আশুগঞ্জ খাদ্যশস্য সংরক্ষণাগার নির্মাণ কাজে ধীরগতি
প্রকাশিত : ১১:২৮, ২৩ আগস্ট ২০২২
দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদী খাদ্যশস্য সংরক্ষণাগারের নির্মাণ কাজ চলছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জের মেঘনা নদীর পাড়ে। তবে করোনা মহামারি ও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের অর্থনৈতিক সংকটের কারণে নির্ধারিত সময়ে শেষ হয়নি গুরুত্বপূর্ণ এ প্রকল্পের কাজ। ফলে তৃতীয় দফায় আগামী বছরের মে মাস পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।
তবে মেয়াদ বাড়লেও ব্যয় বাড়বে না বলে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আধুনিক খাদ্য সংরক্ষণাগার প্রকল্পের আওতায় আশুগঞ্জে স্টিল রাইস সাইলো নির্মাণের জন্য ২০১৮ সালের এপ্রিলে খাদ্য অধিদপ্তরের সাথে চুক্তি হয় তমা কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেডের। প্রকল্পের মেয়াদ ছিল ২ বছর। আর এতে ব্যয় ধরা হয় ৫৪০ কোটি ৪৫ লাখ ৪৯ হাজার ২৬৪ টাকা।
১ লাখ ৫ হাজার মেট্রিক টন ধারণক্ষমতার আধুনিক এ সাইলোটিতে ৩০টি বিন রাখা হয়েছে। একেকটি বিনে সংরক্ষণ করা যাবে সাড়ে ৩ হাজার মেট্রিন টন চাল। সবগুলো বিন স্থাপনের কাজই শেষ হয়ে গেছে। এখন অন্যান্য কিছু অবকাঠামো নির্মাণ এবং যন্ত্রপাতি স্থাপনের কাজ বাকি আছে।
সব মিলিয়ে ৪ বছরে প্রকল্পের অগ্রগতি প্রায় ৭৫ শতাংশ বলে জানিয়েছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।
স্টিল রাইস সাইলোটিতে স্বয়ংক্রিয় তাপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের মাধ্যমে আদ্রতা ও তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে দুই বছর পর্যন্ত চাল সংরক্ষণ করা যাবে। আর সংরক্ষিত চাল প্যাকেটজাত এবং বস্তাবন্দি করার জন্য ঘণ্টায় ৫০০ টন স্পিডের বেল্ট কনভেয়িং এবং চেইন কনভেয়িং ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।
তবে, সাইলোর নির্মাণযজ্ঞে প্রথম বাধা আসে করোনাকালে। সাইলোর বেশিরভাগ যন্ত্রপাতিই আমদানি করতে হয় বিদেশ থেকে। কিন্তু করোনার জন্য যন্ত্রপাতির শিপমেন্ট আটকা পড়ে। এছাড়া বিদেশ থেকে পরামর্শকরাও যথাসময়ে আসতে পারেননি। ফলে প্রায় ১ বছর কাজ বন্ধ রাখতে হয় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে।
পরবর্তীতে সীমিত পরিসরে স্বল্প সংখ্যক জনবল দিয়ে পুনরায় কাজ শুরু হয়। কিন্তু আশানুরূপ অগ্রগতি হয়নি প্রকল্পে। গত ১ বছরে কাজের অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ৩ শতাংশ। মূলত করোনা মহামারি ও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের অর্থনৈতিক সমস্যার কারণেই কাজে বিলম্ব হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক রেজাউল করিম সেখ।
এদিকে, নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত সামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধি এখন নতুন সংকটে ফেলেছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে। চুক্তি অনুযায়ী প্রকল্পের মেয়াদ বাড়লেও ব্যয় বাড়ানো যাবে না। এর ফলে এই প্রকল্পটিকে নিজেদের ‘লস প্রজেক্ট’ মনে করছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।
এ বিষয়ে তমা কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেডের প্রকল্প ব্যবস্থাপক নিজামুল ইসলাম বলেন, ‘করোনার কারণে আমরা প্রায় এক বছর কোনো কাজ করতে পারিনি। বিদেশ থেকে প্রয়োজনীয় মালামাল ও পরামর্শকরা আসতে পারেনি। এজন্য কাজ শেষ করতে বিলম্ব হয়েছে। বিদেশ থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৮০ শতাংশ মালামাল এসেছে। এখন নির্মাণ সামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধির কারণে লোকসানে পড়ে গেছি। তবে বর্ধিত মেয়াদে কাজ শেষ করতে পারব আশা করছি।’
এ ব্যাপারে আধুনিক খাদ্য সংরক্ষণাগার প্রকল্পের পরিচালক রেজাউল করিম সেখ বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে এমন দীর্ঘমেয়াদী সাইলো আর নেই। তবে সাইলোর নির্মাণ কাজ ধীরগতিতে চলেছে এটি ঠিক। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের অর্থনৈতিক কিছু সমস্যা ছিল। সম্প্রতি এগুলো সমাধান হয়েছে। দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী প্রকল্পের মেয়াদ বাড়লেও ব্যয় বাড়বে না।’
এএইচ
আরও পড়ুন