পুকুর গিলে খাচ্ছে নাটোরের ঔষধি গ্রাম
প্রকাশিত : ১১:০৯, ৩০ জুন ২০২২
অবাধে পুকুর খননের কারণে ঔষধি গ্রাম খ্যাত নাটোরের লক্ষ্মীপুর খোলাবাড়িয়া গ্রামের আবাদি জমির পরিমাণ কমতে শুরু করায় শংকিত হয়ে পড়েছেন ভেষজ চাষীরা। পুকুর খননের দৌরাত্মসহ উৎপাদিত পণ্যের বাজার মূল্য না পাওয়ায় দিশেহারা এলাকার চাষীরা।
স্থানীয়দের দাবি, জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে পচে যাচ্ছে অ্যালোভেরাসহ ভেষজ উদ্ভিদ। গত ২-৩ বছরে অসংখ্য পুকুর খনন করায় এই ঔষধি গ্রামের প্রায় ৫০ হেক্টর জমি কমে গেছে। তবে কৃষি বিভাগ বলছে ঔষধি গ্রামে জমি কমেছে ২৫ হেক্টর।
শহর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে নাটোর সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর খোলাবড়িয়া ইউনিয়নের ১৭টি গ্রামের ১৪০ হেক্টর জমিতে অ্যালোভেরাসহ প্রায় শতাধিক প্রজাতির ভেষজ পণ্য উৎপাদিত হয়। এছাড়া নার্সারি করে আরও প্রায় ৫ শতাধিক রকমের ভেষজ চারা তৈরি করা হয়।
গত ২ থেকে ৩ বছর ধরে অবাধে পুকুর খননের কারণে পানি নিষ্কাশন পথ বন্ধ হয়ে অনেক জমিতে জলাবদ্ধতায় উৎপাদিত ভেষজ নষ্ট হচ্ছে। তাতে শংকিত হয়ে পড়েছেন চাষীরা।
লক্ষ্মীপুর খোলাবাড়িয়া গ্রামের ভেষজ চাষী ও নার্সারি মালিক জয়নাল আবেদীন বলেন, “২০০১ ও ২০০২ সাল থেকে ভেষজ চাষ শুরু করেন তিনি। বর্তমানে ৫৮০ জাতের ভেষজ চারা তৈরি করছেন। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে অবাধে পুকুর খননের কারণে ভেষজ চাষ নিয়ে শংকিত। দিনে দিনে জমি কমছে এবং পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে বেশ কিছু জমিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।”
আমিরগঞ্জ এলাকার ভেষজ চাষী মজিবুর রহমান বলেন, “পানি নিষ্কাশনের কোন পথ না রেখেই এসব পুকুর খনন করা হচ্ছে। বর্ষায় জমে থাকা পানি বের হতে না পেরে অ্যালোভেরা পচে যাচ্ছে। গত ২ বছর থেকে এই ঔষধি গ্রামে পুকুর খনন শুরু হওয়ার এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। করোনায় ক্রেতার দেখা পাওয়া যায়নি, এখন জলাবদ্ধার জন্য উৎপাদিত পণ্য পচন ধরায় ক্রেতারা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।”
ভেষজ চাষীদের অভিযোগ, স্থানীয় প্রশাসনের কাছে থেকে জমির শ্রেণী পরিবর্তন করে পুকুর খননের অনুমতি নিচ্ছে অর্থলোভী একটি চক্র। তিন ফসলি জমিও পুকুর খননের অনুমতি দেয়া হচ্ছে। ফসলি জমির শ্রেণী বিন্যাস করে উপজেলা ভূমি কর্মকতার দেওয়া প্রতিবেদনের পর পুকুর খননের মহোৎসব শুরু হয়েছে।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান কালু জানান, ঔষধি গ্রামখ্যাত খোলাবাড়িয়া ইউনিয়নে পুকুর খননের মহোৎসব চলছে। তিন ফসলি জমি কেটে পুকুর খনন করা হচ্ছে। অন্য জমির পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না রেখে এসব পুকুর খনন করায় অনেক জমিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। এতে করে ওই সব জমিতে আর কোন ফসল আবাদ বা ভেষজ গাছ লাগানো যাচ্ছেনা। এসব জমির বেশির ভাগই পতিত হয়ে যাচ্ছে।
স্থানীয় প্রশসনের কাছে অভিযোগ করার পর এসব খনন কাজ বন্ধ হয়নি। ইতিমধ্যে প্রায় ৫০-৬০ হেক্টর জমি কেটে পুকুর করা হয়েছে। যেভাবে পুকুর কাটা হয়েছে বা হচ্ছে তাতে করে ঔষধি গ্রাম হিসেবে পরিচিত পাওয়া লক্ষ্মীপুর খোলাবাড়িয়া অস্তিত্ব হারাবে বলে মনে করছেন তিনি।
পুকুর খননের সত্যতা স্বীকার করে নাটোর সদর উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ মেহেদুল ইসলাম জানান, গত তিন বছরে ঔষধি গ্রাম লক্ষ্মীপুর খোলাবাড়িয়া এলাকার ২৫ হেক্টরসহ সদর উপজেলায় ১১৬ হেক্টর জমিতে পুকুর খনন করা হয়েছে। এখনই এই পুকুর খনন বন্ধ না হলে ভেষজ চাষীদের শঙ্কা সত্যি হতে পারে।
জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, পুকুর খননের পাশাপাশি বাজার মূল্য না পাওয়ায় ভেষজ চাষ কমে যাচ্ছে। তবে যখনই পুকুর খননের খবর পাওয়া যাচ্ছে তখনই তা বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। ঔষধি গ্রামের চাষীদের জন্য যা যা করার প্রয়োজন তা করা হবে।
একই সাথে যারা পুকুর কাটার সাথে যুক্ত হয়ে লাগামহীন বক্তব্য দিচ্ছেন তাদেরও শনাক্ত করার প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
এএইচ
আরও পড়ুন