ঢাকা, শুক্রবার   ১৪ মার্চ ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

সারাদেশে যখন মুক্তির আনন্দ তখন বাগেরহাটে চলে তাণ্ডব

বাগেরহাট প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ১৪:৫১, ১৭ ডিসেম্বর ২০২২ | আপডেট: ১৪:৫৪, ১৭ ডিসেম্বর ২০২২

Ekushey Television Ltd.

বাঙালি জাতির আত্মত্যাগ, দীর্ঘ মুক্তি সংগ্রাম ও যুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর হানাদার মুক্ত হয় বাংলাদেশ। তবে বাগেরহাট ছিল এর ব্যতিক্রম। যখন দেশের বেশিরভাগ স্থানে মুক্তিযোদ্ধারা বিজয় উল্লাস করছিল তখন বাগেরহাটের কোথাও কোথাও পাকিস্তানী বাহিনীর তাণ্ডব চলছিল।

সারাদেশ যখন শত্রুমুক্ত তখন বাগেরহাট শত্রুদের দখলে থাকায় উদগ্রীব ও অস্থির হয়ে পড়েন মুক্তিযোদ্ধারা। নিজেদের সীমানা থেকে হানাদার বাহিনীকে নিশ্চিহ্ন করতে বাগেরহাটের মুক্তিযোদ্ধারা লড়ছিলেন প্রাণপনে।

পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পন করলেও রাজাকার-আলবদর বাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা পাকিস্থান সরকারের তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী এ.কে.এম. ইউসুফের জন্মস্থান হওয়ার কারণে বাগেরহাট ছিল রাজাকার বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে। রাজাকারদের খুলনা অঞ্চল প্রধান রজব আলী ফকিরের নেতৃত্বে বাগেরহাটে তখনও ব্যাপক লুটপাট, মুক্তিকামী মানুষকে হত্যা এবং নির্মম নির্যাতন চলছিল।

১৬ ডিসেম্বর বাগেরহাট শহর দখলের পরিকল্পনা হয়। ১৭ ডিসেম্বর ভোরে রফিকুল ইসলাম খোকনের নেতৃত্বে রফিক বাহিনী মুনিগঞ্জ এলাকা দিয়ে বাগেরহাট শহরে প্রবেশ করে। ক্যাপ্টেন তাজুল ইসলামের নেতৃত্বে তাজুল বাহিনী শহরের উত্তর-পূর্ব দিক দিয়ে প্রবেশ করে বাগেরহাট শহরে। সাব-সেক্টর কমান্ডার মেজর জিয়া উদ্দিনের বাহিনী দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে সম্মিলতভাবে বাগেরহাট শহর দখলের জন্য আক্রমণ করে।

বাগেরহাট সদর থানায় রাজাকার ক্যাম্পে অবস্থানরত রাজাকার-আল বদর ও পাকিস্থানী বাহিনী  প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করে। মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মিলিত আক্রমণের মুখে রাজাকর রজব আলী ফকিরের নেতৃত্বে হানাদাররা বাধ্য হয়ে পাকিস্থানী পতাকা নামিয়ে পালিয়ে যায়।

১৭ ডিসেম্বর দুপুরে হানাদার মুক্ত হয় বাগেরহাট। বিজয়ের আনন্দে ফেটে পড়েন সাধারণ মানুষ। উল্লাস আর আনন্দে বাগেরহাটবাসী পায় মুক্তির স্বাদ। মুক্তিকামী জনতাকে সঙ্গে নিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা উত্তোলন করেন বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা।

বাগেরহাট শহর মুক্তি সমরে অংশ নেয়া মুক্তিযোদ্ধা নকীব সিরাজুল হক বলেন, ‘১৭ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মিলিত আক্রমণের মুখে রাজাকার রজব আলী বাহিনীর বেশিরভাগ সদস্যরা পালিয়ে যায়। তবে কেউ কেউ আত্মসমর্পণও করে। সমগ্র বাগেরহাট মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে আসে। আমরা বিজয়ের পতাকা উড়াই স্বগৌরবে ‘

বাগেরহাট জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহিনুল হক ছানা বলেন, বাগেরহাট ছিল রাজাকার অধ্যুষিত একটি এলাকা। শহরের পাশে বিশালাকারের একটি নদী থাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের ঝড় করতে একটু বিলম্ব হয়। যার ফলে ১৭ ডিসেম্বর দুপুরে আমরা বাগেরহাট শহরে প্রবেশ করি। রাজাকার-আল বদর ও পাকিস্থানী বাহিনী প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করলেও মুক্তিযোদ্ধাদের শক্তির কাছে হার মানে তারা। এক পর্যায়ে তারা পাকিস্তানি পতাকা নামিয়ে পালিয়ে যায়।

বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাঠে ছিল রাজাকারদের ক্যাম্প। বর্তমান জেলা পরিষদ ডাক বাংলো ছিল রাজাকারদের বিচারালয় এবং টর্চার সেল। স্বাধীনতার পরে সেখানে স্থাপন করা হয়েছে বদ্ধভূমী স্মৃতিসৌধ। 

এর উল্টো পাশে ভৈরব নদীর পাড়ে রজব আলীর নির্দেশে তৈরি করা হয় ফায়ার স্কট বা কসাইখানা। যেখানে সম্প্রতি শহীদদের স্মরণে বদ্ধভূমি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে।

এএইচ


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি