ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪

সিরাজগঞ্জে কৃষকদের ঐতিহ্যের লাঠিবাড়ি খেলা

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ১১:৩১, ১ মে ২০২৩ | আপডেট: ১২:১৭, ১ মে ২০২৩

শুধু কর্মে নয়, জীবনধারা বিকোশিত করতে হলে নির্মল চিত্ত বিনোদনে চাই আবহমান গ্রাম বাংলার সংস্কৃতি ও খেলাধুলা। নানা প্রতিকুলতায় আমাদের ঐতিহ্যবাহী লাঠিবাড়ি, হা-ডুডু, ঘোড়দৌড়, ষাড়ের লড়াই সহ নানা খেলা বিলুপ্তির পথে। তবে সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর মন্ডলপাড়ার কৃষকেরা শতবছর ধরে টিকে রেখেছে ঐতিহ্যবাহী লাঠিবাড়ি খেলা।

সরল মানুষ গুলো ঈদ পরবর্তী বিনোদনে নতুন মাত্রা যোগ করতে আত্মার প্রশান্তি মেটাতে তাই আনন্দে মেতেছিলেন এই খেলায়। ঢাক-ঢোলের বাদ্যের তালে-তালে লাঠি বাড়ি খেলা দেখতে ছিল অগনিত মানুষের উপচেপড়া ভীড়। গাঁয়ের শিশু-কিশোরী থেকে শুরু করে বধুরাও এসেছিল আনন্দ কুড়াতে। তখন লাঠিয়ালদের নৈপুন্য খেলার উৎসাহ যোগাতে উপস্থিত সহস্রাধিক মানুষের করতালিতে ছিল বাধ ভাঙ্গা উচ্ছাস।  

রবি শষ্য সরিষা ঘরে তুলে জমিতে বোরো ধান রোপনের পর ঈদ-উল-ফিতর শেষে পরিবার নিয়ে কিছুটা আরাম আয়েশে এনায়েতপুর মন্ডলপাড়ার কৃষকেরা। এ সুযোগ কাজে লাগাতে প্রতিবারের ন্যায় এবারও শত বছরের ধারাবাহিকতায় ঐতিহ্যের লাঠিবাড়ি খেলা আহবান করে গত সপ্তাহ খানেক আগে প্রচারনা চালায় মন্ডলপাড়া গ্রামবাসী।  

আয়োজনের দিন গত শনিবার সকালে মন্ডলপাড়া মোড়ের পাশে গোপরেখী গ্রামের ঢাক-ঢোলক বাদক বৃদ্ধ আব্দুস ছোবহান ও দৌলতপুরের আব্দুল গণি চলে আসেন। তাদের ঢোলে বাড়ি পড়তেই মাইকের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে বার্তা। ছুটে আসতে থাকে বিভিন্ন বয়সী নারী পুরুষ থেকে শুরু করে শাহজাদপুর, বেলকুচি ও এনায়েতপুর থানার বিভিন্ন গ্রাম থেকে চৌকষ লাঠিয়ালরা। দুপুরের আগ পর্যন্ত চলে প্রাথমিক খেলা।

মধ্যান্থ ভোজের পর শুরু হয় মূল খেলা। পুরো মাঠ জুড়ে কানায়-কানায় ভরে যায় দর্শকে। নারীদের উপস্থিতও কম ছিলনা। দাদা-নাতি, নানা-নাতী সহ ৪৪ জন পারদর্শী লাঠিয়াল খেলোয়াড় দু গ্রুপে বিভক্ত হয়ে প্রথমেই সম্মিলিত কণ্ঠে ডাক তুলে একে অপরকে লড়তে উৎসাহ যোগায়।

এরপর ঢোলকদের বাদ্যের তাল মিলিয়ে প্রবীণ লাঠিয়ালদের নির্দেশে শুরু হয় ঐতিহ্যের লাঠিবাড়ি খেলা। সাথে প্রতিযোগীদের কোমড় দোলানো নাচে দর্শকদের আনন্দে যোগায় ভীন্ন মাত্রা। তবে খেলায় মন্ডলপাড়ার প্রবীন খেলোয়ার জহুরুল ইসলাম ও নাতী এবং পাঁচিলের কাশেম আলী শেখ ও এনায়েতপুরের নাতী আলামিন সরকার এবং ব্রাক্ষ্মনগ্রামের জাকারিয়া শেখ, মন্ডলপাড়ার আইয়ুব আলী শেখ এর খেলার নৈপুন্য মুগ্ধ করে সকলকে।

এ ব্যাপারে দাদা জহুরুল ইসলাম ও নানা কাশেম আলী শেখ জানান, আগে শরীরের অবস্থা ভাল ছিল। বেশ গতর খাটিয়ে খেলতাম। এখন আর সেই অবস্থা নেই। ঢাকের বারি পড়ছে থাকতে না পেরে তাই ৭/৮ বছরের নাতীদের নিয়ে মাঠে নেমেছি। সবাই তালি দিয়ে উৎসাহ যোগাচ্ছে, এটাই তো আমাদের বড় পাওয়া। তারা আরো জানান, আগে মাসে-মাসে বিভিন্ন জায়গায় এ খেলা হতো। এখন আর তা নেই। আমরা চাই অন্তত এখানে যেন এই খেলা অব্যাহত রাখে।

এদিকে ব্রাক্ষ্মনগ্রামের লাঠিয়াল জাকারিয়া শেখ, মন্ডলপাড়ার আইয়ুব আলী শেখ জানান, আমসাদের পুর্ব পুরুষ লাঠিবাড়ি খেলেছে। তাদের দেখে আমরা এখন মাঠে খেলছি। তবে সেরকম এ খেলার প্রচলন না থাকায় অনেকটা বিলুপ্তের পথে। তবে বিপুল উৎসাহে মানুষ গ্রহণ করায় লাঠিবাড়ি খেলাকে সকলের উদ্যোগে বাঁচিয়ে রাখতে হবে।

এছাড়া খেলা চলাকালীন পাঁচিল গ্রামের কয়েক লাঠিয়ালের বড় ছুরির উপর হাঠা ও আঘাতের কসরত উপস্থিত সকলকে বিনোদনে অনুনত্য যোগ করে।

খেলা দেখতে আসা খোকশাবাড়ি গ্রামের আলতাফ হোসেন, বৃদ্ধ আজহার আলী, কোহিনুর বেগম, কিশোর আব্দুল আলিম জানান, ঢাকের তালে-তালে লাঠিয়ালদের খেলায় আমাদের মুগ্ধ করেছে। গ্রাম বাংলার এমন খেলা ছড়িয়ে যাক সবার অন্তরে। নির্মল বিনোদনে আমরা আসলেই উচ্ছাসিত।

খেলা দেখতে আসা কুমিল্লার মুরাদনগরের নাজমুল ইসলাম রুবেল ও বগুড়ার সারিয়াকান্দির প্রকৌশলী আবুল কালাম জানান, আমরা শুনেছি এখানে প্রতিবার লাঠিবাড়ি খেলা হয় বিপুল মানুষের উপস্থিতিতে। এবার নিজেরা উপস্থিত হয়ে আত্বতৃপ্ত হয়েছি। আসলে মন মুদ্ধকর গ্রামীন আয়োজন সকলকে অভিভুত করেছে।  

এসবি/ 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি