কলাপাড়ায় জলমগ্ন ১৬ গ্রামের মানুষের ধকল কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা
প্রকাশিত : ১৮:১০, ১৭ আগস্ট ২০২২
উপকূলীয় জেলা পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় ১৬ গ্রামের মানুষ জলমগ্ন অবস্থা থেকে পুরোপুরি বের হতে পারেনি। তবে এক সপ্তাহ ধরে চলা বৈরি আবহাওয়ার কিছুটা উন্নতি হয়েছে। জারি করা সতর্ক সংকেতও নামিয়ে ফেলা হয়েছে।
গত পনের দিন ধরে উপকূলে বৈরি আবহাওয়া বিরাজ করছিল। এর মধ্যে অন্তত টানা এক সপ্তাহ ধরে দিনে ৩ থেকে ৪ ফুট জোয়ারের পানিতে ডুবে থাকে কলাপাড়া উপজেলার ১৬ গ্রামসহ পৌরশহরের বেড়িবাঁধের বাইরে বসবাসরত পরিবারগুলো।
উপজেলার ধানখালী ইউনিয়নের চালিতাবুনিয়া গ্রামের জলমগ্ন পরিবারের কৃষক আঃ ছোবাহান বলেন, “একটানা এক সপ্তা ধইরা দিনে দুইবার জোয়ারের পানিতে চুবনি (ডুবেছে) খাইছি। গতকাইল হইতে পানি ওডা বন্ধ আছে।”
একই ইউনিয়নের নিশানবাইড়য়া গ্রামের কৃষক আজাহার উদ্দিন বলেন, “জোয়ারের পানিতে এ্যাহন ঘরবাড়ি না তলাইলেও ঘরের চাউলপাত মালামাল এই কয়দিনে নষ্ট অইয়া গ্যাছে।”
এমন ভাষ্য ওই এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর সবার।
সরেজমিনে জানা যায়, সমুদ্রের কাছাকাছি আন্ধারমানিক ও রামনাবাদ নদীর বিভিন্ন স্থানের বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধ উপচে সহস্রাধিক কৃষক পরিবারের বাড়িঘর অর্ধনিমজ্জিত। এতে ওই এলাকায় বসবাসরত অন্তত ১০ হাজার মানুষের জনজীবনে দুর্ভোগ নেমে এসেছে।
গত এক সপ্তাহ যাবৎ জোয়ার ভাটায় পানি ওঠানামায় উপজেলার লালুয়া ইউনিয়নের চাড়িপাড়া ও চান্দুপাড়ার বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধ থেকে রামনাবাদ নদীর পানি প্রবেশ করে পশরবুনিয়া, চাড়িপাড়া, বুড়াজালিয়া, বড়পাঁচনং, ছোটপাঁচনং, চান্দুপাড়া, চরচান্দুপাড়া সহ ১২টি গ্রামের হাজারো কৃষক পরিবারের বাড়িঘর অর্ধনিমজ্জিত হয়।
একইভাবে উপজেলার চম্পাপুর এবং ধানখালী ইউনিয়নের দেবপুরের বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধ উপচে নদীর পানি প্রবেশ করে দেবপুর, লোন্দা, নিশানবাড়িয়াসহ চরটি গ্রামের এক হাজার কৃষকের বাড়িঘর তলিয়ে যায়। এছাড়া উপজেলার বালিয়াতলী ইউনিয়নের চরবালিয়াতলী গ্রামে বেড়িবাঁধের বাইরে এবং কলাপাড়া পৌরশহরে বেড়িবাঁধের বাইরের বসবাসরত পরিবারগুলো অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত।
বর্তমানে এসব জায়গা থেকে পানি নেমে গেলেও ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারেননি বলে দাবি সেখানকার মানুষের। অপেক্ষাকৃত বৃষ্টির প্রভাব কমেছে এবং আপাতত ঝড়োবাতাস নেই জানিয়েছেন তারা।
গত ক’দিনের অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গ্রামের পর গ্রামের রাস্তাঘাট। ভেসে গেছে পুকুর-মাছের ঘের। জোয়ারের পানিতে স্যানিটেশন ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ায় ওইসব গ্রামগুলোতে ডায়রিয়াসহ পেটের পিড়ায় আক্রান্তের ঝুঁকি রয়েছে বলেও মনে করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. চিন্ময় হাওলাদার জানান, জোয়ারের পানিতে ডুবে যাওয়া এলাকায় পানিবাহিত রোগ দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে শিশুদের ব্যাপারে বেশি সতর্ক থাকতে হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের কলাপাড়া জোনের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আরিফ হোসেন বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধগুলো মেরামত সম্পর্কে জানান, এসব বেড়িবাঁধের কাজ করতে টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে কাজ শুরু হবার কথা রয়েছে। তবে এমুহূর্তে জরুরি মেরামতের কোন পরিকল্পনা নেই বলেও জানিয়েছেন তিনি।
এএইচ
আরও পড়ুন