৬৮ বছর পর দখলমুক্ত হচ্ছে হাকর নদী, খুশি বেনাপোলবাসী
প্রকাশিত : ১৫:৫১, ১৬ জানুয়ারি ২০২৩
অবশেষে ৬৮ বছর পর দখলমুক্ত হতে চলেছে বেনাপোলের ঐতিহ্যবাহী হাকর নদী। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধানে শুরু হয়েছে নদী খননের কাজ। এতে খুশি পৌরবাসী।
ভারতের ইছামতী নদীর সঙ্গে সংযুক্ত প্রবহমান হাকর নদীর দুই পাড় ১৯৫৫ সালে প্রভাবশালীরা দখল করে নেয়। ভূমি কর্মকর্তাদের সহায়তায় ৬২ সালে হাকর চলে যায় ব্যক্তি মালিকানায়। দীর্ঘ এ সময়ে নদী দখলমুক্ত করতে শত চেষ্টা চললেও আলোর মুখ দেখেনি বেনাপোলবাসী।
ঐতিহ্যবাহী হাকর নদী নারায়ণপুর থেকে বেনাপোলের সাদীপুর চেকপোস্ট পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার খনন করা হবে। ২২ কিলোমিটার দূরত্বের বাকি অংশ পরবর্তীতে ধাপে ধাপে খনন করে বিভিন্ন বিলের সাথে সংযোগ পুনঃস্থাপন করা হবে।
জানুয়ারীর প্রথম সপ্তাহ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে খনন কাজ শুরু করা হয়েছে। উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী খনন চলছে। প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গের কোন বাঁধা আসেনি।
বেনাপোল স্থলবন্দরের ২০০ গজ দূরে হাকর নদীর অবস্থান। বন্দরের পানি নিষ্কাশনের জন্য নদী খনন করা খুবই জরুরি। ভারতের গঙ্গা, ইছামতি, ফারাক্কা ও কুদলা নদীর সঙ্গে সীমান্তের সঙ্গে সংযুক্ত হাকর নদী।
সীমান্তের সংযুক্ত হাকর নদী পথে দু’দেশের মধ্যে চলাচল করত লঞ্চ ও রং বে-রংঙের পালতোলা নৌকা। ভারতের কোলকাতা বনগাঁ, বশিরহাট থেকে বিভিন্ন ধরনের মালামাল নিয়ে বজরা নৌকা ভিড়তো বেনাপোলের এই হাকর পাড়ে।
কালের বিবর্তনে প্রবাহমান নদীটি সরু খালে পরিণত হয়ে গেছে। দেশ স্বাধীনের পর নদীকে ঘিরে শুরু হয় অপ-দখল আর কেনাবেচার উৎসব। অনেকেই নদী দখল করে তৈরি করেছেন বড় বড় অট্টালিকা। রাজনৈতিক পালাবদলে এলাকার প্রভাবশালী মহল জবরদখল করে নদী দখল করে তৈরি করেছে হাজার পুকুর। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় গড়ে তুলেছে মাছের ঘের।
বাংলাদেশীদের দেখাদেখি ওপারে ভারতের পেট্রাপোল এলাকায় বেড়িবাঁধ দিয়ে পানি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়।
সম্প্রতি হাকর নদীর খনন কাজ শুরু হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বেনাপোলবাসী।
শার্শা উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, নারায়ণপুর হতে বেনাপোল চেকপোস্ট পর্যন্ত দীর্ঘ ৫ কিলোমিটার নদী দখলমুক্ত করতে সরকার ৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা বরাদ্দ করেছে। কক্সবাজারের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আগামী জুন মাসের মধ্যে খনন কাজ সম্পন্ন করবে।
বেনাপোল পৌরসভার প্রকৌশলী আবু সাইদ বলেন, ‘পৌরবাসীর দীর্ঘদিনের দাবির মুখে হাকর নদী খনন কাজ শুরু হয়েছে। ধাপে ধাপে খনন কাজ শেষ করা হবে। নদীর ধারে গাছ লাগানোসহ ওভারব্রিজ ও পার্ক করার পরিকল্পনা রয়েছে। এতে সুন্দর ও মনোরম পরিবেশ ফিরে পাবে বেনাপোলবাসী।’
তিনি আরও বলেন, এখনও কোনো উচ্ছেদ কার্যক্রম চালানো হয়নি। খনন কাজের প্রয়োজনে তা চালানো হবে। অনেকেই জমি রেকর্ড করে নিয়েছেন। সেক্ষেত্রে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যেহেতু নদীটি দখল করে অনেক প্রভাবশালী স্থাপনা তৈরি করেছেন, ফলে খনন কাজের সময় তারা বাধা দিতে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
নদী দখল করে তৈরি করা হয়েছে অট্টালিকা
পৌরসভার সাবেক মেয়র আশরাফুল আলম লিটন বলেন, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের ১৮ নম্বর সীমানা পিলার এলাকা দিয়ে হাকর নদী বাংলাদেশ অংশে প্রবেশ করেছে। নদীটি খনন হলে বন্যার প্রকোপ থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে দীর্ঘদিন পর হলেও প্রভাবশালীদের কাছ থেকে হাকর নদী অবমুক্ত করায় আমরা খুশি।
যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারি প্রকৌশলী সাইদুর রহমান জানান, ৫ কিলোমিটার খনন কাজে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৪ কোটি ৪৮ লাখ ১০ হাজার ৯৪ টাকা। বাকি ২২ কিলোমিটার পরবর্তীতে ধাপে ধাপে খনন করে বিভিন্ন বিলের সঙ্গে সংযোগ পুনঃস্থাপন করা হবে। নদ খননের পক্ষে এলাকার ৯৭ শতাংশ মানুষ অবস্থান নিয়েছে বলে জানান তিনি।
শার্শা উপজেলা নির্বাহী অফিসার নারায়ণ চন্দ্র পাল বলেন, দীর্ঘদিন পর শার্শা উপজেলার বেনাপোলে হাকর নদীর খনন প্রকল্প শুরু হয়েছে যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) মাধ্যমে। খনন কাজ শেষে বেনাপোলবাসী বিভিন্নভাবে উপকৃত হবেন। জলবদ্ধতা দূর এবং পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা শক্তিশালী হবে।
এএইচ
আরও পড়ুন