ঢাকা, রবিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

এনজিও’র নামে ২০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে উধাও 

বেনাপোল প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ১০:৩২, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

Ekushey Television Ltd.

যশোরের শার্শা উপজেলায় ‘পল্লী উন্নয়ন সমিতি’ নামে একটি এনজিও হতদরিদ্র কয়েকশ’ গ্রাহককে ঋণ দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে প্রায় ২০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে পালিয়ে গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

উপজেলার জামতলা সামটা গ্রামে অবস্থিত এনজিওটির অফিসে এসে ভুক্তভোগীরা একত্রিত হয়ে এ অভিযোগ করেন।

যে ব্যক্তি পাঁচ হাজার টাকা দেবেন তাকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ, যিনি ১০ হাজার দেবেন তাকে এক লাখ ও ২০ হাজার টাকা দিলে দুই লাখ টাকা ঋণ দেওয়া হবে, এই প্রলোভনে পড়ে শার্শা ও ঝিকরগাছা উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের প্রায় ২শ’ মানুষ আজ পথে বসেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এক সপ্তাহ আগে প্রতারক চক্র নিজেদেরকে বিদেশি সংস্থার কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে সরকার অনুমোদিত এনজিও দাবি করে উপজেলার সামটা গ্রামের আব্দুল খালেকের ছেলে মনিরুজ্জামান মনিরের বাড়িতে কার্যক্রম চালু করে।

ওই অফিস থেকে শার্শা উপজেলার জামতলা, সামটা, টেংরা, মহিশাকুড়া, হাড়িখালি ও ঝিকরগাছা উপজেলার দেউলি, পাঁচপোতা, মাটিকোমরা, নায়ড়া ও তার আশপাশ এলাকার অন্তত দুই শতাধিক হতদরিদ্র মানুষকে ঋণ দেওয়ার কথা বলে তাদের থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়। 

এরপর সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে অফিস উদ্বোধন করার কথা বলে অফিস ও তার আশপাশ ডেকোরেশন করেন।

জামতলা বাজারের মর্ডান ডেকোরেটরের মালিক আল-মামুন বলেন, সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে অফিস উদ্বোধনের জন্য স্টেজ প্যান্ডেল তৈরি করি। সমস্ত কিছু শেষ হওয়ার পর কিছু টাকা বায়না দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু রোববার বিকাল থেকে তারা লাপাত্তা। তাদের ফোনও বন্ধ রয়েছে।

এনজিওর কর্মকর্তারা লাপাত্তা হয়ে যাওয়ার সংবাদ পেয়ে ঋণ প্রত্যাশীরা সোমবার সকাল থেকে এনজিও অফিসে সামনে দাঁড়িয়ে পাওনা টাকা আদায়ের জন্য কান্নাকাটি শুরু করেন।

সামটা গ্রামের আব্দুল জলিলের স্ত্রী নবিছন নেছা দিয়েছেন ৬ হাজার ৫শ’ টাকা, একই গ্রামের আয়ুব আলির স্ত্রী আফরোজা খাতুন দিয়েছেন ১০ হাজার টাকা, মাসুমের স্ত্রী ফিরোজা বেগম দিয়েছেন ১০ হাজার টাকা। মহিষাকুড়া গ্রামের মফেজ উদ্দিন ১১ হাজার টাকা, চেয়ারবানু ১৮ হাজার টাকা, রহিমা খাতুন ৩৩ হাজার টাকা, হাড়িখালি গ্রামের নবিছন নেছা ১১ হাজার টাকা, ইশারুল ইসলাম ২১ হাজার ৫০০ টাকা, টেংরা গ্রামের রুপিয়া বেগম ২০ হাজার টাকা, সুমাইয়া খাতুন ২২ হাজার টাকা, আনারুল ইসলাম ২০ হাজার টাকা, সালমা খাতুন ৫ হাজার টাকা, নায়ড়া গ্রামের শহিদা খাতুন ৩৩ হাজার টাকা দিয়েছেন। এভানে অনেকেই জমা দেন টাকা।

টেংরা গ্রামের সুমাইয়া খাতুন ২২ হাজার টাকা আমানত হিসেবে জমা দিয়েছে। স্বামী বিদেশ যাবে তিন লাখ টাকা দরকার তাই সোমবার আমানতের বাকি ১০ হাজার টাকা নিয়ে এসে দেখেন সবাই লাপাত্তা।

এ সময় সামটা গ্রামের রবিউল ইসলাম বলেন, এক লাখ টাকা ঋণ দেবে বলে ওরা আমার কাছ থেকে ১১ হাজার টাকা আমানত নিয়েছে। সোমবার ঋণের টাকা দেওয়ার কথা ছিল কিন্তু এসে দেখি সবাই হাওয়া। 

ভুক্তভোগী হাড়িখালি গ্রামের আফরোজা বেগম জানান, তার বাড়িতে কেন্দ্র গঠন করে দুই বছর মেয়াদে দুই লাখ টাকা করে ঋণ দেয়ার কথা বলে প্রত্যেকের থেকে ২০ হাজার করে টাকা জামানত নেয় এনজিওর কর্মকর্তারা। এখন ঋণ নিতে এসে দেখেন অফিসে ফাঁকা। এনজিও কর্মকর্তাদের ফোন নম্বরও বন্ধ পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে অফিস ভাড়া দেওয়া বাড়ির মালিক মনিরুজ্জামান জানান, এক সপ্তাহ আগে মাসিক ২৫ হাজার টাকায় ওই এনজিওর কর্মকর্তারা বাড়িটি ভাড়া নেয়। সোমবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) অফিস উদ্বোধন করা হবে। ওই সময় অফিসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এসে তিন লাখ টাকা জামানত দিয়ে চুক্তিনামা করবেন বলে বলেছিলেন। রোববার বিকাল থেকে আমার বাড়ির রুমগুলো ফেলে রেখে এনজিওর কর্মকর্তারা পালিয়েছে। 

শার্শার বাগআঁচড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল খালেক বলেন, এভাবে একটি এনজিও’র নামে অফিস ভাড়া করেছে, তা আমার জানা ছিল না। এ ব্যাপারে কেউ তার সঙ্গে যোগাযোগও করেনি।

শার্শা থানার ওসি এসএম আকিকুল ইসলাম বলেন, এমন ধরনের কোন তথ্য আমাদের কাছে নেই। কোন অভিযোগও এখনও পায়নি। অভিযোগ পেলে তদন্তসাপেক্ষ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

এএইচ


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি