ইবিতে ছাত্রী লাঞ্ছিত, শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
প্রকাশিত : ০৯:০৮, ২১ অক্টোবর ২০২২
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকাশ্যে এক ছাত্রীকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় অভিযুক্তকে বহিষ্কার, ছাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ কয়েকদফা দাবিতে খালেদা জিয়া হলে বিক্ষোভ করছে দুই শতাধিক আবাসিক ছাত্রী।
বৃহস্পতিবার (২০ অক্টোবর) সন্ধ্যায় এ ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী সৈয়দা সায়মা রহমান ইবি শাখা ছাত্রলীগ নেতার সুপারিশে খালেদা জিয়া হলের নতুন ব্লকের ২০৪ নম্বর রুমে উঠে। তিনি জানালার পাশের সিটে উঠতে চায়। এতে রুমের অন্য এক সিনিয়র ছাত্রী উঠতে চাইলে আপত্তি জানায় সায়মা। পরে ব্লকের অন্য সিনিয়র ছাত্রীরা সায়মাকে ওই সীটে উঠতে নিষেধ করলে তাদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হয়। বুধবার রাতে হলে এ ঘটনা ঘটে। পরে সায়মা ছাত্রলীগ নেতাদের কাছে অভিযোগ করেন। মুঠোফোনে অন্য এক ছাত্রীর মাধ্যমে ভুক্তভোগী বাংলা বিভাগের স্নাতকোত্তর ওই ছাত্রীকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেয় ছাত্রলীগ নেতারা।
এরপর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে পাঁচটার দিকে ‘মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব’ মুর্যালের সামনে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের মেহেদী হাসান হাফিজ, একই বিভাগের শাহিন আলম, অর্থনীতি বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের নাসিম আহমেদ মাসুমসহ কয়েকজন ভুক্তভোগী ছাত্রীর পথ রোধ করে হুমকি দেয়। একপর্যায়ে হাফিজ ওই ছাত্রীর ওপর চড়াও হয়। এ সময় ওই ছাত্রীর সাথে থাকা ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি বিভাগের স্নাতকোত্তর এক ছাত্র প্রতিবাদ করলে তাকে মারধর করে বলে অভিযোগ করে তারা। এ সময় নিরাপত্তা প্রধান আব্দুস সালাম সেলিমসহ অন্যান্য নিরাপত্তা কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। তারা ঘটনা স্বাভাবিক করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী ছাত্র জানায়, আমার বন্ধবীকে থাপ্পড় দিলে আমি প্রতিবাদ করি। এতে তারা গালিগালাজ করে আমাকেও চড় থাপ্পড় দেয়। পরে কয়েকজন এসে সমাধানের চেষ্টা করলে তাদের সামনে আবার মারধর করে।
এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী ছাত্রী জানায়, হলে সাধারণত জানালার পাশে বা ভালো সীটগুলোতে সিনিয়র ছাত্রীরা উঠে। এটাই এতদিন যাবত হয়ে আসছে। বিষয়টি আমরা সায়মাকে বললে সে দলীয় পরিচয়ে বড় ভাইদের ভয় দেখায়। পরে সিনিয়র ছাত্রীরা তাকে বোঝানোর চেষ্টা করলে সে সবার সঙ্গে খারাপ আচরণ করে। সে তার দলের বড় ভাইদের বললে হাফিজ আমার বান্ধবীকে ফোন করে আমাকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেয়। পরে সন্ধ্যায় আমাকে ও আমার বন্ধুকে মুর্যালের সামনে প্রকাশ্যে দুই দফায় লাঞ্ছিত করে।’
এদিকে, এই ঘটনায় ভুক্তভোগী ছাত্রী হলে গিয়ে অন্য ছাত্রীদের বিষয়টি জানালে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত হল অফিসের নিচে প্রায় দুই শতাধিক ছাত্রী বিক্ষোভ করে। এ সময় বিক্ষুব্ধ ছাত্রীরা অভিযুক্ত মেহেদী হাসান হাফিজের ছাত্রত্ব বাতিল, প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়া, ছাত্রীদের ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা নিশ্চিত ও ঘটনার সূত্রপাত হওয়া সৈয়দা সায়মা রহমানের সিট বাতিল করে হল থেকে বের করে দেওয়ার দাবি তুলে।
এ বিষয়ে কয়েকজন আবাসিক ছাত্রী জানায়, স্যার ম্যামরা আমাদের দাবি মেনে নিয়েছে। শুক্রবার সকাল ১১টায় প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষসহ আলোচনায় বসতে চেয়েছে। তবে আমাদের দাবি বাস্তবায়ন না হলে আমরা আবার আন্দোলন করবো।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত শাহিন আলম বলেন, বিষয়টা খুব ছোট একটা ঘটনা। তেমন কিছু ঘটেনি।
জানতে চাইলে হল প্রভোস্ট অধ্যাপক ইয়াসমিন আরা সাথী গণমাধ্যমে বলেন, একটা উদ্বুদ্ধ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিলো। শুক্রবার (২১ অক্টোবর) প্রশাসনের ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে বসে একটা সুষ্ঠু সমাধান করা হবে।
এমএম/
আরও পড়ুন