রহিমা ‘নাটক’র অবসান: কী হবে স্বামীসহ জেলবন্দিদের?
প্রকাশিত : ১৩:১২, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২২
মা রহিমা বেগম ও মেয়ে মরিয়ম মান্নান
অবশেষ অবসান হলো রহিমা অপহরণ ও লাশ উদ্ধার নাটকের। প্রায় এক মাস ধরে স্বেচ্ছায় নিখোঁজ থাকা রহিমা বেগমকে জীবিত উদ্ধার করেছে পুলিশ। কিন্তু তার নিখোঁজ নাটকে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে মেয়ে মরিয়ম মান্নানের দায়েরকৃত মামলায় জেলে বন্দি থাকাদের কি হবে?
জানা গেছে, মিথ্যা ওই মামলায় খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) প্রধান প্রকৌশল কার্যালয়ের সহকারী প্রকৌশলী মো. গোলাম কিবরিয়া, নিখোঁজের দ্বিতীয় স্বামী হেলাল হাওলাদার, দৌলতপুর মহেশ্বরপশা বণিকপাড়া এলাকার মহিউদ্দিন, পলাশ ও জুয়েল এবং হেলাল শরীফকে গ্রেফতার করে পুলিশ। যারা এখন কারাগারে।
রহিমা বেগম উদ্ধার হওয়ার পর গ্রেফতারকৃতদের পরিবারের দাবি, জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে পরিকল্পিতভাবে আত্মগোপন করেছিলেন রহিমা। বিষয়টি জানতেন তার মেয়ে মরিয়ম মান্নানসহ পরিবারের সদস্যরা।
রহিমা বেগমকে উদ্ধারের খবর পেয়ে রাতেই খুলনার দৌলতপুর থানায় ছুটে যান এ মামলায় আটক রফিকুল আলম পলাশ ও নুরুল আলম জুয়েলের বাবা আনসার উদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেন, তার ছোট ছেলে রফিকুল আলম পলাশ চাকরি করে এবং বড় ছেলে নুরুল আলম জুয়েল মুদি দোকানি। তার দুই ছেলেকে রহিমাকে কথিত অপহরণের মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা করা হয়েছে। তারা হয়রানির শিকার হয়েছেন।
তিনি জানান, তাদের সঙ্গে জমির সীমানা নিয়ে মতবিরোধ থাকায় মামলা দিয়ে হয়রানি ও সম্মানহানি করা হয়েছে। রহিমা বেগম ও তার সন্তানেরা কেন এই অপহরণের নাটক সাজালো, সে ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান তিনি।
রোববার (২৫ সেপ্টেম্বর) সকালে এ মামলায় আটক ফুলবাড়ি গেট এলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী হেলাল শরীফের স্ত্রী মনিরা আক্তার গণমাধ্যমকে বলেন, ২৮ দিন ধরে বিনা অপরাধে জেল খাটছেন আমার স্বামী। আগস্টের ৩০ তারিখে আমার স্বামী আটক হন, আর সেপ্টেম্বরের ৬ তারিখে আমার মেয়ে হয়। অক্টোবরে আমার বাচ্চার ডেলিভারির তারিখ ছিল। কিন্তু স্বামী আটক হওয়ার পর আমি অসুস্থ হয়ে পড়লে আগেই সিজার করা হলে মেয়ের জন্ম হয়।
তিনি আরও বলেন, এ ধরনের পরিস্থিতিতেও আমি আমার স্বামীকে কাছে পাইনি। বিনা অপরাধে জেল খাটছেন তিনি। এতে আমাদের হয়রানি, অর্থদণ্ড, মানহানি হয়েছে।
এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নিবেন জানিয়ে মনিরা আক্তার বলেন, আমরা নিশ্চিত ছিলাম যে, আটককৃতরা কেউ এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত না। আমার স্বামী বের হলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেবো। আমরা আশা করছি, দ্রুত আমার স্বামী ছাড়া পাবে।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট ও খুলনা জজকোর্টের আইনজীবী মো. মাছুম বিল্লাহ সংবাদমাধ্যমকে বলেন, যেহেতু রহিমা বেগম স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে ছিলেন, সে কারণে তার নিখোঁজের মামলায় যারা জেলে রয়েছেন তাদের তো কোনও সম্পৃক্ততা দেখা যাচ্ছে না। এখনও প্রমাণিত হয়নি যে, আসামিরা নিখোঁজের বিষয়ে জড়িত।
তিনি বলেন, দণ্ডবিধির ২১১ ধারা অনুযায়ী, মিথ্যা মামলা করা একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। নির্দোষ প্রমাণিত হলে মিথ্যা অভিযোগকারী বা মামলা দায়েরকারীর বিরুদ্ধে পাল্টা মামলার বিধান রয়েছে। এছাড়া মিথ্যা নালিশ আনয়নকারী সব ব্যক্তির বিরুদ্ধে ফৌজদারি কার্যবিধি ২৫০ ধারা অনুযায়ী মিথ্যা মামলায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আদেশ করা হয়েছে।
আইনজীবী মো. মাছুম বিল্লাহ আরও বলেন, যারা রহিমা বেগম নিখোঁজের ঘটনায় জেল খাটছেন তারা যদি আইনি সহযোগিতা চান, তাহলে আমি বিনিময় ছাড়াই তাদেরকে সহযোগিতা করবো।
জানা যায়, খুলনার দৌলতপুর মহেশ্বরপাশার বণিকপাড়া থেকে ২৭ আগস্ট রাত সাড়ে ১০টার দিকে নিখোঁজ হন রহিমা বেগম। ওই সময় তার দ্বিতীয় স্বামী বিল্লাল হাওলাদার ওই বাড়িতেই ছিলেন। পানি আনতে বাসা থেকে নিচে নেমেছিলেন রহিমা বেগম। দীর্ঘসময় পরও তার খোঁজ না পাওয়ায় ঘটনার দিন রাত সোয়া ২টায় দৌলতপুর থানায় অপহরণ মামলা করেন মেয়ে আদুরী।
এরপর পুলিশ ও র্যাব ছয় জনকে ওই মামলায় গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। ১৭ সেপ্টেম্বর দৌলতপুর থানা থেকে মামলাটির তদন্তভার পিবিআইকে দেয়া হয়।
এদিকে, শুক্রবার দুপুরে রহিমা বেগমের মেয়েরা ময়মনসিংহের ফুলপুরে উদ্ধার হওয়া অজ্ঞাতপরিচয় নারীর মরদেহকে নিজেদের ‘মায়ের লাশ’ দাবি করলে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। উদ্ধার হওয়া লাশের পরনের কাপড় দেখে প্রাথমিকভাবে নিজের মায়ের লাশ বলে জানায় রহিমা বেগমের মেয়ে মরিয়ম মান্নান।
তবে ময়মনসিংহের ফুলপুর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুন উদ্ধার হওয়া নারীর লাশ অর্ধগলিত ছিল দাবি করে লাশের ডিএনএ টেস্ট করার প্রক্রিয়া শুরু করেন।
এরপর, শনিবার দিবাগত রাতে ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার একটি বাড়ি থেকে রহিমা বেগমকে উদ্ধার করে পুলিশ। পরে রাত ২টা ১০ মিনিটে খুলনার দৌলতপুর থানায় নেয়া হয় তাকে।
এনএস//
আরও পড়ুন