ঘুরে আসুন অনিন্দসুন্দর জাহাজমারা ও তুফানিয়া চর
প্রকাশিত : ১৮:৩৯, ৪ আগস্ট ২০২২
অনিন্দসুন্দর তুফানিয়া চর
দৃষ্টিনন্দন সমুদ্র সৈকত। বালুচরে লাল কাঁকড়াদের ছোটাছুটি। ঢেউয়ের গর্জন। বাতাসের তালে ঝাউপাতার শো শো শব্দে এক অন্যরকম অনুভূতি। সমুদ্রতটে চিকচিকে বালুতে পা ফেলা আর হঠাৎ সমুদ্রের জলরাশি ঢেউ এসে ছুঁয়ে যাওয়া। সাঁঝ বেলায় পূর্বাকাশে সমুদ্রের বুক চিরে জেগে ওঠা লাল সূর্যটা বেলা শেষে পশ্চিম আকাশে হেলে পড়ার মতো দৃশ্য যে কোনো জায়গায় দাঁড়িয়ে অবলোকন করা যায়। ভ্রমণপিয়াসুদের কাছে এ স্থানটি অতুলনীয়।
বলছিলাম পটুয়াখালী জেলার রাঙ্গাবালী উপজেলার সম্ভবনাময় পর্যটককেন্দ্র জাহাজমারা ও তুফানিয়া চরের কথা।
জাহাজমারা থেকে তুফানিয়া চরে
নয়নাভিরাম সৌন্দর্য্যে ঘেরা এ স্থানের নাম ‘জাহাজমারা’ সৈকত। এটি সাগরকন্যা খ্যাত পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার মৌডুবি ইউনিয়নের দক্ষিণ পশ্চিম কোণে বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে অবস্থিত। সম্ভাবনাময় এ পর্যটন স্থানটিতে দিনদিন পর্যটকদের ভিড় জমতে শুরু করেছে। প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন জায়গার পর্যটকদের সমাগমে ভরে ওঠে এ সৈকত।
প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সমুদ্র সৈকতের যে কোনো জায়গায় দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখার সুযোগ রয়েছে। ঢেউয়ের তালে তালে দুলতে থাকা জেলে নৌকার বহর। রয়েছে সমুদ্র উপভোগের দারুণ সুযোগ। এখানে এসে গঙ্গাস্নানে রয়েছে ভিন্ন আমেজ।
এখানে এলে দেখা মিলবে হাজারো জেলের। সাগর থেকে তুলে আনা টাটকা মাছের স্বাদও নেয়া যাবে এখান থেকে। সাগরে জেলেদের মাছ ধরার দৃশ্য। সৌন্দর্য্য পিপাসুদের অনেকেই জাহাজমারা দেখে মুগ্ধ।
খোকন ভূইয়া নামে স্থানীয় এক মৎস্য ব্যবসায়ী বলেন, প্রায় প্রতি বছরই এখানে বৌদ্ধ পূর্ণিমায় হাজার হাজার লোকের আগমণ ঘটে। এখানে নানা আয়োজনে পালিত হয় বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের সে বিশেষ দিনটি। এছাড়া ছুটির দিনে বিভিন্ন স্কুল, কলেজের শিক্ষার্থীদের এখানে ভ্রমণে আসতে দেখা যায়।
দূর থেকে সমুদ্র সৈকতের নয়নাভিরাম তটে তাকালেই চোখে পড়বে লাল কাঁকড়া। দেখলে মনে হবে যেন, লাল চাদর বিছিয়ে রাখা হয়েছে। বিশেষ করে শিশুদের কাছে এ দৃশ্য আনন্দদায়ক।
এছাড়া জাহাজমারার আরেকটি ছোট দ্বীপ, চারদিকে নদী আর মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকা সবুজ বনাঞ্চলে সৃষ্টি এ দ্বীপের নাম তুফানিয়ারচর। জাহাজমারা থেকে তুফানিয়া চরে যেতে ২০ মিনিট সময়ের ব্যবধান। শীত মৌসুমে অতিথি পাখিদের দেখা মিলবে এখানে।
এখানে রয়েছে প্রায় ৪ কিলোমিটার সমুদ্রতটজুড়ে বিশাল ঝাউবাগান। তাই অপার সম্ভাবনাময় এই স্থানটি পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠতে পারে বলে আশা করছেন স্থানীয়রা।
এখানে বেড়াতে আসা এক দর্শনার্থীর সাথে আলাপকালে বলেন, ‘আজ পরিবারের সবাই বেড়াতে এসেছি। খুব ভালো লাগলো। তবে এখানে থাকার-খাওয়ার ব্যবস্থা থাকলে আরও ভালো হতো।’
এখানে বেড়াতে আসা শিক্ষার্থী সরোয়ার বলেন, ‘জাহাজমারা আমার কাছে খুবই পছন্দের একটি জায়গা। তবে এখানে হোটেল-মোটেল না থাকায় রাত্রি যাপনের কোনো সুযোগ নেই। ছুটির দিনে এখানে প্রায়ই এসে থাকি রাত্রিকালীন সময় এখানে কাটাতে পারলে রাতের সমুদ্র সৈকতও ভিন্নভাবে উপভোগ করা যেত।’
রাঙ্গাবালী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ডা. জহির উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, দেশের তৃতীয় সমুদ্রবন্দর পায়রার খুব কাছেই রয়েছে জাহাজমারা ও তুফানিয়ার চর। এখানে দিনদিন যে পরিমাণে দর্শনার্থীর ভিড় জমতে শুরু করেছে, খুব অল্প সময়ে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠতে পারে বলে আমাদের বিশ্বাস।
তুফানিয়া চর যেতে যেতে যা দেখবেন
জাহাজমারা স্লুইসগেট থেকে ছোট খালের মধ্য দিয়ে ছোট ট্রলারযোগে তুফানিয়ার চরে যেতে হবে। যেতে যেতে খালের দু’পাশে দেখা মিলবে নানা ধরনের পাখ-পাখালি আর বন্য প্রাণীর। পাতি তিসাবাজ, সাদা কলার্ড মাছরাঙা, পানকৌড়ি, সাদাবক, খেকশিয়ালসহ বিভিন্ন বন্য প্রাণী। সাদাবক, জল কবুতরে সেজে আছে তুফানিয়ার সমুদ্র সৈকত।
এছাড়াও বনের মধ্যে নানা ধরনের পাখির কলকাকলিতে সরব হয়ে ওঠে তুফানিয়ার চরের ঝাউবাগান।
যেভাবে যেতে হবে
জাহাজমারা যাতায়াতের একাধিক পথ রয়েছে। সন্ধ্যা ৬টায় ঢাকার সদরঘাট থেকে একটি লঞ্চ রাঙ্গাবালীর উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে। ওইসব লঞ্চে ডেকের ভাড়া ৪০০-৫০০ টাকা। সিঙ্গেল কেবিন ভাড়া ১০০০-১২০০ টাকা এবং ডাবল কেবিন ভাড়া ১৬০০-১৮০০ টাকা।
এছাড়া ভিআইপি কেবিনও রয়েছে লঞ্চে। ঢাকা থেকে সন্ধ্যা ৬টায় লঞ্চে যাত্রা শুরু করলে পরদিন সকাল ৭টায় কোড়ালিয়া লঞ্চঘাট পৌঁছে যাবেন। সেখান থেকে মোটরসাইকেলযোগে ২০ মিনিটের মধ্যে রাঙ্গাবালী খালগোড়া বাজার খেয়াঘাটে পৌঁছে যাবেন।
থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা
উপজেলা সদর রাঙ্গাবালীতে আবাসিক হোটেল রয়েছে এবং সঙ্গে রয়েছে খাওয়ার ব্যবস্থাও। এখান থেকে সকালে জাহাজমারা গিয়ে দিনব্যাপী হৈ-হুল্লোড়ে কাটিয়ে সন্ধ্যাবেলা ফিরে আসা যায় উপজেলা সদরে।
এনএস//
আরও পড়ুন