ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪

পদ্মা সেতুর মাধ্যমে স্বপ্ন দেখছে ঝালকাঠির কৃষিজীবীরা 

ঝালকাঠি প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ১৭:৩৯, ২৪ জুন ২০২২ | আপডেট: ১৮:০৩, ২৪ জুন ২০২২

নিজস্ব অর্থায়নে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর দ্বার উন্মোচিত হতে যাচ্ছে আগামী ২৫ জুন। এই সেতু বাস্তবায়নের ফলে নিজেদের ভাগ্য উন্নয়নের স্বপ্ন দেখছে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জেলা ঝালকাঠির কৃষি ও পর্যটন শিল্পের সঙ্গে জড়িত পেশাজীবীরা। নিজেদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য দেশের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সরবরাহ করে অর্থনৈতিক মুক্তির অপেক্ষায় এই জনপদের মানুষ।

পদ্মা সেতু ব্যবহার করে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের সড়ক যোগাযোগ বৃদ্ধি পেলে দক্ষিণাঞ্চলের বিনোদন ও পর্যটন কেন্দ্রগুলো দেশি-বিদেশি পর্যটকে মুখরিত হবে। তেমনিভাবে কৃষিপণ্য, কুটিরশিল্প, মৎস্য ও পর্যটন শিল্পের ক্ষেত্রে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারী বৃদ্ধির মাধ্যমে সবকটি বাণিজ্যিক পথ খুলে যাবে।

ঝালকাঠি চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ড: এর সভাপতি মনিরুল ইসলাম তালুকদার বলেন, পদ্মা সেতু চালুর মাধ্যমে জেলার ব্যান্ডিং পণ্য শীতলপাটি ও পেয়ারাসহ আমড়া, কাগজী লেবু, নারিকেল, শুপারিসহ দক্ষিণাঞ্চলে উৎপাদিত পণ্য খুব সহজেই দেশের চাহিদা পূরণ করে রপ্তানিতে ভূমিকা রাখবে। কৃষিজাত পণ্যসহ টাটকা শাক-শবজি রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে খুব সহজে ও স্বল্প সময়ে পৌঁছাতে পারলে কৃষকেরা সঠিক মূল্যে বিক্রির মাধ্যমে আর্থিক স্বচ্ছলতা অর্জন করবে। পাশাপাশি দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আকৃষ্ট হলে নতুন শিল্পকারখানা গড়ে উঠার সাথে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
   
ঝালকাঠি বিসিক শিল্পনগরীর উপ-ব্যবস্থাপক মো. শাফাউল করিম জানিয়েছেন, বিসিক মূলত সকল প্রকার শিল্পের পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। আগামী ২৫ জুন স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর ঝালকাঠি জেলায় এর প্রভাব পরবে। ইতিমধ্যেই আমাদের এ শিল্পনগরীর ৭৯টি প্লটের মধ্যে ৭৫টি প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। পদ্মা সেতু পুরোপুরি চালু হওয়ার পর এখানে সহসাই শিল্প-কলকারখানা গড়ে উঠবে। এতে ঝালকাঠি বিসিক শিল্প নগরীর দ্রুত আরও সম্প্রসারণ করার প্রয়োজন হবে। সেই সাথে জেলায় ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।

ঝালকাঠি জেলা বাস ও মিনিবাস মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন আহমেদ জানান, পদ্মা সেতু ব্যবহার করে ঝালকাঠিবাসীর স্বল্প সময়ে ও নিরাপদে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ উত্তরাঞ্চলে যাতায়াতের দ্বার উম্মোচন হবে। এতে ঢাকা থেকে আরো অনেক নতুন বিলাসবহুল পরিবহন সরাসরি ঝালকাঠিসহ বিভিন্ন উপজেলা পর্যায়ে চলাচলে এগিয়ে আসবে। ফলে যাত্রী সেবার মান আরও উন্নত ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি অনেক বেকার শ্রমিকের কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে।

ঝালকাঠির ভীমরুলী ও শতাদশকাঠি এলাকার কয়েকজন কৃষিজীবী জানায়, আমাদের জেলাসহ এ অঞ্চলের সরকারী বা বেসরকারী কোন হিমাগার না থাকায় প্রতিবছর উৎপাদিত কৃষিপণ্য নিয়ে কৃষকদের হিমশিম খেতে হয়। সেই সঙ্গে যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থা অনুন্নত হওয়ায় উৎপাদিত কৃষিপণ্য দ্রুত সরবরাহ বা বাজারজাতকরণ করা সম্ভব হয়না। এ অবস্থায় আমাদের চাষীদের উপাদিত পেয়ারা-আমড়াসহ শাকসবজি অর্ধেকের বেশি বাগানেই নষ্ট হয়ে যায়।

এসব পেয়ারা ও সবজি সহজে পচনশীল হওয়ায় অনেকটা পানির দরে বিক্রি করতে বাধ্য হওয়ায় বাগান মালিকরা উৎপাদন খরচ উঠাতে হিমশিম খায়। ঝালকাঠির ভীমরুলী ও পার্শ্ববর্তী স্বরূপকাঠি উপজেলার আটঘর-কুরিয়ানাসহ কয়েকটি ইউনিয়ন জুড়ে গড়ে ওঠা দেশের বৃহৎ এই পেয়ারা ও আমড়া বাগানে থেকে পদ্মা সেতু চালুর পর কম সময়ে সকল পণ্য ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে পৌছাবে। এর ফলে তারা দীর্ঘদিনের আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির কাটিয়ে লাভের মুখ দেখতে পারবে বলে সন্তোষ প্রকাশ করেন।

ঝালকাঠি জেলা প্রশাসক মো. জোহর আলী বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণে যোগাযোগ ব্যবস্থায় ঝালকাঠির অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধন হবে। ঢাকাসহ উত্তরাঞ্চলের যাতায়াতে সময় অনেক কম লাগবে। ব্যবসা বাণিজ্য সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। দ্রুত সময়ে গুরুতর রোগীদের নিয়ে ঢাকায় উন্নত চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হবে। পদ্মা সেতুর কারণে ঝালকাঠিসহ এ অঞ্চলে ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার ও বিপ্লব ঘটবে। উদ্যোক্তারা এ জেলায় শিল্পকারখানা স্থাপনে আগ্রহী হবে। এতে জেলায় কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। এতে জেলার মানুষের ভাগ্যের দুয়ার খুলে যাবে।
কেআই//
 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি