ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪

তিন উৎসবকে সামনে রেখে চাঙ্গা গদখালির ফুলের বাজার

বেনাপোল প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ১৫:৩৬, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

গত কয়েক বছর করোনাভাইরাস ও আম্পান ঝড়ে ফুল সেক্টরের ক্ষতি পুষিয়ে তোলার নতুন আশা দেখছেন যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালির ফুল চাষীরা। যার ফলে এরই মধ্যে ফেব্রুয়ারি মাসের তিন উৎসবকে ঘিরে চাঙা হয়ে উঠেছে ফুল চাষী ও ফুলের বাজার। 

সামনেই পহেলা ফাল্গুন বসন্ত বরণ, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে সামনে রেখে প্রস্তুত ফুলচাষীরা।

ফুল চাষিরা বলছেন, এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফুল উৎপাদন ভালো হয়েছে। দামও ভালো থাকায় চাঙ্গা হয়ে উঠছে কেনাবেচা। এ মৌসুমে যশোরের ছয় সহস্রাধিক ফুল চাষি ৫০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, যশোর জেলায় এ বছর ৭০০ হেক্টর জমিতে ফুল চাষ হয়েছে। গতবছর ৬৪০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়েছিল। এ বছর ৬ হাজার চাষি ফুল চাষ করেছেন। জেলার ৯৫ শতাংশ ফুল চাষ হয় ঝিকরগাছা উপজেলায়।

ঝিকরগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাসুদ হোসেন পলাশ বলেন, ঝিকরগাছা উপজেলায় ৬৩০ হেক্টর জমিতে ফুল চাষ হয়েছে। ফুল চাষের সঙ্গে এ এলাকার লক্ষাধিক মানুষের জীবিকার সম্পর্ক রয়েছে। কৃষি অফিস থেকে চাষিদের সার্বিক সহযোগিতা করছেন। গতবারের তুলনায় উৎপাদন অনেক ভালো হয়েছে। চাষিরা করোনা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষতি এবার পুষিয়ে নিতে পারবে বলে আশা করছেন তিনি। 

যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালি, পানিসারা, নাভারণ, নির্বাসখোলা ও শার্শা উপজেলার উলাশী এলাকায় গত কয়েক মাস ধরে চাষিদের পরিশ্রমে মাঠে মাঠে দোল খাচ্ছে গাঁদা, গোলাপ, জারবেরা, চন্দ্রমল্লিকা, গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধাসহ বিভিন্ন ধরনের ফুল। 

গদখালীর ফুল বাজারে বর্তমানে প্রতিটি গোলাপ ৩ থেকে ৫ টাকা, গ্লাডিওলাস কালারভেদে ৮ থেকে ১৪ টাকা, জারবেরা ৬ থেকে ১০ টাকা, রজনীগন্ধা ৪ থেকে ৬ টাকা, চন্দ্রমল্লিকা দেড় টাকা থেকে ২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক হাজার গাঁদা ফুল ৩৫০ থেকে ৫৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। 

ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহের পর ফুলের চাহিদা ব্যাপক হারে বেড়ে যায়। সেই সঙ্গে ফুলের দরও বাড়বে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। বসন্ত বরণে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় হলুদ রংয়ের গ্লাডিওলাস ও গাঁদা, বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে গোলাপ আর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে গাঁদা ফুল বেশি বিক্রি হয়।

গদখালী ফুলের পাইকারী বাজার ঘুরে দেখা যায়, ফুল কিনতে পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা দূর-দূরান্ত থেকে এসেছেন। সারাদিনই বিভিন্ন রুটের বাসের ছাদে, ট্রাক ও পিকআপ ভ্যানে স্তূপ করা হয়েছে ফুল। যেগুলো পাঠানো হবে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায়।

ঝিকরগাছার পানিসারা এলাকার ফুলচাষি রবিউল ইসলাম বলেন, এবার সব জাতের ফুলের দাম ভালো। আশা করছি. ভালোবাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে গত কয়েক বছরের রেকর্ড ভঙ্গ করে এবার ফুল বেচাকেনা হবে। এবছর ৫ বিঘা জমিতে চন্দ্রমল্লিকা লাগিয়েছিলাম। ৩ বিঘার ফুল বিক্রি শেষ হয়েছে। কিছুদিন পূর্বে ফুলের দাম কম থাকায় ৫০০ টাকা দরে হাজার বিক্রি হয়েছে। তবে এখন দুই টাকা পিস বিক্রি হচ্ছে। 

ফুল ব্যবসায়ী হৃদয় হোসেম বলেন, এবছর ফুল খুব ভালো হয়েছে। সারা বছরের মধ্যে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহের পর ফুলের চাহিদা ব্যাপক বেড়ে যায়। এই ফেব্রুয়ারিতে সবচেয়ে বেশি দামে ফুল বিক্রি হয়। 

বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটি ও যশোর ফুল উৎপাদক ও বিপনন সমিতির সভাপতি আব্দুর রহিম জানান, গত কয়েক বছর মহামারীর ভয় কাটিয়ে চাষিরা এবার নতুন করে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। বসন্তবরণ উৎসব, ভালবাসা দিবস আর ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ফুল বিক্রির আশায় চাষীরা প্রস্তুতি গ্রহণ করছে।

তিনি আরও বলেন, গত কয়েক মৌসুমের তুলনায় চলতি বছরে দাম ও বেচাকেনা দুটোই ভালো হওয়ায় চাষীরা দারুণ খুশি। ফুলের উৎপাদন, চাহিদা ও দাম-সবই বেশ ভালো। এ অঞ্চলের ফুলচাষি ও ব্যবসায়ীদের মুখে হাসি ফুটেছে। এবার ৫০ কোটি টাকার ফুল বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

এএইচ


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি