ঢাকা, শুক্রবার   ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪

অগ্নিদগ্ধ স্ত্রীর মৃত্যু-স্বামী আশঙ্কাজনক, ঘটনা ‘রহস্যজনক’

নওগাঁ প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ১৮:৫৫, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২২

নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলার আমদাদপুর কমলাবাড়ি গ্রামে দুর্বৃত্তদের ছোড়া আগুনে দগ্ধ দম্পতির মধ্যে বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে স্ত্রী হালিমা খাতুনের (২০) মৃত্যু হয়েছে। রামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন স্বামী রিপন মিয়ার (২৪) অবস্থাও আশঙ্কাজনক।

দগ্ধ রিপন মিয়ার শ্বাসনালীসহ শরীরের ৬৫ শতাংশ পুড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। এদিকে, এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে জনমনে ও প্রশাসনে। 

চিকিৎসাধীন রিপন মিয়া বলেন, দুর্বৃত্তদের ছোড়া পেট্রোলের আগুনে প্রথমে আমার স্ত্রী দগ্ধ হয়। তাকে বাঁচাতে গিয়ে আমিও দগ্ধ হই। 

তবে জানালা দিয়ে ঘরে পেট্রোল ছুড়ে মারার বা নাশকতার কোনও আলামত পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে থানা পুলিশ। ধারণা করা হচ্ছে, স্বামী-স্ত্রীর দাম্পত্য কলহ থেকেই স্ত্রী নিজেই শরীরে আগুন দিয়ে থাকতে পারেন। আবার মশার কয়েল থেকেও এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটতে পারে বলে ধারণা প্রতিবেশীদের।

রহস্যময় এই ঘটনার পর বুধবার সকালে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

অগ্নিদগ্ধ দম্পতির স্বজন ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বুধবার রাত ১০টার দিকে ঘরের বাইরে থেকে জানালা দিয়ে দুর্বৃত্তের ছুড়ে দেয়া আগুনে প্রথমে গৃহবধূ হালিমার শরীরে আগুন ধরে। এ সময় তাকে বাঁচাতে গিয়ে তার স্বামী রিপন দগ্ধ হন। রাতেই দগ্ধদের উদ্ধার করে পত্নীতলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।

পত্নীতলা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. খালিদ সাইফুল্লাহ বলেন, ‘গতকাল রাত ১১টার দিকে ওই দম্পতিকে হাসপাতালে নেয়া হয়। দুজনের অবস্থাই আশঙ্কাজনক ছিল। অগ্নিদগ্ধ রোগীর মধ্যে হালিমার শরীরের ৮০ শতাংশের বেশি পুড়ে গেছে এবং রিপনের প্রায় ৬৫ শতাংশ পুড়ে গেছে। দুজনেরই শ্বাসনালী দগ্ধ হয়েছে। আমরা তাদেরকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তৎক্ষণাৎ রাজশাহী মেডিকেল কলেজ বার্ন ইউনিটে রেফার্ড করে দেই। রাতেই তাদের রামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

অগ্নিদগ্ধ রিপনের ফুফাতো ভাই শাহিনুর রহমান জানান, রামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হালিমার শারীরিক অবস্থা অবনতি হলে তাকে ঢাকায় রের্ফাড করা হয়। ঢাকায় নেয়ার পথে বৃহস্পতিবার দুপুর ১টার দিকে রাজশাহী-নাটোর সড়কের বানেশ্বর এলাকায় তার মৃত্যু হয়। রিপনের অবস্থাও আশঙ্কাজনক। তিনি বর্তমানে রামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন। 

শাহিনুর রহমানের অভিযোগ, পত্নীতলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়ার পরেও কিছু সময় পর্যন্ত রিপন কথা বলতে পারছিলেন। ওই সময় তিনি জানান, ঘরে আগুন ধরার সময় তারা জেগেছিলেন। রাত ১০টার দিকে তার স্ত্রী ঘরের জানালার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। এ সময় ঘরের জানালা দিয়ে বাইরে থেকে কে বা কারা তার শরীরে পেট্রোল ছুড়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। তখন রিপন স্ত্রীর শরীরের আগুন নেভাতে গেলে তার শরীরেও আগুন ধরে যায়। পরে তাদের চিৎকার শুনে স্থানীয়রা তাদেরকে উদ্ধার করে পত্নীতলা হাসপাতালে ভর্তি করান।’

শত্রুতাবশতঃ কেউ এটা করে থাকতে পারে। তদন্ত করে প্রকৃত অপরাধীদের শনাক্ত করে তাদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তিনি।

এ ব্যাপারে রিপনের প্রতিবেশী সামাদুল ইসলাম বলেন, আমি বাইরে বের হয়ে দেখি ঘরে আগুন। রিপন ও তার স্ত্রী হালিমা- কেউই ঘরের ভিতরে ছিলো না। ঘরের আগুন নিভিয়ে পাশেই স্কুলের ওখানে দেখি অনেক লোকজন। সেখানে গিয়ে তাদের উদ্ধার করে নজিপুর হাসপাতালে নিলে ডাক্তাররা তাদেরকে রাজশাহীতে পাঠায়। 

সামাদুল ইসলাম বলেন, জানালা দিয়ে আগুন দেয়ার কোনও পরিবেশ নেই। জানালা দিয়ে কেউ যদি পেট্রোল দেবার পর আগুন দিতো, তাহলে জানালার সাথে লাগানো শোবার খাট (চৌকি) ও আসবাবপত্র ছিলো- সেগুলোতেও আগুন লাগতো। কারেন্টের লাইন ও ঘরের মধ্যে ব্যাটারী ছিলো, জামাকাপড় ছিলো- সেগুলোও অক্ষত আছে। 

তিনি বলেন, আমার কাছে মনে হচ্ছে, স্বামী-স্ত্রীর দাম্পত্য কলহের জের ধরে হালিমা নিজের শরীরে আগুন দিলে স্বামী রিপন তাকে উদ্ধার করতে গেলে এমন ঘটনা ঘটে। 

সামাদুল আরও বলেন, গতকাল রাতে জানতে পারি- তারা রাতের খাবার খেয়ে শুয়েছিল। ঠিক সেই সময় এই ঘটনা ঘটে। আমরা নজিপুর হাসপাতাল থেকে এসে দেখি রান্না করা খাবার ঘরের ভিতর যেমন ভাবে ছিলো, ঠিক তেমন ভাবেই আছে।

এ ব্যাপারে পত্নীতলা থানার ওসি শামসুল আলম শাহ বলেন, এই ঘটনা জানার সাথে সাথেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে । তবে এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কেউ কোনও অভিযোগ দেয়নি। এরপরেও বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে দেখা হচ্ছে।

নওগাঁর পত্নীতলা সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আফতাব উদ্দিন বলেন, ‘গতকাল অগ্নিদগ্ধ রিপনের বক্তব্যের সঙ্গে ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর কোনও মিল পাওয়া যায়নি। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এই ঘটনাটিকে আমাদের কাছে নাশকতা কর্মকাণ্ড বলে মনে হয়নি। ধারণা করা হচ্ছে, মশার কয়েল থেকে সূত্রপাত হওয়া আগুনে তারা দগ্ধ হতে পারেন। আবার অন্য কোনও কারণও থাকতে পারে। তবে যাই হোক না কেন, বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে প্রকৃত ঘটনা জানার চেষ্টা চলছে।

এনএস//


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি