সিলেট-সুনামগঞ্জে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা, পানিবন্দি ৪০ লাখ মানুষ
প্রকাশিত : ১৬:৪০, ১৮ জুন ২০২২
সিলেট ও সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। পাহাড়ি ঢল আর অতি ভারী বৃষ্টিতে নদনদী ও হাওরের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বন্যার আরো বিস্তৃতি ঘটেছে।
পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন দুই জেলার প্রায় ৪০ লাখ মানুষ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এটি সিলেটে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা।
পানিবন্দি মানুষের মধ্যে হাহাকার ও আর্তনাদ চলছে। আশ্রয়ের খোঁজে পানি-স্রোত ভেঙে ছুটছে মানুষ। সবচেয়ে বিপদে আছেন শিশু ও বয়স্করা। আটকেপড়াদের উদ্ধার করে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হচ্ছে। যেখানেই শুকনো ও উঁচু জায়গা পাওয়া যাচ্ছে সেখানেই আশ্রয় নিচ্ছে মানুষ।
সিলেটের সবকটি উপজেলা ও অর্ধেক শহর, সুনামগঞ্জের উপজেলা ও পৌর শহর বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়ক ও সিলেট-ভোলাগঞ্জ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবু রহমান মহাসড়ক। দুই জেলায় শতাধিক আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।
সিলেটের অন্যতম বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র কুমারগাঁও স্টেশনে পানি ঢুকে বন্ধ হয়ে গেছে সিলেটের বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা। সুনামগঞ্জে গত দুদিন ধরে বিদ্যুৎ না থাকায় মোবাইল নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে, কারও সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না।
সিলেটের নদনদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। শুক্রবার দিবাগত রাতে সিলেটে বৃষ্টি কিছুটা কম ছিল। এতে পানি এক-দুই ইঞ্চি কমেছে সকাল ৯টা পর্যন্ত। এররপর থেকে সিলেটে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। ফলে, বন্যার পাশাপাশি নগরজুড়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। পানির নিচে রয়েছে সবগুলো রাস্তাঘাট। বন্যায় নদনদীর পানি আবারও বাড়তে শুরু করেছে। সিলেটে আগামী ৪৮ ঘণ্টা ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
এদিকে, সিলেটে বন্যা দুর্গত এলাকায় পানিবন্দি লোকজনকে উদ্ধারে সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনী তৎপর রয়েছে। শুক্রবার বিকেল থেকে সেনাবাহিনীর ১০ প্লাটুন, ৬টি মেডিকেল টিম এবং শনিবার সকাল থেকে নৌবাহিনীর ৩৫ সদস্য দুটি টিমে ভাগ হয়ে কাজ শুরু করেছে।
সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
উদ্ধার কাজে নৌবাহিনী সদস্যরা নিজস্ব ক্রুজ ও বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টার ব্যবহার করছেন। বিকেলের মধ্যে ৬০ জনের আরেকটি দল আরও ক্রুজ ও হেলিকপ্টারসহ উদ্ধার কাজে যুক্ত হবে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, নৌবাহিনীর ৩৫ সদস্যের একটি দল শুক্রবার রাতে সিলেট এসে পৌঁছায়। শনিবার সকাল থেকে ৩৫ সদস্যের দল কোস্টগার্ডের ১টি ক্রুজ ও বিমানবাহিনীর দুটি হেলিকপ্টার দিয়ে উদ্ধার কাজ শুরু করে।
সিলেট সদর উপজেলার জালালাবাদ ইউনিয়নে একটি টিম সকাল থেকে কাজ শুরু করে। আরেকটি টিম কোম্পানিগঞ্জে কাজ শুরু করেছে।
জেলা প্রশাসন সূত্র আরও জানায়, বিকেলে নৌবাহিনীর আরও ৬০ সদস্যের একটি দল সিলেট এসে পৌঁছাবে। আরও দুটি ক্রুজ উদ্ধার কাজে যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে। এর মধ্যে একটি সিলেটে ও অন্যটি সুনামগঞ্জে উদ্ধার কাজে যুক্ত হবে।
সিলেট দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ শাখা জানিয়েছে, ১৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ৭ হাজার ৯০০ বস্তা শুকনো খাবারের প্যাকেট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয় আরও ৮ হাজার প্যাকেট খাবার ও ৩০ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে।
সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার মুহাম্মদ মোশাররফ হোসেন জানিয়েছেন, সিলেট ও সুনামগঞ্জের ১২ জেলায় বন্যা পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ। এসব এলাকায় আমরা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।
সূত্র: বাসস
এমএম/
আরও পড়ুন