পদ্মাসেতুতে মৃত্যু: সকালে মোটরসাইকেল কিনে বিকালে ঘুরতে যান দুই বন্ধু
প্রকাশিত : ১০:০৫, ২৮ জুন ২০২২ | আপডেট: ১০:০৭, ২৮ জুন ২০২২
পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত ঢাকার নবাবগঞ্জের দুই যুবকের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম।
যান চলাচলের জন্য পদ্মাসেতু উন্মুক্তের প্রথম দিন রোববার বিকালে ৬ বন্ধু মিলে দেখতে যান স্বপ্নের পদ্মা সেতু। জাজিরা থেকে রাত আনমানিক ৮টার দিকে বাড়ি ফেরার পথে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মারা যান মো. আলমগীর ও মো. ফজলু নামে দুই বন্ধু।
নবাবগঞ্জ উপজেলা সমসাবাদ এলাকার চিনু বেপারীর ছেলে মো. আলমগীর মোটর মেকানিকের কাজ করে অন্ধ বাবা ও অসুস্থ মাকে নিয়ে কোন মতে সংসার চালাচ্ছিলেন। রোববার বিকালে হঠাৎ বন্ধুদের সাথে দেখতে যান পদ্মা সেতু। কিন্ত সড়ক দুর্ঘটনায় নিভে যায় তার জীবন প্রদীপ। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষমকে হারিয়ে অনিশ্চয়তায় পরিবারের সদস্যরা।
আলমগীরের বোন কহিনুর আক্তার জানান, “সব সময় বলতো, মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ওর কিছু হবে না। সেই মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায়ই না ফেরার দেশে চলে গেল আমার ভাই। অন্ধ বাবা ও অসুস্থ মা ওর উপরই নির্ভরশীল ছিল। এখন কি হবে ভাবতে পারছি না “
নিহত আলমগীরের দুলাভাই সালাউদ্দিন জানান, “রাত আনুমানিক সোয়া আটটার দিকে আলমগীরের বন্ধু আলী ফোনে জানায় আলমগীর ও ফজলু অ্যাক্সিডেন্ট করেছে। আমরা ঢাকা হাসপাতালে যাওয়ায় আগেই সংবাদ পাই ওরা আর নেই।”
সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের অপরজন উপজেলা যন্ত্রাইল ইউনিয়নের হরিষকুলের মৃত আবু মিয়ার ছেলে মো. ফজলু। সদ্য বিয়ে করা ফজলু রোববার সকালে কিনেছিলেন নতুন মোটরসাইকেল। সেই মোটরসাইকেল নিয়ে ঘুরতে গিয়ে সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হন তিনি।
অভাবের সংসারের বড় হওয়া ফজলুকে হারিয়ে দিশেহারা স্ত্রী ও পরিবারের সদস্যরা।
নিহত ফজলুর মামাতো ভাই আবদুল ও বোন কহিনুর বেগম জানান, “ফজলু ইরাকে ছিলেন। সাড়ে তিন বছর পর গত রমজানে সে দেশে এলে মে মাসের ২০ তারিখে বিয়ে করেন সে। মার ইচ্ছা অনুযায়ী ঘোড়ার গাড়িতে বিয়ে করেছিল ফজলু। রোববারই কিনে এনেছিলেন নতুন মোটরসাইকেল। সেই মোটরসাইকেল নিয়েই বিকালে বন্ধুদের নিয়ে ঘুরতে যায় পদ্মা সেতুতে। রাতে টিভিতে ফজলু ও আলমগীরের মৃত্যুর খবর পাই আমরা।”
কহিনুর বেগম আরও বলেন, “যাওয়ার সময় বলে যায়, মা আমি যাই। আমি তখন বলি যাই বলিস কেন ভাই, বল আসি। ওকে মোটরসাইকেলের ব্যাপারে প্রশ্ন করলে ও দুষ্টামী করে বলে, মোটরসাইকেল আমাকে জান্নাতে নিয়ে যাবে। আমরা বুঝতে পারি নাই, ও এভাবে জান্নাতে চলে যাবে।”
ফজলু ও আলমগীরের মৃত্যুকে মেনে নিতে পারছেন না এলাকাবাসীও। দুই যুবকের এমন মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে তাদের নিজ নিজ এলাকায়।
এএইচ
আরও পড়ুন