উপজেলা চেয়ারম্যানের পিটুনিতে ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যু
প্রকাশিত : ১৬:৪৩, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২ | আপডেট: ১৭:৩৫, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২
নিহত জামিউল আলীম জীবন
নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদের পিটুনির শিকার ছাত্রলীগ নেতা জামিউল আলীম জীবনের মৃত্যু হয়েছে।
শুক্রবার (২৩ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১টা ২০ মিনিটে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয় বলে জানান হাসপাতালের পরিচালিক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল ডা. শামীম ইয়াজদানি।
ডা. শামীম ইয়াজদানি জানান, গত সোমবার (১৯ সেপ্টম্বর) রাতে জীবনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর তাকে আইসিইউতে নেয়া হয়। সেখাতে তাকে লাইভ সাপর্টে রাখা হয়েছিল। শুক্রবার দুপুর ১টা ২০ মিনিটে তিনি মারা যান।
নিহত জামিউল আলীম জীবন নলডাঙ্গা উপজেলার রামশাকাজিপুর গ্রামের ফরহাদ হোসেনের ছেলে। তিনি নলডাঙ্গা ডিগ্রী কলেজের ছাত্র এবং উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক পদে ছিলেন।
হাসপাতালে জীবনের চাচা উপজেলা অওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও কলেজ শিক্ষক এস এম ফিরোজ জানান, গত ১৮ সেপ্টেম্বর রাতে নলডাঙ্গা উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদের বিরুদ্ধে মসজিদের মাইক চুরির সালিশে পক্ষপাতিত্ব এবং দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক জামিউল আলীম জীবন।
এর জের ধরে পরের দিন ১৯ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ৭টার দিকে নলডাঙ্গা উপজেলার রামশাকাজিপুর আমতলী বাজারে জীবনকে লোহার রড ও লাঠি দিয়ে বেধড়ক পেটান উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদ ও তার দুই ভাইসহ ৪/৫ জন। এ সময় বাধা দেয়ায় জীবনের বাবা ফরহাদ হোসেনকেও পেটানো হয়।
পরে আহতদের উদ্ধার করে রাতেই রাজশাহী মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরের পরদিন ফরহাদ হোসেনকে ছাড়পত্র দেন চিকিৎসকরা। তবে জীবনকে পাঠানো হয় আইসিউতে।
এসএম ফিরোজ বলেন, আইসিইউতে লাইভ সাপোর্টে থাকা আমার ভাতিজা জামিউল আলীম জীবনকে বুধবার সকালে অপারেশন থিয়েটারে নেয়া হয়। অপারেশন থিয়েটারে নেয়ার পর চিকিৎসকরা মৌখিকভাবে জানান জীবন মারা গেছে। কিন্তু হঠাৎ করেই তাকে আবারও আইসিইউতে নেয়া হয় এবং লাইভ সাপোর্ট দেয়া হয়। পরে আমরা আইসিইউ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও কোনও সদুত্তর পাইনি। তবে আমাদের জানানো হয়, জীবন জীবিত থাকায় তাকে লাইভ সাপোর্টে রাখা হয়েছে। আরও ৭২ ঘণ্টা লাইভ সাপোর্টে থাকবে। এ ধরনের নাটক শেষে আজ শুক্রবার দুপুরে আমার ভাতিজার জীবনাবসানের সংবাদটি নিশ্চিত করা হয়েছে। এখন চলছে ময়নাতদন্তের কার্যক্রম। ময়নাতদন্ত শেষে রাজপাড়া থানার মাধ্যমে পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হবে বলে জেনেছি। ময়না তদন্ত শেষে আরও কোনও নাটকের অবতারনা হতে পারে বলে শঙ্কায় রয়েছি।
এদিকে, গত মঙ্গলবার জীবনের মৃত্যুর সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে নিহতের পরিবারে শুরু হয় শোকের মাতম। পরদিন পরিবারের পক্ষ থেকে গণমাধ্যম কর্মীদেরও জানানো হয় জীবনের মৃত্যুর সংবাদ। এতে বেশ কিছু গণমাধ্যমে জীবনের মৃত্যুর খবর প্রচার বা প্রকাশিত হয়। মঙ্গলবার দিনভর জীবনের মৃত্যুর সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে এলাকাবাসীসহ উপজেলা আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতা কর্মীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। তারা চেয়ারম্যান আসাদকে গ্রেফতার ও তার বিচারের দাবীতে নলডাঙ্গা উপজেলা সদরে বিক্ষোভ সমাবেশ করে।
অন্যদিকে, মঙ্গলবার দুপুরেই জীবনের মা জাহানারা বেগম বাদী হয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদ ও তার দুই ভাইসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। ওই মামলা দায়েরের পরদিন পুলিশ মামলার আসামি উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদের ভাই আলিম আল রাজীকে গ্রেপ্তার করে।
এদিকে ৪ দিন পর জীবনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর স্বজনসহ প্রিয়জনরা নিহত জীবনের বাড়ি রামশার কাজীপুর আমতলিতে ভিড় জমিয়েছেন।
উপজেলা চেয়ারম্যানের পিটুনীতে আহত হয়ে রামেক হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে থাকা জীবনের মৃত্যুর খবরের সত্যতা নিশ্চিত করে নলডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শফিকুল ইসলাম জানান, এলাকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। কোনও ধরনের বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে পুলিশ সতর্ক রয়েছে।
এনএস//
আরও পড়ুন