ঢাকা, সোমবার   ১১ নভেম্বর ২০২৪

মা নেই, অনিশ্চিত চার শিশুর জীবন

বাগেরহাট প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ১৫:২০, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২২ | আপডেট: ১৫:২৯, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২২

চারদিকে পানি, মাঝখানে টিনের ছাপড়া, কাঠ ও পলিথিনের বেড়ার ছোট ঘর। ঘরের মধ্যে একটি মাত্র খাট। খাটে বসে তিন বছরের এক শিশু নিজ হাতে ভাত খাচ্ছে। পেপে ও আলুর ঝোল দিয়ে মাখানো ভাত নিজে খাওয়ার পাশাপাশি ১১ মাস বয়সী এক শিশুর গালে তুলে দিচ্ছে। তার পাশে রয়েছে ৬ বছর ও ১১ বছর বয়সী আরও দুই শিশু। মা হারা চার শিশুর পাশে নির্বাক বসে আছেন ৩৬ বছর বয়সী যুবক। 

শনিবার (১০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বাগেরহাট জেলার চিতলমারি উপজেলার রুইয়ারকুল গ্রামের সুদাশ ব্রক্ষ্মার বাড়িতে এই দৃশ্য দেখা যায়। মা হারা চার শিশুর প্রতিদিনের দৃশ্য প্রায় একই রকম।

খোজ নিয়ে জানা যায়, রুইয়ারকুল এলাকার শান্তিরঞ্জন ব্রক্ষ্মা‘র ছেলে সুদাশ ব্রক্ষ্মা ১৩ বছর আগে পার্শ্ববর্তী গ্রামের রাজেশ্বর বিশ্বাসের মেয়ে ঝর্ণা বিশ্বাসকে বিয়ে করেন। দিন মজুর হলেও, স্ত্রী সন্তানকে নিয়ে শান্তিতে কাটছিল সুদাশ বিশ্বাসের দিন। ১৩ বছরে তিন সন্তানের বাবা-মা হন সুদাশ-ঝর্না দম্পতি। বড় সন্তান সজল ব্রক্ষ্মা‘র বয়স ১১, পরের জন সর্নালী ব্রক্ষ্মা‘র ৭, তার পরে সকাল ব্রক্ষ্মা‘র বয়স ৩ বছর এবং সব থেকে ছোট সুমি ব্রক্ষ্মের বয়স ১১ মাস। দূরারোগ্য ব্যধি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে চার সন্তান ও স্বামী সুদাশকে রেখে মাস দেড়েক আগে মারা যায় ঝর্ণা বিশ্বাস। ছন্নছাড়া হয়ে যায় সুদাস ও তার সন্তানদের জীবন। স্ত্রী না থাকায় শিশু বাচ্চাদেরে ফেলে ঠিকমত কাজেও যেতে পারেন না তিনি। খেয়ে না খেয়ে দিন যায় তাদের। এই অবস্থায় ছোট চার শিশুকে নিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছেন দিন মজুর সুদাশ ব্রক্ষ্মা।

সুদাশের বড় ছেলে ৫ম শ্রেণিতে পড়ুয়া সজল ব্রক্ষ্মা বলেন, “সকালে উঠে ভাই-বোনদের জন্য রান্না করি। এর সঙ্গে তাদের খাওয়ানো গোসল করানোসহ নানা কাজ করতে করেত দিন যায় আমার। ক্লাস ফাইবে পড়তাম, মা মারা যাওয়ার পর আর স্কুলে যেতে পারি না। আমি স্কুলে গেলে ছোট ভাইবোনদের কি হবে!”

সজলের বোন প্রথম শ্রেনিতে পড়ুয়া সর্নালী ব্রক্ষ্মা বলেন, “মা মারা যাওয়ার পরে ছোট বোন সুমি আমার কাছেই থাকে। আমার কাছ থেকে মোটেও যেতে চায় না। থালা-বাটি ধোয়া ও অন্যান্য কাজ করার সময়ও সে আমার পাশে থাকে। মা তো আর আমাদের মাঝে নেই, কি করব আমরা?”

সুদাশের প্রতিবেশী পুতুল বিশ্বাস বলেন, “ঝর্না দি অনেক ভাল ছিলেন। হঠাৎ করে মারা যাওয়ায় খুব করুণ অবস্থা তার সন্তানদের । ঘরে খাবার নেই, টাকা-পয়সাও নেই। আমরা কোনোরকম সাহায্যে করি। এছাড়া বাড়ির চারপাশেই পানি, কখন কি ঘটে।”

স্থানীয় সুকুমার ব্রক্ষ্মা জানান, খুবই অসহায় একটা মানুষ সুদাশ। স্ত্রী মারা যাওয়ার পরে আরও বেশি সংকটে পড়েছে। ধার-দেনা হয়ে চিকিৎসা করিয়েও বাঁচাতে পারেনি স্ত্রীকে। এখন চার সন্তানকে নিয়ে কিভাবে বাঁচবে জানিনা। তবে সরকারি ভাবে এই সন্তানদের দেখভালের দায়িত্ব নিলে তারা বেচে থাকতে পারবে হয়ত।

এ প্রসঙ্গে সুদাশ ব্রক্ষ্মা বলেন, “তিন শতক জায়গার উপর আমার বাড়ি। বাড়ির চারপাশে অন্য লোকের মাছের ঘের। স্ত্রী মারা যাওয়ার পরে তেমন কাজে যেতে পারি না। কারণ আমি কাজে গেলে বাচ্চাদের দেখবে কে। স্ত্রী মারা যাওয়ার ৪৫ দিনে ১০দিনও কাজ করতে পারিনি। তার চিকিৎসা করাতে বেশ ঋণও হয়েছি। এখন খুবই খারাপ অবস্থা। যদি সরকার আমাকে একটু সহযোগিতা করত তাহলে বাচ্চাদের নিয়ে বেচে থাকতে পারতাম।”

একই বিষয়ে চিতলমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইয়েদা ফয়জুন্নেছা জানান, পরিবারটিরকে খাদ্য এবং শিশুদের জন্য দুধ কিনে দেওয়া হয়েছে। খুব দ্রুত তাদের ভিজিডি কার্ড করে দেওয়া হবে। 

এছাড়া পরিবারটিকে প্রতিষ্ঠিত করতে নিয়মের মধ্যে থেকে যেসব সহযোগিতা করা যায়, তা করার আশ্বাস দেন উপজেলার এই শীর্ষ কর্মকর্তা।

আরএমএ
 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি