ঢাকা, রবিবার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪

স্ত্রী হত্যায় স্বামীর যাবজ্জীবন, স্বামী হত্যায় স্ত্রী খালাস

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ১৭:২২, ২৫ আগস্ট ২০২২

লক্ষ্মীপুর আদালতের একটি চিত্র

লক্ষ্মীপুর আদালতের একটি চিত্র

লক্ষ্মীপুরে এক স্ত্রীকে বিষ প্রয়োগে হত্যার দায়ে স্বামীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। অন্যদিকে এক স্বামীকে নির্যাতন করে হত্যার আরেকটি মামলায় অভিযুক্ত স্ত্রীকে বেকসুর খালাস দিয়েছে আদালত।

বৃহস্পতিবার (২৫ আগস্ট) জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. রহিবুল ইসলাম এই পৃথক দুটি রায় প্রদান করেন।

জেলা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন এই রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। 

তিনি জানান, গত ২০১৮ সালের ২৭ অক্টোবর রাতে স্ত্রী শিল্পী আক্তারকে পানির সাথে বিষ প্রয়োগে হত্যা করে স্বামী মো. হোসেন। পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদন ও সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে আদালতে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় আদালত হোসেনকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে এক বছরের কারাদণ্ড দেন। রায়ের সময় আসামি আদালতে অনুপস্থিত ছিলেন।

আদালত সূত্র জানায়, লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ ইউনিয়নের চর মনসা গ্রামের সুতারগোপ্তা এলাকার সফিক উল্যার ছেলে মো. হোসেন (৪৪) একই উপজেলার মান্দারী ইউনিয়নের যাদৈয়া গ্রামের মো. আবুল হাসেমের মেয়ে শিল্পী আক্তারকে হত্যাকাণ্ডের ঘটনার ১৫ বছর পূর্বে পারিবারিকভাবে বিয়ে করেন। তাদের ঘরে তিন মেয়ে ও এক ছেলে সন্তান রয়েছে। 

পরবর্তীতে হোসেন চট্টগ্রামে গিয়ে আরেকটি বিয়ে করেন এবং তার ১ম স্ত্রী ও সন্তানদের খোঁজ খবর নেয়া বন্ধ করে দেন। এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে পারিবারিক কলহ দেখা দেয়। ২০১৮ সালের ২৭ অক্টোবর সন্ধ্যার দিকে হোসেন তার ১ম স্ত্রী শিল্পী আক্তারকে পানির সাথে বিষ মিশিয়ে জোরপূর্বক মুখে ঢেলে দেয়। এতে তিনি বমি করে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। 

নিজেকে বাঁচাতে হোসেন তার স্ত্রীর অসুস্থতার নাটক সাজিয়ে একজন গ্রাম্য ডাক্তার আনেন এবং বাড়ি থেকে সটকে পড়েন। এ অবস্থায় বাড়ির লোকজন শিল্পীকে হাসপাতালে নেয়ার পথেই তার মৃত্যু হয়। 

পরে এ ঘটনায় শিল্পীর বাবা মো. আবুল হাশেম বাদি হয়ে জামাতা হোসেনকে আসামি করে ২৯ অক্টোবর সদর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।

এ মামলায় সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক মো. মোসলেহ উদ্দিন ২০১৯ সালের ২২ সেপ্টেম্বর আদালতে তদন্তপত্র দাখিল করেন। এতে হোসেনকে অভিযুক্ত করা হয়। তবে ঘটনার পর থেকেই পলাতক রয়েছেন আসামি।

এদিকে, একইদিনে আদালত রামগতির সবুজগ্রাম এলাকার মো. জসিম নামে এক ব্যক্তিকে হত্যার ঘটনায় তার স্ত্রী ফরিদা বেগমকে বেকসুর খালাস দেন। রায় ঘোষণার সময় তিনি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। 

জানা যায়, লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার সবুজ গ্রামে ২০১৬ সালের ৬ জুন রাতে শ্বশুর শাহজাহান বকসির বাড়িতে খুন হন জসিম উদ্দিন নামে এক ব্যক্তি। তার মৃতদেহ একটি গাছের সাথে ঝুলিয়ে রাখে শ্বশুর বাড়ির লোকজন এবং ঘটনার পর জসিম আত্মহত্যা করেছে বলে প্রচার করে তারা। 

নিহত জসিম উদ্দিন একই উপজেলার চর আফজল গ্রামের মৃত আবুল কাশেমের ছেলে। সে পেশায় একজন জেলে ছিল।

এ ঘটনায় জসিমের ছোট ভাই মো. অহিদুর রহমান বাদি হয়ে রামগতি থানায় প্রথমে অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করেন। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে জসিমকে কিল, ঘুষি ও লাথি দিয়ে বুকে ও পেটে মারাত্মক আঘাতের কারণে তার পাঁজরের ৯টি হাঁড় ভেঙে গেছে এবং শ্বাসরোধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। 

পরে অহিদুর রহমান তার ভাবী ফরিদা বেগমসহ অজ্ঞাত ৩-৪ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। তার ভাবীর স্বভাব চরিত্র ভালো নয় এবং আর্থিক অনটনের কারণে দাম্পত্য কলহের জেরে ফরিদা বেগম তার স্বামীকে হত্যা করেছেন বলে অভিযোগ আনা হয়। 

ঘটনার দুই মাস পর ৭ আগস্ট ফরিদাকে পুলিশ গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায়। এরপর সে জামিনে মুক্তি পায়। 

২০১৭ সালের ৫ মে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রামগতি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ মঈন উদ্দিন জসিমের স্ত্রী ফরিদা বেগমকে অভিযুক্ত করে আদালতে তদন্ত প্রতিবদেন দাখিল করেন। আদালত তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা ও ফরিদা বেগমের বিরুদ্ধে অভিযোগ সাক্ষ্য প্রমাণে প্রমাণিত না হওয়ায় তাকে বেকসুর খালাস দেন।

এনএস//


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি