ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ০৩ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

আদালতে যাওয়ায় কর্মচারির বেতন বন্ধ করলেন প্রধান শিক্ষক

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ১২:৪২, ২১ নভেম্বর ২০২৩

Ekushey Television Ltd.

কুড়িগ্রামে আদালতের শরণাপন্ন হওয়ায় বিনা নোটিশে ৪র্থ শ্রেণির এক কর্মচারীর বেতন-ভাতা বন্ধ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে যাদুরচর দ্বিমুখী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মতিনের বিরুদ্ধে। নিয়মিত দায়িত্ব পালনের পরও গত দু’মাস ধরে বেতন-ভাতা না পেয়ে পরিবার নিয়ে এখন মানবেতর জীবন যাপন করছেন ভুক্তভোগি। এ ছাড়া মামলা প্রত্যাহার না করলে চাকরিচ্যুতির হুমকিসহ নানা ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ করেন ওই কর্মচারী। 

প্রধান শিক্ষকের এমন স্বেচ্ছাচারিতা ও অমানিবক আচরণে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিদ্যালয়ের দাতা সদস্য, শিক্ষক-কর্মচারীসহ অভিভাবকরা।    

জানা যায়, ২০০৯ সালের ১৩ জুন রৌমারী উপজেলার যাদুরচর দ্বিমুখী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী (পিয়ন) পদে নিয়োগ পান বাবলু মিয়া। একই বছরের নভেম্বর মাসে তিনি এমপিওভুক্ত হন এবং তার ইনডেক্স ১০৩৯৯৯৬। তিনি উচ্চতর গ্রেডও পেয়ে আসছিলেন। গত ২০১৪ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী ‘পিয়ন’ পদটির নাম পরিবর্তন করে ‘অফিস সহায়ক’ নামকরণ করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। পিয়ন পদে থাকা বাবলু মিয়াকে ‘অফিস সহায়ক’ পদটি না দিয়ে ওই পদে নিজের পছন্দের লোক নিতে একে একে দু’বার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন প্রধান শিক্ষক। 

এ নিয়ে গত ১৭ এপ্রিল রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দেন ভুক্তভোগি ওই কর্মচারী। এর কোনো প্রতিকার না পেয়ে আদালতের শরণাপন্ন হন ভুক্তভোগি।। গত ২৪ জুলাই কুড়িগ্রামের রৌমারী সহকারী জজ আদালতে মামলা দায়ের করেন পিয়ন বাবলু মিয়া। 

পরে ২৮ আগস্ট উভয়পক্ষের শুনানী শেষে আদালত অফিস সহায়ক নিয়োগের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে কর্মচারী বাবলু মিয়ার বেতন-ভাতা বন্ধ করে দেন প্রধান শিক্ষক। কর্মস্থলে নিয়মিত উপস্থিত হলেও প্রধান শিক্ষক তার ক্ষমতা বলে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করতে দেন না ভুক্তভোগীকে। 

বিদ্যালয় প্রধানের এমন অমানবিক আচরণের কারণে বেতন ভাতা বন্ধ থাকায় ৫ সদস্যের পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন ভুক্তভোগি। পিয়ন বাবলু মিয়া বলেন, নিয়মিত কর্মস্থলে দায়িত্ব পালন করলেও গত দুই মাস ধরে বেতন-ভাতা দিচ্ছেন না প্রধান শিক্ষক আব্দুল মতিন। বেতন বন্ধের আগে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাকে কোনো প্রকার নোটিশও দেননি। এখন বেতন না পেয়ে খুব কষ্টে আছি। ঘরে খাবার নেই। অসুস্থ্য স্ত্রীর জন্য ওষুধ কিনতে পারছি না। সন্তানদের লেখাপড়াও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। 

বেতন-ভাতা বন্ধের পর প্রধান শিক্ষক চাকরি খাওয়ার হুমকি দিচ্ছেন। সরকারের কাছে এর সুবিচার চান তিনি। 

প্রধান শিক্ষকের স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ করে বিদ্যালয়ের দাতা সদস্য সোহরাওয়ার্দী বলেন, বিদ্যালয়ে কখন কোন বিজ্ঞপ্তি হয় তা জানতে পারি না। পিয়ন বাবলু মিয়ার সাথে যা করা হচ্ছে তা খুবই অমানবিক। সঠিক তদন্ত করে দৃষ্টন্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তিনি।

ওই বিদ্যালয়ের অভিভাবক সদস্য জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী (পিয়ন) বাবলু মিয়ার সাথে প্রধান শিক্ষক যা করছেন তা অত্যন্ত অমানবিক ও দু:খজনক। এতে করে বিদ্যালয়ের পড়ালেখার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।

প্রধান শিক্ষক আব্দুল মতিন বলেন, ‘বাবলুকে আমিই নিয়োগ দিয়েছি। ওর তো পদই নেই। ওকে যখন যে পদ দিবো সে পদেই চাকরি করতে হবে।’ 

নিয়মিত দায়িত্ব পালনের পরও বিনা নোটিশে বেতন-ভাতা বন্ধের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাকে নিরাপত্তাকর্মী (নব সৃষ্ট পদ) দেওয়া হয়েছে। এ পদে স্বাক্ষর না করায় তার বেতন–ভাতা বন্ধ রয়েছে।

রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদ হাসান খান বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। ওই সময় দায়িত্বে ছিলাম না। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিবেন বলে জানান তিনি।

এএইচ


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি