ঢাকা, মঙ্গলবার   ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪

বঙ্গোপসাগরে ৬ ট্রলার ডুবি, ৯৩ জেলে নিখোঁজ

কুয়াকাটা, কলাপাড়া ও রাঙ্গাবালী প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ২১:৫০, ১৯ আগস্ট ২০২২

উত্তাল সাগরের একটি দৃশ্য

উত্তাল সাগরের একটি দৃশ্য

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটি শুক্রবার নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। পায়রা সমুদ্র বন্দরে তিন নম্বর সতর্ক সংকেত বহাল রেখেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এর প্রভাবে উত্তাল রয়েছে সাগর। এসময় মাছ ধরতে যাওয়া পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী, কুয়াকাটা ও কলাপাড়ার প্রায় ১৪৭ জন জেলেসহ ৬টি ট্রলার ডুবে গেছে। যাতে ৫৪ জন উদ্ধার হলেও এখনও নিখোঁজ রয়েছেন ৯৩ জন।

একুশে টেলিভিশন অনলাইনের কুয়াকাটা ও কলাপাড়া প্রতিনিধি জানান, কুয়াকাটা সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে অন্তত ৭০ জেলেসহ ৫টি মাছধরা ট্রলার ডুবির ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে নিখোঁজ রয়েছে ১৬ জেলে, বাকীদের অন্য মাছধরা ট্রলারে উদ্ধার করা হয়েছে। 

শুক্রবার (১৯ আগস্ট) দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরের বিভিন্ন পয়েন্টে এ ট্রলার ডুবির ঘটনা ঘটে। 

ডুবে যাওয়া ট্রলারগুলো হচ্ছে- এমবি মা’মনি-৩, এফবি সাইফুল, এফবি আল মামুন, এফবি কুলসুম ও এফবি রফিক মিঝি। এর মধ্যে এফবি রফিক মিঝি ট্রলারে থাকা জেলেদের বাড়ি ভোলার হাজারীগঞ্জে। বাকি চার ট্রলারে থাকা জেলেদের বাড়ি মহিপুরে। 

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আলীপুর-কুয়াকাটা মৎস্য আড়ৎ মালিক সমিতির সভাপতি আনছার উদ্দিন মোল্লা। 

উদ্ধার হওয়া জেলেরা জানান, সাগরের অস্বাভাবিক ঢেউ এবং ঝড়ের কবলে পড়ে তাদের ট্রলারগুলো ডুবে যায়। এসময় সাগরে নিকটবর্তী থাকা অন্য ট্রলারের মাধ্যমে অন্তত ৫৪ জেলে উদ্ধার হলেও নিখোঁজ রয়েছেন ১৬ জেলে। এর মধ্যে নিখোঁজ ১৪ জন জেলে এফবি কুলসুম ট্রলারের এবং এফবি রফিক মিঝি ট্রলার ডুবে যাওয়ার সময় ওই ট্রলারের মালিক রফিক মিঝি (৬০) নিখোঁজ হন। 

এদিকে প্রচন্ড ঢেউয়ের তোড়ে এফবি মরিয়ম নামের একটি ট্রলার থেকে সাগরে পড়ে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছেন ওই ট্রলারের মাঝি এসাহাক (৪৫)। 

উদ্ধারকৃত জেলেরা কুয়াকাটা ২০ শয্যা বিশিষ্ট হাপাতাল ও মহিপুর উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র সহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

নিজামপুর কোস্টগার্ডের কন্টিজেন্ট কমান্ডার সেলিম মন্ডল জানান, সাগরে ট্রলার ডুবির খবর পেয়েছি। আমাদের টহল টিম সাগরে রয়েছে এবং উদ্ধার তৎপরতা চালাচ্ছে। এছাড়া এবিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।

আমাদের রাঙ্গাবালী প্রতিনিধি জানান, মাছ ধরতে যাওয়া পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী, কুয়াকাটা ও কলাপাড়ার অসংখ্য ট্রলার গভীর সাগর থেকে তীরে এসে আশ্রয় নিয়েছে।

তবে বিকেল পৌনে ৪টায় বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে যাওয়া উপজেলার চালিতাবুনিয়া ইউনিয়নের চরলতা গ্রামের ইদ্রিস মুন্সির মালিকানাধীন জেলে ট্রলার ১৩ জন মাঝিমাল্লাসহ ডুবে যায়। ট্রলার মালিক ইদ্রিস মুন্সির ভাই ইলিয়াস মুন্সি সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় এ তথ্য নিশ্চিত করেন। 

তিনি জানান, ট্রলারে থাকা প্রত্যেক মাঝিমাল্লা অন্য ট্রলারের সাহায্যে উদ্ধার হয়েছে। তারা সুন্দরবনে আশ্রয় নিয়েছে। তবে ডুবে যাওয়া ট্রলারের কোনো সন্ধান মেলেনি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বৈরী আবহাওয়ায় সাগর উত্তাল হওয়ার পর বৃহস্পতিবার রাত থেকে উপজেলার চরমোন্তাজ ইউনিয়নের দক্ষিণ চরমোন্তাজ গ্রামের আজহারের ১২ জন, হালিম খানের ১৪ জন, মধ্য চরমোন্তাজের খলিল মুন্সির ১৪ জন, রহম আলী মৃধার ১৩ জন, বড়বাইশদিয়া ইউনিয়নের গাইয়াপাড়া গ্রামের আলাউদ্দিন গাজীর ১৩ জন এবং চরগঙ্গা গ্রামের আজহার দস্তুরের ১১ জন মাঝিমাল্লাসহ তাদের ৬টি ট্রলার নিখোঁজ হয়। 

শুক্রবার রাত ৭টা পর্যন্ত ওইসব ট্রলার এবং মাঝিমাল্লাদের সন্ধান মেলেনি বলে নিখোঁজ জেলেদের পরিবার ও ট্রলার মালিক পক্ষ থেকে এ তথ্য জানা গেছে।  

এদিকে, মাছ ধরতে গিয়ে সাগর উত্তাল থাকায় টিকতে না পেরে উপজেলার চরমোন্তাজ স্লুইসঘাট, সোনারচর, কোড়ালিয়া, নিজকাটা, মৌডুবি, খালগোড়া, গঙ্গিপাড়াসহ উপকূলের তীরবর্তী এলাকার নিরাপদ স্থানে এসে ট্রলার নিয়ে আশ্রয় নিয়েছে অসংখ্য জেলে। 

এ ব্যাপারে রাঙ্গাবালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরুল ইসলাম মজুমদার বলেন, আমরা এ বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছি এবং কোস্টগার্ডের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলব।  

এনএস//


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি