ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪

সিনেমাকেও হার মানালো সাগরে ঝড়ের রাতের এই ঘটনা!

মোংলা প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ২০:১৯, ২৭ অক্টোবর ২০২২

ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’র কবলে পড়ে বঙ্গোপসাগরে ডুবে যায় ‘এফবি জেসমিন’ নামে একটি ফিশিং ট্রলার। এসময় প্রাণ বাঁচাতে ওই ট্রলারে থাকা নিজেদের ব্যবহৃত প্লাস্টিকের ড্রাম নিয়ে উত্তাল সাগরে ঝাঁপিয়ে পড়েন বিপদগ্রস্ত ২৩ জন জেলে। তুমুল ঝড়-বৃষ্টির মধ্যেই ভাসতে থাকেন তারা। 

হৃদয়বিদারক এই দৃশ্য তখন আকাশ থেকে দেখতে পায় ভারতের টহলরত একটি বিমান। মুহূর্তেই তাদেরকে বাঁচাতে লাইফ জ্যাকেট ছুড়ে দেয়া হয়। পরে ভারতীয় কোস্টগার্ডের জাহাজ ‘বিজয়া’ এসে তাদের উদ্ধার করে। উদ্ধার হওয়া এসব জেলেদের বাড়ি বাংলাদেশের ভোলা জেলায়। ঘটনা গত মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) ঝড়ের রাতের। 

তবে ঝড়ের কবলে পড়া এসব জেলেদের গত দু’দিনেও হদিস না পাওয়ায় স্বজনরা ভেবেছিলেন, তারা কেউ বেঁচে নাই! কারণ স্বজনরাই কেবল জানতেন যে, তারা সাগরে গেছেন মাছ ধরতে। কিন্তু এর পরের ঘটনা তো সিনেমার দৃশ্যকেও হার মানিয়েছে।

কোস্টগার্ড পশ্চিমজোনের (মোংলা সদর দপ্তর) স্টাফ অফিসার (অপারেশন) লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মো. মহিউদ্দিন জামান বৃহস্পতিবার (২৭ অক্টোবর) সন্ধ্যা ৭টায় জানান, এসব জেলেদের মোংলা কাস্টগার্ড ষ্টেশনে আনা হয় এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কমলেশ মজুমদারের মধ্যস্থতায় পরিবারের কাছে হস্তন্তর করা হয়েছে। 

এর আগে এদিন দুপুরে সমুদ্র থেকে উদ্ধার হওয়া এসব জেলেদের বাংলাদেশ-ভারত সমুদ্রসীমার শূণ্য রেখায় বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের জাহাজ ‘স্বাধীন বাংলায়’ হস্তান্তর করে ভারতীয় কোস্টগার্ড। 

এসব জেলেদের বরাত দিয়ে কোস্টগার্ড কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মো. মহিউদ্দিন জামান আরও বলেন, ‘গত মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) ঝড়ের কবলে পড়ে তাদের ফিশিং ট্রলার ‘এফবি জেসমিন’ সাগরে ডুবে যায়। এসময় ট্রলারে থাকা তাদের ব্যবহৃত প্লাস্টিকের ড্রাম নিয়ে সমুদ্রে ঝাঁপিয়ে পড়েন জেলেরা। ভাসতে ভাসতে তারা বাংলাদেশের সীমানা পেরিয়ে ভারতে ঢুকে পড়েন। পরে তাদেরকে ভারতের কোস্টগার্ডের সদস্যরা উদ্ধার করেন। তারা এখন সুস্থ আছেন’। 

এদিকে স্বজনরা ভেবেছিল তারা কেউ বেঁচে নেই। মঙ্গলবার সেই স্বজনদের কাছে হস্তান্তরের সময় চোখের পানিতে মোংলা কোস্টগার্ড ষ্টেশনে এক হৃদয়বিদারক পরিবেশের তৈরী হয়।

উদ্ধার হওয়া জেলে মো. রাকিব হোসেন (২০) বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞা জেনেও পেটের দায়ে সাগরে গিয়েছি, সংসারে অভাব, কি করবো বলেন? এর পরে তো ঝড়ের কবলে পড়ে বাঁচার আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম’!

ভাইকে কাছে পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন ভোলার চরফ্যাশন থেকে আসা ফরিদ উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘সংসারে অভাবের তাড়নায় ভাইকে (ফরহাদ হোসেন, ২৫) মাছ ধরতে পাঠাই। এর পরে ঝড়ের খবর শুনে পরিবারের সবাই কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছিল। ভেবেছিলাম ভাই মনে হয় বেঁচে নাই। পরে কোস্টগার্ড থেকে খবর পাই যে, ভাই বেঁচে আছে। এজন্য তাকে নিতে এসেছি’। 

মোংলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কমলেশ মজুমদার বলেন, ‘ঝড়ের কবলে পড়ে উত্তাল সমুদ্র পড়ে যাওয়া জেলেদের বেঁচে ফিরে আসার বিষয়টি অলৌকিক। আমার কাছে এটা একটা নতুন অভিজ্ঞতার বিষয়। বিষয়টিকে সবাইকে মানবিক হিসেবে দেখা উচিৎ।’

সেইসঙ্গে সাগরে যাওয়া প্রত্যেক জেলেকেই লাইফ জ্যাকেট নিয়ে যাওয়া উচিৎ ছিল বলেও জানান তিনি।

এনএস//


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি