাদের অনুরোধ করেছিলেন প্রশাসনের কাছে।
মামলার বাদি শাহজাহান আলী বলেন, জমির বিরোধে প্রতিশোধ নিতে পিতা-পুত্র মিলে আমার বোনকে হত্যা করেছে। তাদের কঠিন শাস্তির দাবি করেন তিনি।
কালাই থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এস এম মঈনুদ্দী জানান, পিতা-পুত্র মিলে গৃহবধূকে হত্যা করেছে বলে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তারা স্বীকার করেছে। কিন্তু আদালতে তাদেরকে হাজির করা হলে ১৬৪ ধারায় নিহতের স্বামী তোজাম হোসেন সরকার একাই তার স্ত্রীকে হত্যা করেছেন এমন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
এএইচ
আরও পড়ুন