কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত, ধরলা-ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপৎসীমার ওপরে
প্রকাশিত : ২২:৩৭, ২২ জুন ২০২২ | আপডেট: ২২:৩৯, ২২ জুন ২০২২
কুড়িগ্রামে ধরলা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। টানা এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে ঘর-বাড়িতে পানি থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলের বন্যা কবলিত মানুষজন। কিছু পরিবার ঘর-বাড়ি ছেড়ে উঁচু এলাকায় আশ্রয় নিলেও অনেক পরিবার এখনও বসবাস করছেন নৌকায় ও ঘরের উঁচু করা মাচানে। শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির চরম সংকটে পড়েছেন তারা।
এদিকে বন্যার পানি প্রবেশ করায় ২৯৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ৩০টি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান বন্ধ রেখেছে শিক্ষা বিভাগ। বন্যার্তদের জন্য সরকারী ও বেসরকারিভাবে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ অব্যাহত থাকলেও সবার ভাগ্যে জুটছে না তা।
বিন নেটওয়ার্ক ফাউন্ডেশন ও সহমর্মিতা ফাউন্ডেশন উদ্যোগে সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়নের বন্যা কবলিত ২ শতাধিক পরিবারের মাঝে এক কেজি চিড়া, এক কেজি মুড়ি, একটি করে দুই লিটার পানির বোতল, এক কেজি করে হাড়ি ভাঙ্গা আম ও স্যালাইন ও শিশুদের মাঝে বিস্কুট বিতরণ করা করা হয়েছে। সেচ্ছাসেবিদের মাধ্যমে এসব খাবারের প্যাকেট বিতরণ করেন কুড়িগ্রামে প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান বিপ্লব।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, বুধবার বিকেল ৩টা রিপোর্ট অনুযায়ী ব্রহ্মপূত্র নদের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপদসীমার ৫১ সেন্টিমিটার, নুনখাওয়া পয়েন্ট ব্রহ্মপুত্রের পানি ১৪ সেন্টিমিটার ও ধরলা নদীর পানি সেতু পয়েন্টে বিপদসীমার ৩৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি এখনো বিপদসীমার ১৫ সেন্টিমিটার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সদর উপজেলার পাঁচগাছী ইউনিয়নের কদমতোলা গ্রামের আকবর আলী জানান, ৫-৬ দিন থেকে পানিবন্দী জীবনযাপন করছি। বাড়ি থেকে বের হতে পারছি না। এখন পর্যন্ত কোন প্রকার সহায়তা পাই নাই। খুব কষ্টে দিন পার করছি।
ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের বড়াই বাড়ি এলাকার আমিনুল জানায়, বন্যার কারণে কাজকর্ম বন্ধ ঠিকমত বাজার করতে পারছি না। খাওয়া দাওয়ার সমস্যায় পরছি। পানিতে চলাফেরা করতে করতে পায়ে ঘা হয়ে গেছে।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার পাঁচগাছী ইউনিয়নের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. আব্দুল বাতেন সরকার বলেন, সরকারিভাবে আমার ইউনিয়নের জন্য চার টন চাল পেয়েছি তা বুধবার ১০ কেজি করে বিতরণ করা হয়েছে। যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। অনেক বানভাসি মানুষকে দেয়া সম্ভব হয়নি।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম বলেন, বন্যার কারণে বিদ্যালয় মাঠ ও তার আশেপাশে এলাকায় পানি উঠায় শিক্ষার্থীদের ঝুঁকির বিষয়টি বিবেচনা করে ২৯৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানান, ৯ উপজেলার বন্যা কবলিত মানুষের জন্য ৩৩৮ মেট্রিক টন চাল, নগদ ১৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ১ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার, ১৮ লাখ ৯৫ হাজার টাকার শিশু খাদ্য ও ১৭ লাখ ৭৫ হাজার টাকা গো-খাদ্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যা বিতরণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্ল্যাহ আল মামুন জানান, ব্রহ্মপুত্র ও ধরলার পানি ধীর গতিতে কমতে শুরু করলেও এখনও বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্যদিকে তিস্তার পানি সামান্য বৃদ্ধি পেলেও বিপদসীমার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
কেআই//
আরও পড়ুন