এখনও খোঁজ মেলেনি ফায়ার ফাইটার রবিউলের
প্রকাশিত : ১৯:০৫, ৬ জুন ২০২২
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কন্টেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডের পর থেকে নিখোঁজ রয়েছেন ফায়ার ফাইটার রবিউল ইসলাম রবিন (২৭)। তিনি নওগাঁর চকপাথুরিয়া ফকিরপাড়া মহল্লায় তার বাড়ি। তিনি সীতাকুণ্ড ফায়ার স্টেশনে ফায়ার ফাইটার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। আগুন নেভানোর কাজে তিনিও অংশ নিয়েছিলেন। এরপর থেকে নিখোঁজ। ছেলের শোকে কাতর মা ফাইমা খাতুন।
ফাইমা খাতুন জানান, শনিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে রবিনের সঙ্গে মোবাইলে আমার কথা হয়। এসময় রবিন বলে মা, সীতাকুণ্ডে একটা কারখানায় আগুন লাগছে। আমি ডিউটিতে যাচ্ছি। দোয়া কইরো। এই কথাটাই তার শেষ কথা। এরপর ছেলের সাথে আর কথা হয়নি। ওইদিন রাতে আমি শহরে এক আত্মীয়ের বাড়িতে ছিলাম। রাতে ছেরে সাথে কথা না হওয়ায় আমার আর ঘুম হয়নি।
রোববার ভোর ৫টার দিকে ছেলেকে ফোন দিলে ফায়ার স্টেশনের ডিউটিতে থাকা এক স্টাফ রিসিভ করে বলেন, রবিউল ডিউটিতে গেছে তাঁর জন্য আপনারা দোয়া করেন। এই কথা শোনার পর থেকে আমার মনের মধ্যে উতাল-পাতাল শুরু হয়। আত্মীয়ের বাড়ি থেকে বাড়ি ফিরে সকাল ৯টার দিকে টেলিভিশন চালু করে দেখি আগুনের সংবাদ। অনেক লোক মারা গেছে। কথা শেষ করতে পারেন না ফাইমা অঝোর ধারায় কাঁদতে থাকেন। রোববার সকালে টেলিভিশনে অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণে হতাহতের খবর দেখে রবিউলের এক বন্ধু মুঠোফোনে রবিউলের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। পরে ফোনে তাঁকে না পেয়ে তার বাবা খাদেমুল ইসলামকে ফোন দেন। ছেলের বন্ধুর কাছ থেকে অগ্নিকাণ্ডের ভয়াবহতার খবর শুনে খাদেমুল ইসলাম ছেলের মুঠোফোনে ফোন দিলে সীতাকুণ্ড ফায়ার স্টেশনের এক সহকর্মী সেই ফোন রিসিভ করে জানান, রাতে আগুন নেভানোর সময় বিস্ফোরনের ঘটনা ঘটে। ওই বিস্ফোরণের পর থেকে রবিউলকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ছেলের খোঁজ নিতে রোববার দুপুরে চট্রগ্রামের সীতাকুণ্ডের উদ্দেশ্যে ছোট ছেলে রনি ও সাইদুর রহমান নামে এক প্রতিবেশিকে নিয়ে রওনা দেন খাদেমুল।
রবিউলের ছোট ভাই রনি জানান, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে পুড়ে যাওয়া ৪টি লাশ রয়েছে। কিন্তু লাশগুলো বীভৎসভাবে পুড়ে যাওয়ায় শনাক্ত করা যাচ্ছে না। লাশ শনাক্তের জন্য বাবার শরীর থেকে হাসপাতালের লোকজন নমুনা নিয়েছেন।
রবিউল ছিল পরিবারের একমাত্র ভরসা ও উপার্জনক্ষম। ছেলেকে হারিয়ে মা বার বার বিলাপ করছেন। ছেলে ফেরত আসার অপেক্ষায় করছেন মা। ছেলে ফিরে আসা নিয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া দুরুদ পাঠ করছেন। স্বজনরা তাকে শান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। কিন্তু ছেলে নিখোঁজ এর সংবাদে মনকে শান্তনা দিতে পারছেন না মা।
রবিউল ইসলামের চাচা নাজিম উদ্দিন জানান, রবিউলরা তিন ভাই-বোন। রবিউল ছিল সবার বড়। তার ছোট রনি ও বোন রিমঝিম। বড়ভাই খাদেমুল ইসলাম ছেলে-মেয়েদের অনেক কষ্ট করে মানুষ করেছে। রবিউলকে নিয়ে ভাইয়ের অনেক স্বপ্ন ছিল। কিছুদিন পর নতুন করে আলাদা বাড়ি করার কথা ছিল এবং বোনকে বিয়ে দিবেন। কিন্তু সব আশা-ভরসা এখন অন্ধকারের মত লাগছে।
প্রতিবেশিরা জানান, খাদেমুল একজন কৃষক ও তার মা গৃহিনী। এসএসসি পাশ করে দেড় বছর আগে ফায়ার সার্ভিসে যোগ দেন রবিউল। চট্টগ্রামে প্রশিক্ষণ শেষে প্রথম কর্মস্থল সীতাকুণ্ড ফায়ার সার্ভিসে জয়েন করেন।
তারা জানান, গত ঈদ-উল-ফিতরের ৪ দিনের ছুটি নিয়ে বাড়ি আসেন। ছুটি শেষে ঈদের পরদিন আবারও কর্মস্থলে ফিরে যান। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কন্টেইনার ডিপোতে শনিবার রাত ১১টা ২৫ মিনিটে অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। সেখানে আগুন নেভানোর কাজে রবিউল অংশ নেয় বলে জানতে পারে পরিবার। সেখানে বিস্ফোরণে অনেক হতাহতের ঘটনা ঘটে। তবে রবিউল কোন তথ্য এখনো জানা সম্ভব হয়নি।
কেআই//
আরও পড়ুন