মালিকের অত্যাচার থেকে পালিয়ে রাবেয়া কাতরাচ্ছেন হাসপাতালে
প্রকাশিত : ১৫:৪২, ৮ অক্টোবর ২০২২
অভাবের তারণায় মাত্র ১০ বছর বয়সে গৃহকর্মী হিসেবে বাড়ি ছাড়েন মোরেলগঞ্জের রাবেয়া আক্তার (১৭)। গৃহকর্তী কর্তৃক শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার থেকে প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে এসে মোরেলগঞ্জ হাসাপাতালে ভর্তি হয়েছেন তিনি।
মারধর ও অত্যাচারকারী নাসরিন সুলতানা লিজা ও তার স্বজনদের বিচার দাবি করেছেন রাবেয়া।
প্রায় তিন বছর অমানসিক অত্যাচার সহ্য করে শরীরে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন নিয়ে ৫ অক্টোবর বুধবার লিজার বাসা থেকে পালিয়ে মোরেলগঞ্জে চলে আসেন রাবেয়া। গুরুতর অসুস্থ্য অবস্থায় স্বজনরা মোরেলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন তাকে।
রাবেয়ার উপর অত্যাচারকারীদের কঠিন শাস্তি চেয়েছেন স্বজন ও এলাকাবাসী।
বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার উত্তর বারইখালী গ্রামের সুলতান মোল্লার মেয়ে রাবেয়া আক্তার (১৭) ওরফে আকলিমা। ২০১৫ সালে একই গ্রামের জালাল হাওলাদার খুলনার নিরালা এলাকায় পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এসএম সামছুল হকের বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজে দেন রাবেয়াকে।
ওই বাসায় ৫ বছর থাকার পর রাবেয়াকে পাঠানো হয় সিলেটে সামছুল হকের মেয়ে তানিয়া সুলতানা লাকির বাসায়। তিন মাস পরে সিলেট থেকে পাঠানো হয় ঢাকার মিরপুরে ছোট মেয়ে নাসরিন সুলতানা লিজার বাসায়। সেখানে টানা তিন বছর গৃহকর্মীর কাজ করে শরীরে অসংখ্য আঘতের চিহ্ন নিয়ে গুরুতর আহত অবস্থায় গত ৫ অক্টোবর বুধবার লিজার বাসা থেকে পালিয়ে চলে আসেন মোরেলগঞ্জে।
রাবেয়ার হতদরিদ্র পিতা সুলতান মোল্লা রোগাক্রান্ত হয়ে বিছানায় পড়ে থাকায় তার চাচা কাঞ্চন মোল্লা রাবেয়াকে দ্রুত মোরেলগঞ্জ হাসপাতালে ভর্তি করেন। রাবেয়ার হাত, পা, মুখমণ্ডল, পিঠ, পেটসহ গোটা শরীরে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
রাবেয়ার চাচা কাঞ্চন মোল্লা বলেন, রাবেয়ার পিতা অক্ষম, তার কোন আয় নেই। পেটেরে দায়ে রাবেয়াকে পুলিশ কর্মকর্তা সামসুল হকের বাসায় গৃহকর্মীর কাজে দেওয়া হয়েছিল। ৮ বছর নির্দয় নির্যাতনে কেটেছে তার দিন। এখন তার চিকিৎসা প্রয়োজন।
রাবেয়া পালিয়ে মোরেলগঞ্জে আসছে এমন খবর শুনে গত বুধবার বিকেলে অবসরপ্রাপ্ত ওসি সামছুল হক মোরেলগঞ্জে রাবেয়াদের বাড়িতে যান। সেখানে গিয়ে তিনি রাবেয়ার চিকিৎসা খরচ বাবদ নগদ ৫ হাজার টাকা দেন।
রাবেয়া আক্তার বলেন, “৮ বছর ধরে গৃহকর্মীর কাজ করছি ওসি সামসুল হক ও তার দুই মেয়ের বাড়িতে। এই ৮ বছরে আমার পরিবারের কারো সাথে যোগাযোগ করতে দেয়নি। মায়ের মৃত্যু সংবাদেও ঘর থেকে বের হতে দেয়নি। প্রতিদিন দফায় দফায় মারপিট করে ঘরে বন্দি করে রাখা হয়। ভাঙ্গা গ্লাস দিয়ে হাত-মুখে আঘাত করে রক্তাক্ত করেছে। চুলের মুঠি ধরে দেয়ালের সাথে মাথায় আঘাত করেছে। নিরুপায় হয়ে জীবন বাঁচাতে বুধবার পালিয়ে বাসে উঠে মোরেলগঞ্জে পৌঁছাই।”
মোরেলগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. রায়হানা ফেরদৌসি দোলা বলেন. রাবেয়ার শরীরে প্রচুর আঘাতের চিহ্ন ও ক্ষত রয়েছে। তার সুস্থ্য হতে কয়েকদিন সময় লাগবে। সে হয়ত মানসিকভাবেও অনেকটা বিব্রতকর অবস্থায় রয়েছে।
মোবাইল ফোনে সাবেক ওসি সামছুল হক বলেন, “রাবেয়া পালিয়ে গেছে এ খবর পেয়ে আমি গত বুধবার মোরেলগঞ্জে যাই। আমার মেয়ে রাবেয়াকে মারধর করেছে তাই মানবিক কারণে তার চিকিৎসার জন্য ৫ হাজার টাকা দিয়ে এসেছি।”
এএইচ
আরও পড়ুন