ঢাকা, শনিবার   ০২ নভেম্বর ২০২৪

পদ্মা সেতুর বন্ধনে স্বপ্ন বুনছে নড়াইলবাসী

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৫:১৯, ১১ জুন ২০২২

নড়াইলসহ দক্ষিণ-পশ্চিমঞ্চলবাসীর স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালু হচ্ছে আগামী ২৫ জুন। এদিন সকাল ১০টায় সেতুর উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পদ্মা সেতুর উদ্বোধন হলে নড়াইলসহ এ অঞ্চলের ২১টি জেলা সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবে। বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ সেতুর এই বন্ধনে স্বপ্ন বুনতে শুরু করেছেন। উদ্বোধনের খবরে খুশি এ জেলার মানুষ। 

এ বিষয়ে নড়াইল বঙ্গবন্ধু হকার্স মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাছুম জমাদ্দার বলেন, “আমাদের ব্যবসায়িক কাজে প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে একদিন ঢাকায় যেতে হয় দোকানের মালামাল কিনতে। ঢাকায় যাওয়া-আসা এবং মালামাল কিনে ফিরে আসতে কমপক্ষে দুইদিন সময় ব্যায় করতে হয়। পদ্মা সেতু চালু হলে আমরা সকালে ঢাকায় গিয়ে মালামাল কিনে নিয়ে বিকেলের মধ্যে এসে বেচা-কেনা করতে পারব। এতে করে আমাদের সময় এবং খরচ কমবে। তাতে আমাদের লাভের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে।”

নড়াইল চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি হাসানুজ্জামান বলেন, “পদ্মা সেতু চালু হলে নড়াইলের ব্যবসা-বাণিজ্যের ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হবে। জেলায় ইতিমধ্যে বিসিক শিল্পনগরী এবং অর্থনৈতিক জোন প্রতিষ্ঠার প্রকল্প চলমান রয়েছে। ইতোমধ্যে দেশের বড় বড় কোম্পানিগুলো নড়াইলে জমি ক্রয় করে মিল কলকারখানা তৈরী করার প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে। এতে করে আমাদের এ অঞ্চলের বেকার সমস্যার সমাধান করে, ব্যাপক হারে কর্মসংস্থান বৃদ্ধিপাবে। দেশের অন্যতম স্থবন্দর বেনাপোল থেকেও আমদানি-রপ্তানী বৃদ্ধি পাবে। নড়াইল একটি কৃষি প্রধান জেলা হওয়ায় এখানে উৎপাদিত কৃষি পণ্য সহজে আমরা ঢাকায় প্রেরন করতেত পারবো। এতে করে কৃষক তাদের নায্য পাওনা বুঝে পাবে।”

সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ইসমত আরা বলেন, “নড়াইলসহ এ অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের চাওয়া পুরণ হতে চলেছে। স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালু হলে যোগাযোগ ব্যবস্থার সবচেয়ে বেশি পরিবর্তন হবে। রাজধানীর সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থার আমুল পরিবর্তন হবে। স্বল্প সময়ে আমরা ঢাকায় যেতে পারব, কাজ-কর্ম সেরে বিকেলের মধ্যে আবার ফিরে আসতে পারব। এতে করেঅ ামাদের সময় অর্থ সাশ্রয় হবে।”

নড়াইল জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাহমুদুল হাসান কায়েস বলেন, “নড়াইলসহ দেশবাসীর স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালু হলে আমরা সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবো। বিশেষ করে যোগাযোগ ব্যবস্থার আমুল পরিবর্তন হবে। নড়াইলের ওপর দিয়ে যাবে এশিয়ান হাইওয়ে সড়কটি। যেটা মিশবে বেনাপোল স্থল বন্দরে নড়াইলসহ ঢাকার সাথে আমদানি-রপ্তানি বৃদ্ধি পাবে। নড়াইলে বিভিন্ন মিল কলকারখানা প্রতিষ্ঠিত হবে এতে করে জেলার মানুষের কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে, জীবন মান উন্নত হবে।”

পৌর মেয়র আঞ্জুমান আরা বলেন, “পদ্মা সেতু দেশবাসীর স্বপ্নের সেতু। নড়াইলসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হবে। বেকার সমস্যার সমাধান হবে। পাল্টে যাবে এ এলাকার অর্থনৈতিক চিত্র। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ট পদক্ষেপের কারনেই আমরা ২১ জেলার মানুষ এই সুবর্ণ সুযোগ পেতে যাচ্ছি।”

এ জন্য নড়াইল পৌরবাসীর পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান তিনি।

নড়াইল সদর হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (সংযুক্ত) ডা. মো. আসাদউজ-জামান মুন্সী বলেন, “পদ্মা সেতুর উদ্বোধন হলে নড়াইলের সঙ্গে রাজধানী ঢাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ এ অঞ্চলের মানুষের জীবনমানের ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হবে।”

তিনি আরও বলেন, “আমাদের জেলার হাসপাতালগুলোতে গুরুত্বপূর্ণ রোগীদের ঢাকায় প্রেরণ করা হয়ে থাকে। ঘাটে ঘন্টার পর ঘন্টা ফেরির অপেক্ষায় থেকে ফেরি পার হয়ে ঢাকায় যেতে-যেতে অনেক সময় ফেরিঘাটেই রোগী মৃত্যু বরণ করে থাকে। সেতু চালু হলে রোগীসহ যে কোন প্রয়োজনে ২ থেকে আড়াই ঘন্টার মধ্যে আমরা ঢাকায় পৌঁছাতে পারবো। এতে করে রোগীর প্রাণহানী কমবে। নড়াইলবাসী উন্নত স্বাস্থ্যসেবা পাবে।”

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন খান নিলু বলেন, “পদ্মা সেতুর প্রকল্প নিয়ে বিশ্ব ব্যাংক যখন এদেশীয় ষড়যন্ত্রের কারনে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল ঠিক তখনই বঙ্গবন্ধু কণ্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। সফল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মতো একজন প্রজ্ঞা রাজনীতিবীদের কারনেই এতবড় একটি প্রকল্প করার কঠিন সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব হয়েছিলো। এ জন্য জননেত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানায়। দেশি-বিদেশী ষড়যন্ত্রকে পেছনে ফেলে স্বপ্নের পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। আগামী ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধনের সেই শুভক্ষণ। আমরা অধির আগ্রহে অপেক্ষা করছি সেই শুভক্ষণের জন্য।”

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সুবাস চন্দ্র বোস বলেন, “বর্তমান সরকার দেশের সড়ক ও যোগাযোগ উন্নয়নে কাজ করছে। এর মধ্যে নিজেদের অর্থে পদ্মা সেতু নির্মাণ আমাদের জন্য অত্যান্ত গর্বের। আর এমন একটি সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব হয়েছে একমাত্র জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা সফল প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার জন্যই। তার সততা নিষ্ঠার কারনেই এতবড় একটি প্রকল্প সফল ভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হয়েছে। এ জন্য নড়াইলবাসীর পক্ষ থেকে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে প্রাণঢালা শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই।”

জেলা বাস ও মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সাদেক আহম্মেদ খান বলেন, “দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্তত ২১ জেলার মানুষের দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ লাঘব হবে। পদ্মা সেতু এই এলাকার মানুষের স্বপ্নের সেতু। এ সেতু চালু হলে নড়াইল, যশোর, বেনাপোল স্থলবন্দর ও খুলনা থেকে ঢাকায় যাতায়াতকারী পরিবহন মাগুরা-ফরিদপুর হয়ে যাতায়াতের পরিবর্তে কালনা হয়ে পদ্মা সেতু হয়ে যাতায়াত করতে পারবে। এতে বেনাপোল-ঢাকা ও যশোর-ঢাকার দূরত্ব ১১৩ কিলোমিটার, খুলনা-ঢাকার দূরত্ব ১২১ কিলোমিটার এবং নড়াইল-ঢাকার দূরত্ব ১৮১ কিলোমিটার কমবে।”

“একই ভাবে ঢাকার সঙ্গে শিল্প ও বাণিজ্যিক শহর ওয়াপাড়া, বেনাপোল স্থলবন্দর ও মোংলা বন্দর, সাতক্ষীরাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্য জেলার দূরত্বও কমে যাবে। এতে করে আমরা স্বল্প সময়ের মধ্যে ঢাকায় যেতে পারবো। ফেরি ঘাটে ঘন্টার পর ঘন্টা সময় নষ্ট করতে হবে না।”, বলেন তিনি।
সূত্র: বাসস
আরএমএ/ এসএ/


 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি