ঢাকা, সোমবার   ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

হাসপাতালে মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করছে বস্তাবন্দি উদ্ধার তরুণী

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ২১:৪০, ২১ জুলাই ২০২২ | আপডেট: ২১:৫৩, ২১ জুলাই ২০২২

বস্তাবন্দি অবস্থায় তাকে উদ্ধারকৃত সেই তরুণী

বস্তাবন্দি অবস্থায় তাকে উদ্ধারকৃত সেই তরুণী

ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করছে বস্তাবন্দি অবস্থায় উদ্ধারকৃত মাহফুজা খাতুন (১৪) নামে এক মাদরাসা শিক্ষার্থী। বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) সকালে পৌরশহরের টাঙ্গন নদীর তীর থেকে বস্তাবন্দি অবস্থায় তাকে উদ্ধার করা হয়।

সন্ধ্যায় সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামাল হোসেন জানান, স্থানীয় লোকজন বৃহস্পতিবার সকাল ৭টা ২০মিনিটে পৌরশহরের টাঙ্গন নদী থেকে বস্তাবন্দি অবস্থায় ওই ছাত্রীকে উদ্ধার করে ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন এবং বর্তমানে সে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

উদ্ধারকৃত মাহফুজা খাতুন দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার বিজয়পুর গ্রামের মৃত ক্বারী মোস্তফা কামালের মেয়ে। সে ঠাকুরগাঁও পৌরশহরের খাতুনে জান্নাত কামরুন্মেছা কাওমী মহিলা মাদরাসায় কিতাব বিভাগে পড়াশোনা করতো। 

শহরের খালপাড়ার বাসিন্দা জয় মহন্ত অলক জানান, সকালে টাঙ্গন নদীর ব্রীজের নীচে একটি বস্তা পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়রা আমাকে ফোন দেয়। আমি সেখানে গিয়ে বস্তা খুলে দেখি একটি নারীর দেহ। আমরা প্রথমে ধারণা করেছিলাম মৃত লাশ। এসময় আমি বস্তা বন্দি লাশ ভেবে ছবি তোলার জন্য একটু কাছে গিয়ে দেখি বস্তাটি নড়ে উঠল। তাৎক্ষণিকভাবে আমি স্থানীয়দের পরীক্ষা করতে বললে তারা জানায় বেঁচে আছে। এসময় আমরা দ্রুত তাকে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করে দেই।

তিনি আরো জানান, প্রায় দুই ঘণ্টা পর মেয়েটির কিছুটা জ্ঞান ফিরে এলে জানা যায়, সে মাদ্রাসা ছাত্রী, নাম মাহফুজা খাতুন। 

পরে মাহফুজা খাতুনের বড় বোনের মুঠোফোন নম্বর পেয়ে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমার বোন টাঙ্গন নদীর পাশে খাতুনে জান্নাত কামরুনেছা কাওমী মহিলা মাদরাসায় পড়াশোনা করে। সেখানে কি ঘটনা ঘটেছে আমরা জানি না। আমরা ঠাকুরগাঁওয়ে যাচ্ছি।

পরে ওই মাদরাসার মুহতামিম হযরত আলীর সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, প্রতিরাতের নিয়মে আমরা বুধবার রাত ১১টায় সবাই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। বৃহস্পতিবার ফজরের নামাজের সময় মাহফুজা খাতুনকে তার রুমে দেখতে না পেয়ে তার সহপাঠিরা তাকে খোঁজাখুঁজি করে এবং তার অভিভাবকদের খবর দেওয়া হয়। পরে খবর পাই, সূর্যোদয়ের পর মাদরাসার পাশেই টাঙ্গন নদীর তীরে ব্রীজের নীচে বস্তাবন্দি অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঠাকুরগাঁও সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামাল হোসেন জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, মাহফুজা খাতুনের বিয়ে হয়েছিল এবং স্বামীর সঙ্গে বনিবনা নেই। তার স্বামী দলবল নিয়ে বুধবার দিবাগত রাত আনুমানিক ২-৩টার দিকে মেয়েটিকে কৌশলে মাদরাসা থেকে বের করে নিয়ে আসে এবং পরে নির্যাতন করে এবং তাকে মৃত ভেবে বস্তাবন্দি করে টাঙ্গন নদীর তীরে ব্রীজের নীচে ফেলে রেখে চলে যায়। পরে সকালে খবর পেয়ে তাকে উদ্ধার করে আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। পুরো সুস্থ হতে সময় লাগবে বলে চিকিৎসক জানিয়েছেন। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এদিকে বিকেলে কিছুটা সুস্থ হওয়ার পর উদ্ধারকৃত তরুণী মাহফুজা খাতুন সাংবাদিকদের জানায়, সে দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার কবিরাজহাট এলাকার বিজয়পুর গ্রামের মোস্তফা কামালের মেয়ে। সে এক মাস আগে লেখাপড়ার উদ্দেশ্যে ঠাকুরগাঁওয়ের খাতুনে জান্নাত কামরুন্নেছা কাওমি মহিলা মাদ্রাসার কিতাব বিভাগে ভর্তি হয়। ভর্তির পর ঈদের ছুটি কাটিয়ে কয়েকদিন আগে মাদ্রাসায় ফিরে আসে। বুধবার দিবাগত রাতে মাহফুজাকে একদল যুবক ব্ল্যাকমেইল করে এবং কৌশলে পার্শ্ববর্তী টাঙ্গন নদীর তীরে ডেকে নিয়ে কুপ্রস্তাব দেয়। প্রস্তাবে বাজি না হলে তাকে নির্যাতন করে হত্যার উদ্দেশ্যে হাত-পা বেঁধে বস্তায় ভরে টাঙ্গন নদীতে ফেলে দেয়। কিন্তু বস্তা গড়িয়ে নদীর পানিতে না পড়ে তীরে আটকে থাকে। বৃহস্পতিবার ভোর সকালে স্থানীয়রা তাকে বস্তাবন্দি ও আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে ঠাকুরগাঁও আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি করে।

পরিবারের স্বজনদের অভিযোগ, মাহফুজাকে মাদরাসায় ভর্তির আগে তাদের গ্রামের বাড়িতে ফিরোজা নামে এক নারীকে বাসা ভাড়া দেয়ার পর ওই নারী মাহফুজার বিভিন্ন ধরনের ছবি তুলে বিভিন্ন জনের কাছে ছড়িয়ে দেয়। আর সেই ছবি নিয়ে ব্ল্যাকমেইল করার চেষ্টা চালায় একদল যুবক। তাদের হাত থেকে রক্ষা পেতে গত ১৬ জুন মাহফুজাকে ঠাকুরগাঁওয়ের খাতুনে জান্নাত কামরুন্নেছা কাওমি মহিলা মাদ্রাসায় ভর্তি করানো হয়। বুধবার রাতে একদল যুবক মাদ্রাসার এলাকায় এসে কৌশলে মাহফুজাকে ডেকে নদীর তীরে নিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে নির্যাতন চালিয়ে বস্তাবন্দি করে নদীতে ফেলে দেয়। কিন্ত অলৌকিকভাবে সে প্রাণে বেঁচে গেছে।

পরে মাদরাসার অধ্যক্ষ হজরত আলী বলেন, শিক্ষার্থীর পূর্বের ঘটনা পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়নি। জানালে আমরাও সতর্ক থাকতাম তার বিষয়ে।

এনএস//


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি