উদ্বেগ-উৎকন্ঠায় পরীক্ষা দিলেন ঘুমধুমের ৪১৬ শিক্ষার্থী
প্রকাশিত : ১৪:১২, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২২
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি তুমব্রু সীমান্তে উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে আতঙ্ক ও উদ্বেগ নিয়ে এসএসসি পরীক্ষা দিলেন ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয়ের ৪১৬ পরিক্ষার্থী।
শনিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সকালে ঘুমধুমের উচ্চ বিদ্যালয়ের পরীক্ষার্থীদের বাসে করে কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার কুতুপালং উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে নিয়ে আসা হয়। তাদের পরীক্ষা সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
মিয়ানমার সীমান্তে আতঙ্কজনক পরিস্থিতির কারণে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুমের এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্র কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালংয়ে নেওয়া হয়। এরই অংশ হিসাবে আজ শনিবার বেলা ১১টার দিকে পরীক্ষায় অংশ নেন শিক্ষার্থীরা।
ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয়ের ৪১৯ জন পরীক্ষার্থী থাকলেও পরীক্ষায় অংশ নেন ৪১৬ শিক্ষার্থী। এর আগে কুতুপালং উচ্চ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সব ধরণের প্রস্তুতি নেয়।
উখিয়ার কুতুপালং ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মো: হেলাল উদ্দিন জানান, মিয়ানমারের উদ্ভুত পরিস্থিতিতে রাতে খবর আসে ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এসএসসি পরীক্ষা দিবে উখিয়া কুতুপালং উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে। এ কারণে রাতভর পরীক্ষা কেন্দ্রের সিট থেকে শুরু করে যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়। ফলে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা দিতে কোন ধরনের সমস্যা হয়নি।
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: ইমরান হোছাইন সজীব জানান, নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয়ের ৪১৬ জন শিক্ষার্থী কুতুপালং উচ্চ বিদ্যালয় পরীক্ষা কেন্দ্রে পরীক্ষা দিয়েছে। এতে কোন ধরনের সমস্যা হয়নি। সকাল থেকে পরীক্ষা কেন্দ্রে পর্যাপ্ত পরিমাণ পুলিশ মোতায়েন করা হয়। যার কারণে নিরাপত্তা ও শান্তিপূর্ণভাবে পরীক্ষার্থীরা অংশ নেয়।
কক্সবাজার জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো: নাসির উদ্দিন জানান, স্বাভাবিকভাবে একস্থান থেকে অন্যস্থানে পরীক্ষা দিতে আসলে অনেকটা মাথায় টেনশন কাজ করে। তাই পরীক্ষা শেষে এসব শিক্ষার্থীদের কাউন্সিলিংয়ের মাধ্যমে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দূর করার চেষ্টা করা হয়েছে। আশা করি, আগামী সব পরীক্ষা নিয়মানুযায়ী অনুষ্ঠিত হবে।
এদিকে, এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক শফিউল আলম বলেন, “সীমান্ত পরিস্থিতি এখনও থমথমে। আমরা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় রয়েছি। অনেকেই বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে সন্তানদের অন্যত্র পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ দেওয়ায় আমরা খুবই আনন্দিত।”
একই কথা বললেন আরেক অভিভাবক হোসনে জয়নাব জানান, প্রথমে সন্তানেরা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় থাকলেও পরীক্ষা দিয়েছে খুব শান্তিপূর্ণভাবে। এতে কোনো সমস্যা হয়নি।
গত একমাস ধরে মিয়ানমারের রাখাইনে আরকান আর্মি ও সেদেশের সেনাবাহিনীর সাথে গোলাগুলি চলছে। এই সংঘর্ষের ঘটনায় বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম সীমান্তের উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে। শুক্রবার ঘুমধুম কোনারপাড়া নোম্যান্স ল্যান্ডে মর্টারশেল নিক্ষেপে এক রোহিঙ্গা নিহত ও ৬ জন আহতের হওয়ার পর সীমান্তে নতুন করে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
সীমান্তের উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে যে কোনো মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে ঘুমধুমের এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রটি সরিয়ে নিকটবর্তী কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। এতে শিক্ষার্থীরা যাতে নিরাপদে নির্বিঘ্নে পরীক্ষা দিতে পারে সে ব্যবস্থা নেয় প্রশাসন।
উল্লেখ, শুক্রবার রাত ৮টার দিকে মিয়ানমার থেকে ছোড়া মর্টারশেল এসে পড়েছে সীমান্তের নো-ম্যান্স ল্যান্ডে। এঘটনায় নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড কোনারপাড়া এলাকায়সহ পুরো সীমান্ত এলাকা থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
এএইচ
আরও পড়ুন