ঢাকা, শুক্রবার   ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪

সন্দ্বীপে যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান বিজয় দিবস পালিত

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৯:৫০, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৩

আজ বাঙালির গৌরবময় মহান বিজয় দিবস। বাঙালি জাতির হাজার বছরের শৌর্যবীর্য এবং বীরত্বের এক অবিস্মরণীয় গৌরবময় দিন। বীরের জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার দিন। পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন ভূখণ্ডের নাম জানান দেওয়ার দিন।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৪৮ সাল থেকে ’৫২ এর ভাষা আন্দোলন, ’৬৬ এর ছয় দফা, ’৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭১ এর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ, ২৫ মার্চে গণহত্যা শুরু হলে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা, ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর সরকার গঠন এবং রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে ৩০ লাখ শহীদ ও দু’লাখ মা-বোনের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয় স্বাধীনতা।  ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাক সেনাদের আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়। সেই হিসাবে বিজয়ের ৫৩ বছর পূর্তির দিন আজ।

শহীদদের দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপন করেছে সন্দ্বীপ উপজেলা প্রশাসন। দ্বীপ উপজেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন সংগঠন আজ প্রত্যুষে সন্দ্বীপ উপজেলা পরিষদ মাঠে ৩১ বার তোপধ্বনির পর পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন। 

সকল সরকারি, বেসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। সকাল ৮টায় সন্দ্বীপ উপজেলা মাঠে আনুষ্ঠানিক জাতীয় পতাকা উত্তোলন, কুচকাওয়াজ ও শরীর চর্চা প্রদর্শন, অংশগ্রহণ করে পুলিশ আনসার ও ভিডিপি, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, রোভার স্কাউট, স্কাউট, গালর্স গাইড, ও শিশু কিশোর সংগঠন। 

প্রথমিক বিদ্যালয়ের বালক বালিকাদের দৌড়, মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বালকদের মোড়ক লড়াই, এবং বালিকাদের দড়ি লাফ, 

এরপর বেলা ১১টায় সন্দ্বীপ উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে কবি আবদুল হাকিম পাবলিক অডিটরিয়ামে বীরমুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা প্রদান করা হয়। এসময় জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বিনির্মানে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ ও ডিজিটাল প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।  আজ দুপুর দেড়টায় হাসপাতালে ও এতিম খানা সমূহে উন্নত মানের খাবার পরিবেশন করা হয়। বিকেল ৪টায় উপজেলা পরিষদ বনাম সন্দ্বীপ পৌরসভা একাদশ প্রতি ফুটবল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়, সন্ধ্যা ৬টা মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচিত্র প্রদর্শনী ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করা হয়। 

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন সন্দ্বীপ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মাইন উদ্দীন মিশন, সভাপতিত্ব করেন সন্দ্বীপ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. খোরশেদ আলম চৌধুরী। এসময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি সৈয়দ মুরাদ হোসেন, সন্দ্বীপ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কবির হোসেন, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মারুফ হোসেন, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ ইসমাইল, উপজেলা প্রকৌশলী নুরননব্বী, উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন বেদন, সভা সঞ্চালনা করেন উপজেলা শিক্ষা অফিসার খোরশেদ আলম।

বিজয় দিবসকে কেন্দ্র করে উপজেলা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুলেল শ্রদ্ধা জানিয়েছে বেশ কিছু সংগঠন। এর মধ্যে সন্দ্বীপ উপজেলা প্রশাসন, সন্দ্বীপ থানা, সন্দ্বীপ উপজেলা আওয়ামী লীগ, উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ, উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ, সন্দ্বীপ ফেন্ডস সার্কেল অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ হিন্দু বোদ্ধ খৃষ্টান সন্দ্বীপ শাখা, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ সন্দ্বীপ, উপজেলা মুক্তিযুদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল, মুক্তিযুদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড কাউন্সিল, সন্দ্বীপ পৌরসভা, সন্দ্বীপ উপজেলা দুর্নীতি দমন কমিশন, এসডিআই কৌশর কর্মসূচি, বাংলাদেশ প্রেস ক্লাব সন্দ্বীপ উপজেলা শাখা, বাংলাদেশ জুয়েলারি সমিতি সন্দ্বীপ শাখাসহ অনেক।

উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর এদিন বাঙালি জাতি পরাধীনতার শেকল ভেঙ্গে প্রথম স্বাধীনতার স্বাদ গ্রহণ করে। ২৪ বছরের নাগ পাশ ছিন্ন করে জাতির ভাগ্যাকাশে দেখা দেয় এক নতুন সূর্যোদয়। প্রভাত সূর্যের রক্তাভা ছড়িয়ে পড়ে বাংলাদেশের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে। সমস্বরে একটি ধ্বনি যেন নতুন বার্তা ছড়িয়ে দেয় ‘জয়বাংলা’ বাংলার জয়, পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে, রক্ত লাল, রক্ত লাল, রক্ত লাল। আদি বাঙালির সাংস্কৃতিক ও আর্থ-সামাজিক জীবন এবং ক্রমবিকাশের চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে বাঙালির শৌর্যবীর্য যেন আর একবার ধপ করে জ্বলে উঠে। প্রথম আগুন জ্বলে ৫২’র একুশে ফেব্রুয়ারি। ফাগুনের আগুনে ভাষা আন্দোলনের দাবি আর উন্মাতাল গণমানুষেল মুষ্টিবদ্ধ হাত একাকার হয়ে যায় সেদিন। ভাষার জন্য প্রথম বলীদান বিশ্ববাসী অবাক বিস্ময়ে লক্ষ্য করে। সেই থেকে শুরু হয়ে যায় বাঙালির শেকল ভাঙার লড়াই।

পাকিস্তানিদের সাথে হিসেব-নিকেশের হালখাতার শুরুতেই রক্তের আঁচড় দিয়ে বাঙালি শুরু করে তার অস্তিত্বের লড়াই। পলাশীর আম্রকাননে হারিয়ে যাওয়া সেই সিরাজদ্দৌলা আবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রূপে এ লড়াইয়ে সেনাপতি হিসেবে আবির্ভূত হন। ’৫২ সালে যে আগুন জ্বলেছিল রাজধানী ঢাকা শহরে সে আগুন যেন ক্রমান্বয়ে ছড়িয়ে পড়তে থাকে দেশের আনাচে-কানাচে সব খানে। যে আগুন জ্বলেছিল মোর প্রাণে, সে আগুন ছড়িয়ে গেল সব খানে সবখানে। বাঙালির বুকের ভেতর জ্বলে উঠা আগুন যেন বাঙালির মধ্যে প্রবাহিত হতে থাকে। বাষট্টি, ঊনসত্তর এবং ’৭০ শেষ করে একাত্তরে বাঙালি জাতি হিসাব করতে বসে। হিসেব-নিকেশ আর দেনা-পাওনায় পাকিস্তানীরাও বসে নেই। তারাও অংক কষতে থাকে কিভাবে বাঙালি জাতিকে যুগ যুগ ধরে পরাধীনতার শেকল পরিয়ে রাখা যায়। তাদের কাছে এই অলংকারই বাঙালির শ্রেষ্ঠ প্রাপ্য। ঘড়ির কাঁটার টিক টিক শব্দ জানিয়ে যায় সময় আসছে হিসেব নিকেশ চুকিয়ে দেয়ার পালা।

অবশেষে গভীর কালো নিকষ আঁধার থেকে জেগে উঠে হিরন্ময় হাতিয়ার। সাত মার্চ একাত্তরের বিশাল জনসমুদ্র থেকে এক যুগের কবি, মহাকাব্যের প্রণেতা বঙ্গবন্ধু বজ্রকণ্ঠ ঘোষণা দেন ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তি সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। রক্ত যখন দিয়েছি তখন আরো দেব, তবুও এদেশকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাল্লাহ।’ এই একটি মাত্র উচ্চারণে যেন বাঙালি সত্যিকার দিক-নির্দেশনা পেয়ে যায়। চূড়ান্ত লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিতে থাকে বাঙালি। বাঙালি বুঝে যায় শেষ কামড় দেয়ার সময় আসন্ন। পাকিস্তানীরাও আর বসে নেই। পুরো জাতিকে স্তব্ধ করার লক্ষ্যে মারাত্মক মারণাস্ত্র নিয়ে ২৫ মার্চ একাত্তর ঘুমন্ত জাতির উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। শুরু হয় বাঙালি নিধন যজ্ঞ। বাতাসে লাশে গন্ধ বারুদে বারুদে ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন আকাশ। এ যেন এক প্রেতপুরী। আকাশে শকুনের উদ্যত থাবা, নিচে বিপন্ন মানুষের বিলাপ। হায় বাংলাদেশ। একি বাংলাদেশ। এ যেন এক জ্বলন্ত শশ্মান। কিন্তু ঠিকই হাড়ের খুলীরা একদিন পাললিক হয়। মুক্তি পাগল বাংলার দামাল ছেলেরা স্বাধীনতার রক্ত সূর্যকে ছিনিয়ে আনবে বলে একদিন অস্ত্র কাঁধে তুলে নেয়। ছাত্র, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, কৃষক, শ্রমিক, কামার কুমার সবাই শরিক হয়ে থাকে এ লড়াইয়ে। যতই দিন অতিবাহিত হতে থাকে আরো শাণিত হয় প্রতিটি মুক্তিযোদ্ধার অস্ত্র। লক্ষ্য স্থির রেখে শত্রু হননে দৃঢ়তায় এগিয়ে যায় বীর বাঙালি।

ইতোমধ্যেই বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনের প্রতি আন্তর্জাতিক সমর্থন স্পষ্ট হয়ে উঠে। প্রতিবেশী ভারতও জড়িয়ে পড়ে বাঙালির ভাগ্য যুদ্ধে। ডিসেম্বর শেষ পর্যায়ে এসে চূড়ান্ত রূপ নেয় এই যুদ্ধের। অবশেষে নয় মাসের দুঃস্বপ্নের অবসান ঘটিয়ে বাঙালি জাতির জীবনে এলো নতুন প্রভাত। এলো হাজার বছরের কাক্ষিত স্বাধীনতা। ১৬ ডিসেম্বর সূর্যোদয়ের সাথে সাথে সূচিত হলো মুক্তিযুদ্ধের অনিবার্য বিজয়। বাঙালি জাতি এদিন অর্জন করে তার ভাগ্য নিয়ন্ত্রণের অধিকার। ত্রিশ লাখ শহীদের রক্ত আর লাখ লাখ ধর্ষিতা মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে স্বাধীনতা ধরা দেয় বাঙালির জীবনে।
কেআই//


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি