পা দিয়ে লিখে জিপিএ-৫ পেল কুড়িগ্রামের মানিক
প্রকাশিত : ০৯:১৫, ২৯ নভেম্বর ২০২২
জন্ম থেকেই দুই হাত নেই মানিকের। বাম পা প্রায় ৬ ইঞ্চি খাটো। চিন্তায় দিশেহারা হয়েছিলেন মানিকের বাবা-মা। অনেক পরিশ্রম করে স্কুলমুখি করেছেন তাকে। ক্লাসে চকিতে আলাদা বসে পায়ের আঙ্গুলে কলম বসিয়ে লেখা শুরু করেন। সেই মানিক এবার এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছেন।
সুস্থ ও স্বাভাবিক অন্যান্য শিক্ষার্থীর মতো লড়াই করে শিশু শ্রেণী থেকে মানিকের রোল ছিল প্রথম ও দ্বিতীয়। এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছেন কুড়িগ্রামের অদম্য মেধাবী মানিক রহমান। তার ফলাফল দেখে আবেগে আপ্লুত শিক্ষক ও এলাকাবাসী।
মানিক ফুলবাড়ী জছিমিঞা মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন। জেএসসিতে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে বাবা-মায়ের মুখ উজ্জ্বল করেছেন শারীরিক এ প্রতিবন্ধি। অদম্য মেধাবী মানিক রহমান এ বছর ফুলবাড়ী পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের পরীক্ষা কেন্দ্রে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছিলেন।
শারীরিক প্রতিবন্ধী মানিক উপজেলার সদর ইউনিয়নের চন্দ্রখানা গ্রামের ঔষধ ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান ও রাবাইতারী স্কুল এন্ড কলেজের প্রভাষক মরিয়ম বেগমের ছেলে। পিতা-মাতার বড় ছেলে মানিক রহমান জন্ম থেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধী। জন্ম থেকেই তার দুটো হাত নাই, একটি পা অন্যটির চেয়ে অনেকাংশে খাটো।
সে সমাজের বোঝা হবে না কাজকর্ম করে খেতে পারবে, তা নিয়ে দিশেহারা হয়েছিলেন মা-বাবা। তবে মা-বাবার চেষ্টায় পিছিয়ে থাকেনি মানিক। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা থাকলেও পিইসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫সহ ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছিলেন।
শুধু পা দিয়ে লেখাই নয়, পা দিয়ে মোবাইল চালানো এবং কম্পিউটার টাইপিং ও ইন্টারনেট ব্যবহারেও পারদর্শী মানিক রহমান। ভবিষ্যতে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হয়ে বাবা-মায়ের স্বপ্ন পূরণ করতে চান মানিক।
এ প্রসঙ্গে মানিকের মা মরিয়ম বেগম জানান, জন্মগতভাবেই মানিকের দুই হাত নেই। দুই পায়ের মধ্যে বাম পা প্রায় ৬ ইঞ্চি খাটো। তাকে নিয়ে চিন্তায় দিশেহারা ছিলাম। অনেক কষ্ট করে স্কুলমুখি করা হয় মানিককে। লেখাপড়ায় আগ্রহী হওয়ায় প্রথম শ্রেণী থেকে এক রোল হয় মানিকের।
ঔষধ ব্যবসায়ী মানিকের বাবা মিজানুর রহমান বলেন, ছোটবেলা থেকে লেখাপড়ায় আগ্রহ ছিল তার। হামাগুড়ি দিয়ে কলম ধরতে ও টেলিভিশনের রিমোট ধরে কার্টুন দেখে মজা পেত। স্কুলের সময়ের আগে গোসল করতো। আর ক্লাসের আগে পৌঁছতো। প্রতিদিন রাত ১১টা পর্যন্ত লেখাপড়া করতো সে।
ফুলবাড়ী জছিমিঞা মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবেদ আলী খন্দকার জানান, শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ার পরেও মানিক রহমান অন্যান্য শিক্ষার্থীদের চেয়ে ভাল ফলাফল করায় আমরা মুগ্ধ। এবার বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পাওয়ায় আমরা সবাই খুশি হয়েছি।
এএইচ
আরও পড়ুন