ঢাকা, মঙ্গলবার   ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪

শার্শা-কাশিপুর সড়ক যেন মৃত্যু ফাঁদ

বেনাপোল প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ১৮:৪৪, ১১ আগস্ট ২০২২

সড়কটির একটি চিত্র

সড়কটির একটি চিত্র

যশোরের শার্শা উপজেলার বীরশ্রেষ্ট নূর মোহাম্মদের স্মৃতি বিজড়িত শার্শা কামারবাড়ি মোড় হতে কাশিপুর বাজার পর্যন্ত ২৬ কিলোমিটার সড়কটির বর্তমানে বেহাল দশা। ছোট-বড় গর্তসহ ইটের সলিং-এর কারণে দুর্ভোগের যেন শেষ নেই। বিগত কয়েক বছর ধরে এমন অবস্থার সৃষ্টি হলেও দ্রুত ব্যবস্থার কোনো উদ্যোগ নেই কারোরই। 

ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন স্থানীয় এলাকাবাসী ও এই সড়কে চলাচলকারী কয়েক লক্ষাধিক মানুষ। 

সড়কটির অবস্থা এতটাই নাজুক যে, প্রতিনিয়ত দূর্ঘটনার কারনে বর্তমান সড়কটি মৃত্যু ফাঁদে পরিণত হয়েছে। 

সরেজমিনে তথ্য অনুসন্ধানে দেখা যায়, শার্শা উপজেলার সঙ্গে নিজামপুর, ডিহি, লক্ষ্মণপুর ইউনিয়নসহ পার্শ্ববর্তী উপজেলার বেশ কয়েকটি এলাকার মানুষের চলাচলের একমাত্র সড়ক এটি। ২৬ কিলোমিটার ব্যাপ্তি এই সড়কটি দিয়ে বীরশ্রেষ্ট নূর মোহাম্মদ সরকারি কলেজসহ দুটি কলেজ ও বেশ কয়েকটি স্কুলের শিক্ষার্থী, চাকুরিজীবী, কৃষক, ব্যবসায়ীসহ সর্বস্তরের মানুষ চলাচল করে।

দীর্ঘদিন ধরে সড়কটি সংস্কার না করায় কার্পেটিং উঠে গিয়ে বড় বড় খানাখন্দে পরিণত হয়েছে অনেক আগেই। এরপর সড়কটির খানাখন্দগুলো বন্ধ করতে ইটের সলিং করে দেয়া হয়। এর ফলে দুর্ঘটনার সংখ্যা আরো বেড়ে যায়। ইটের সলিংগুলোও এখন নষ্টের পথে। ফলে চরম বিপদ ও ভোগান্তির যেন শেষ নেই। 

হালকা বৃষ্টিতে পণ্যবাহী ছোট বড় যানবাহন খাদে আটকে গিয়ে দীর্ঘ সময় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হওয়ায় বিপাকে পড়ছেন বিভিন্নস্থানে কাজে কর্মে যাওয়া সাধারণ মানুষ, শিক্ষার্থী এবং উপজেলা ও জেলা শহরে চিকিৎসা নিতে যাওয়া রোগীরা।

প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনায় পড়ে বিকল হচ্ছে ছোট বড় যানবাহন। রাস্তায় ওই সকল খানা-খন্দ গর্তের পানি এবং কাঁদা ছিটকে পথচারী, শিক্ষার্থী ও দোকানে বসা জনসাধারণকে নাস্তানাবুদ হতে হচ্ছে। সেই সাথে মোটরসাইকেল, মোটরভ্যান, ইজিবাইক এবং থ্রি-হুইলার খাদে উল্টে ও কাঁদায় স্লিপ কেটে বড় দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে এমন বেহাল সড়ক পরিলক্ষিত হলেও সংস্কারে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যাচ্ছে না।

সরেজমিনে দেখা যায়, শার্শা-কাশিপুর সড়কের স্বরূপদহ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পিছনে কবরস্থানের পাশে, গোড়পাড়া কুমার বাড়ি ছাড়িয়ে, গোড়পাড়া উত্তরপাড়া বনমান্দার মোড় সাইনদ্দির বাড়ি, গোড়পাড়া মোল্লা বাড়ি মসজিদ, তেবাড়িয়া ইউনুচের বাড়ি, দুদু মিয়ার রাইচ মিল, সরকারি বীর শ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ কলেজ গেট, শাড়াতলা বাজারসহ বিভিন্ন স্থানে পাকা রাস্তার বর্তমান অবস্থা খুবই খারাপ।
 
শাড়াতলা বাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ীরা বলেন, তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনে রাস্তায় প্রায় ভারী যানবাহনে দুর্ঘটনার কারণে আটকে পড়ায় ব্যবসার ক্ষতি হচ্ছে। পানি কাঁদা ছিটকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও মানুষের গায়ে লেগে চরম ক্ষতি সাধন করছে।

সরকারি বীর শ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ ডিগ্রি কলেজের একজন শিক্ষার্থী বলেন, শাড়াতলা থেকে নিজামপুর আসতে যেখানে সর্বোচ্চ ২০ মিনিটের রাস্তা, সেখানে রাস্তার বেহাল অবস্থার কারণে ৪০ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা সময় লেগে যাচ্ছে। আবার কলেজে যেতে রাস্তার অবস্থা খারাপ জানিয়ে বাড়তি ভাড়া আদায় করছে গাড়ি চালকরা।

আরো কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, দেশের উন্নয়ন হলেও শার্শার উত্তরের এই সড়কটি গত কয়েক বছরে কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। যা খুবই লজ্জাজনক বিষয়। এই সড়কের কারণে উপজেলার উত্তর শার্শার কয়েকটি ইউনিয়নের মানুষ দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে চরম হতাশায় ভুগছে।

পথচারী সোনিয়া খাতুনের দাবি, এই সড়কটি দিয়ে কোনো গর্ভবতী প্রসূতি মা কখনোই স্বাভাবিকভাবে চলাচল করতে পারেন না। অসুস্থ রোগীরা দূরের হাসপাতালে যেতে যেতেই মৃত্যুর মুখে পড়ছে। এই সড়কটি দ্রুত সংস্কার খুবই প্রয়োজন। না হলে প্রতিনিয়ত ঘটতে থাকা দুর্ঘটনার সাথে মৃত্যুর মিছিলও দীর্ঘ হতে থাকবে।

সড়কটি সংস্কার ও এর বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে শার্শা উপজেলা প্রকৌশলী এম এম মামুন হাসান বলেন, এই সড়কটি শার্শা হতে গোড়পাড়া এবং গোড়পাড়া হতে ব্যাংদাহসহ গোড়পাড়া হতে বেনাপোল পর্যন্ত মোট তিনটি সড়ক বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে ইউকেয়ার প্রকল্পের ডিপি অন্তর্ভুক্ত আছে। ড্রইং ডিজাইনের কাজ চলছে। সেটি সম্পূর্ণ হলে খুব শীঘ্রই টেন্ডার হবে এবং তার পরেই এর কাজ শুরু হবে।

এ বিষয়ে শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নারায়ণ চন্দ্র পাল বলেন, সড়কটি খুবই উন্নত ও প্রশস্তকরণ করে তৈরি হবে। যার ফলে এই সড়ক দিয়ে পার্শ্ববর্তী ঝিনাইদহ জেলার কোটচাঁদপুর, মহেশপুরসহ বিভিন্ন উপজেলায় যাতায়াতের পথ সুগম হবে। পাশাপাশি দুর্ভোগ থেকে মুক্তি এবং এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ হবে বলে মনে করছি। 

এনএস//


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি