নাটোরে দু’পক্ষের সংঘর্ষে ১২ জন গুলিবিদ্ধ
প্রকাশিত : ১৪:৩৭, ৩ ডিসেম্বর ২০২২ | আপডেট: ১৪:৩৮, ৩ ডিসেম্বর ২০২২
নাটোরের সিংড়ায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ও গুলিবর্ষণের ঘটনায় ১২ জন গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। আহতদের কয়েকজনের শরীরে কার্তুজের স্পিন্টার বিদ্ধ হয়েছে।
শনিবার সকালে চলনবিলের দুর্গম ডাহিয়া ইউনিয়নের বেড়াবাড়ি গ্রামের আধিপত্য নিয়ে পুর্ব বিরোধের জেরে রেজা-সাইফুল ও ইউপি সদস্য মানিক হোসেনের সমর্থকদের সঙ্গে ২ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি আনোয়ারের সমর্থকদের মধ্যে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
আহতদের সিংড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়। পরে ১৩ জনকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।
খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এসময় ৯ জনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, এলাকার আধিপত্য নিয়ে তাদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। গত ২০১৬ সালে বেড়াবাড়ি গ্রামে রেজাউল নামে একজন নিহত হয়। ওই হত্যা মামলার আসামি সাইফুলসহ তার সমর্থরা। আনোয়ার হোসেনসহ তার সমর্থকরা ওই মামলার সাক্ষী।
সম্প্রতি সাইফুলের নেতৃত্বে তার সমর্থকরা বাদী পক্ষকে মামলা তুলে নিতে ও সাক্ষী না দিতে বিভিন্ন সময় হুমকি দিয়ে আসছিলেন। প্রতিপক্ষ আনোয়ারের সমর্থকরা এঘটনার প্রতিবাদ জানালে নতুন করে বিরোধে জড়িয়ে পড়ে উভয়পক্ষ।
এছাড়া স্থানীয় মসজিদের কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করেও তাদের মধ্যে চরম বিরোধ চলছিল। শুক্রবার মসজিদের কমিটি গঠন হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি।
এই সংঘর্ষ ও গুলিবর্ষণের ঘটনায় শামীম প্রামাণিক, মনসুর রহমান, আলী আজগর, আব্দুল মান্নান, সাইদুর, সবুজ, শুভ, আব্দুর রউফ, দীপন, জামাল, বাবু সরকার, আমিরুল তালুকদার নামে ১২ জন গুলিবিদ্ধ হন।
এছাড়া মোজাম্মেল, লাকী বেগম ও শিরিনা বেগমকে কুপিয়ে জখম করে প্রতিপক্ষ সাইফুল গ্রুপ। তাদের সিংড়া উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি করার পর ১৩ জনকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
এ বিষয়ে রেজাউল করিম ওরফে রেজাকে ফোন দিলে তিনি বলেন, “জরুরি কাজে নাটোর রয়েছি। আমি ও আমার ভাই এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত নই।”
এদিকে সাইফুলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগকে মিথ্যা ও বানোয়াট দাবি করে তিনি বলেন, “বেশ কয়েকদিন ধরে আমি নাটোরে। প্রতিপক্ষরা এই ঘটনা নিজেরা করে আমাদের ওপর দায় চাপাচ্ছে।”
স্থানীয় ইউপি সদস্য মানিক হোসেন বলেন, “দুই ভাই সাইফুল ও রেজাকে বিপদে ফেলাতে আনোয়ার ও তার সমর্থকরা এই ঘটনা ঘটিয়েছে। তারা সাইফুল-রেজার সমর্থকদের ওপর অর্তকিতে হামলা করে এবং অবৈধ অস্ত্র দিয়ে গুলিও চালায়। এতে অনেকেই আহত হয়েছেন।”
অপরদিকে ২নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন বলেন, সাইফুল ও মানিক মেম্বারের নেতৃত্বে তার পক্ষের লোকজনের উপর অতর্কিত হামলার চালানো হয়েছে। তারা গুলি চালিয়েছে। তাদের পক্ষের ১৬ জন আহত হয়েছে বলে জানান তিনি।
সিংড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাঃ মইনুল হক রিকো বলেন, আহতরা সবাই গুলিবিদ্ধ। তাদের মধ্যে ৫ জনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি ও গুরুতর ১১ জনকে বগুড়া শহীদ জিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপতালে উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রেরণ করা হয়েছে।
সিংড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মিজানুর রহমান বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সংঘর্ষের সময় গুলিবর্ষণ করার সত্যতা পাওয়া গেছে। তবে কোন পক্ষ থেকে গুলি করা হয়েছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
সংঘর্ষে ১৩ জন আহত হওয়ার সত্যতা পাওয়া গেছে। এদের কয়েকজনের শরীরে বন্দুকের রাবার কার্টিজের অস্তিত্ব রয়েছে। এসময়ে কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় আনা হয়েছে বলে জানান ওসি।
এএইচ
আরও পড়ুন