ঢাকা, শুক্রবার   ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪

বেঁচে থাকুক চণ্ডীদাস-রজকীনির প্রেমের স্মৃতি (ভিডিও)

মাসুম বিল্লাহ, মাগুরা

প্রকাশিত : ১৬:৪৯, ১৪ জানুয়ারি ২০২৩ | আপডেট: ১৬:৫১, ১৪ জানুয়ারি ২০২৩

বাংলার অমর প্রেমকাহিনীর চরিত্র চণ্ডীদাস ও রজকীনির নাম অনেকেরই জানা। কিন্তু তারা যে এলাকায় থাকতেন সেটি সম্পর্কে খুব কম মানুষেরই জানাশোনা আছে। 

মাগুরা জেলার শালিখা উপজেলার শতখালী ইউনিয়নের ধোপাখালী হচ্ছে চণ্ডীদাস ও রজকীনির গ্রাম। প্রাচীনকালে এ জায়গাটিতে ধোপা সম্প্রদায়ের লোকদের বসবাস বেশি থাকায় এ পাড়ার নাম ধোপাখালী পাড়া নামে পরিচিত। 

জেলা শহর থেকে ২৫ কিলোমিটার দক্ষিণে যশোর-মাগুরা মহাসড়কের শতখালী নতুন বাজার থেকে দেড় কিলোমিটার পূর্বে ধোপাখালী পাড়া । 

চণ্ডীদাসের বাবা ছিলেন এলাকার একজন ছোটখাটো ব্রাহ্মণ জমিদার আর রজকীনি ছিল ধোপার মেয়ে। অপরূপা রজকীনিকে দেখে চণ্ডীদাস জাতপাত ভুলে তার প্রেমে পড়ে যায়। তাদের দুজনের বাড়ির মাঝখান দিয়ে বয়ে গেছে সেই সময়ের খরস্রোতা চিত্রা নদীর শাখা ব্যাঙ্গ নদী। বাপ-দাদার ধোপার ব্যবসা থাকায় ছোট্ট রজকীনি ওপারের ঘাটে প্রতিদিন কাপড় ধুতে আসত। রজকীনি অপরূপ সুন্দরী ছিল, যা এপার থেকে দেখে চণ্ডিদাসের ভালো লেগে যায়। রজকীনিকে দেখার জন্য মাছ ধরার ছলে বড়শি নিয়ে এপারে প্রতিদিন বসে থাকত চণ্ডীদাস।

মাছ ধরার ছিপ ফেলে ১২ বছর বসে থাকার পর একদিন রজকীনি চণ্ডীদাসকে জিজ্ঞেস করে- ‘বরশিতে কি মাছ ধর, ওহে ঠাকুর মশায়’ । এপার থেকে চণ্ডীদাস উত্তর দেয়- ‘১২ বছর পর একটা টিপ দিল মনে হয়’। তখন থেকেই শুরু তাদের কথোপকথন। 

দুইজনের প্রেম শুরু হলে তা প্রতিবেশিদের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে। জমিদার পুত্রের সাথে ধোপার মেয়ের প্রেমে জাত-ধর্মের প্রশ্ন দেখা দেয়। সমাজ তাদের এ প্রেম মেনে না নেয়ায় নানা অপবাদে জর্জরিত হয়ে প্রেমিক-প্রেমিকা একদিন সব ছেড়ে পালিয়ে ভারতে চলে যায় বলে প্রচলিত রয়েছে।

মাগুরার ইতিহাস রচয়িতা কাজী তাসুকুজ্জামান বলেন, “ইতিহাস রচনা করতে গিয়ে  যতগুলো কিংবদন্তি পেয়েছি তার মধ্যে চণ্ডীদাস ও রজকীনি সবচেয়ে প্রাচীন একটি ইতিহাস। চণ্ডীদাসের যে দীঘি বা গড় যাই বলি না কেন, তা খনন করলে সুলতানী আমলের চিকন চিকন ইট পাওয়া যায়। বর্ষীয়ান লোকদের কাছ থেকে জানা যায়, গ্রামের হাটে হাটে রজকীনি-চণ্ডীদাসকে নিয়ে কবিরা গান গেয়ে অর্থ উপার্জন করত।

মাগুরা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পঙ্কজ কুমার কুন্ডু বলেন, “মাগুরার বিভিন্ন জায়গায় অনেক উপখ্যানখ্যাত জায়গা রয়েছে। এর মধ্যে শালিখা উপজেলার শতখালী গ্রামে চণ্ডীদাস ও রজকীনির একটি উপখ্যান আছে। হাটে-বাজারে গানবাজনাতেও তাদের গল্প শোনা যায়।” 

তিনি জানান, চণ্ডীদাস-রজকীনির স্মৃতিবিজড়িত জায়গাটিতে প্রায় ১৫ একর ( চৌদ্দ একর ৮০ শতক) জায়গায় অনেক আগে মেলা হত, এখন আর তা হয় না। 

যে জায়গাটিতে ঘাট ছিল সেটি দখলমুক্ত করে সেখানে পর্যটন ও বিনোদন কেন্দ্র গড়ে তোলা সম্ভব হবে বলে মনে করেন তিনি।

চণ্ডীদাস ও রজকীনির নামে মেলাটি ২০১২ সালের পর থেকে বন্ধ রয়েছে। 

এএইচএস


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি