ঢাকা, বুধবার   ২৭ নভেম্বর ২০২৪

খোকসায় সমন্বিত কৃষি খামার করে স্বাবলম্বী মনিরুল

রঞ্জন ভৌমিক 

প্রকাশিত : ১৮:৪৮, ১৪ জানুয়ারি ২০২৪

বাড়ির আঙিনায় উচ্চমূল্যের  ফলনশীল ফলের আবাদ করে নিজেকে স্বাবলম্বী করেছেন স্কুলের অফিস সহায়ক মনিরুল ইসলাম। পাঁচ বছর আগে বাবার হাতে পেঁপের চারা লাগিয়ে ফল ফলাদির গাছ লাগানোর হাতে খড়ি মনিরুলের। সেই থেকে আর পিছে তাকাতে হয় নাই । ফলের গাছ লাগানো পাগল মনিরুলের নেশায় পরিণত হয়। 

বর্তমানে ১২ বিঘা জমিতে মনিরুলের উচ্চ মূল্যের ফলনের ফল ফলাদির ১২ রকমের ফলের সুষম বাগান গড়ে উঠেছে। 
বাড়ির আঙিনায় ঢুকলেই প্রথম চোখে পরে বল সুন্দরী কুল ও চায়না থ্রী কুল নামে দুই জাতের বিশাল কুল বাগান। প্রথম বছরে মাত্র ৮০ হাজার টাকা ব্যয় করে দেড় লক্ষ টাকা আয় করেন মনিরুল। তারপরের বছর থেকে আর পিছে তাকাতে হয়নি ফল প্রেমিক মনিরুলের। বর্তমানে তার কুল বাগানে দুই জাতের কুলের শোভা পাচ্ছে যা বিক্রি করলে এখনো তিন থেকে চার লক্ষ টাকা কুল বিক্রয় হবে বলে তিনি দাবি করেন। 

ফুল বাগানের পাশেই ৮ শতাংশ জমির উপর গড়ে তুলেছেন চায়না থ্রি কাগজি লেবু বাগান। মাত্র ৩ হাজার টাকা ব্যয় করে চায়না থ্রি বারোমাসি লেবু কাট লেবু বিক্রি করে প্রায় লক্ষাধিক টাকার লেবু বিক্রি করেছেন এ বছর এখনো পর্যন্ত যে লেবু রয়েছে তা প্রায় লক্ষাধিক টাকা বিক্রি করা যাবে বলে তিনি প্রতিবেদককে জানান। 

পাশেই প্রায় দেড় বিঘা জমি জুড়ে গড়ে তুলেছেন চায়না ইয়েলো কমলা ও গ্রীন জাতের কমলার বাগান যা কিনা গত পাঁচ বছর যাবত একাধারে ১২ মাসে কমলা ফল আবাদ হয়ে আসছে। 

উচ্চ মূল্যের ফল প্রেমিক মনিরুল পাশে প্রায় এক বিঘা জমি নিয়ে আবাদ করেছেন ইয়েলো মালটা চাষ। যে বাগানে মাত্র এক লক্ষ টাকা ব্যয় করে এখন প্রায় ৮ লক্ষ টাকার উপরে মালটা বিক্রি করেছেন বলে জানান। তার বাগানে এখনো পর্যন্ত পর্যাপ্ত পরিমাণ মালটা রয়েছে। 

চায়না থ্রী পেয়ারা ও বারি কাজি ১২ মাসি পেয়ারার আবাদ করে সারা বছরই ভিটামিন সি এর অভাব পূরণ করছেন। বাগানের একদিকে যেমন পেয়ারা  অপরদিকে নতুন ফুল ও ফলে সুসজ্জিত হচ্ছে পেয়ারার বাগান। 

নিজের একাকীত্ব সাধনা ও একগ্রতা সম্পূর্ণটাই তারাই উচ্চমূল্যের ফলনশীল বাগানে প্রয়োগ করে আধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন ড্রাগন চায়না বাগানের বিশাল এরিয়া ড্রাগন চারা বপন করেছেন। তিনি আশা করেছেন আগামী বছর থেকেই উচ্চমূল্যের ড্রাগন ফল উৎপাদিত হবে। 

নিজে সামান্য শিক্ষিত হয়ে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস থেকে উন্নত প্রযুক্তি নির্ভর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে এবং কৃষি সম্প্রসারণ অফিস থেকে সরকারি প্রণোদনা গ্রহণ করে উচ্চমূল্যের  ফলনশীল ফল বাগানের আশায় নিজেকে আত্মনিয়োগ করেন। 
তার বাগানে প্রায় ১২ রকমের বিভিন্ন ফল ফলাদি ১২ মাসে শোভা পায়। তবে এর মধ্যে ১২ মাসে কদবেলটার বেশি চাহিদা রয়েছে বলে তিনি দাবি করলেন। বাজারে চায়না কদবেল প্রতি পিস ৫০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হয় এবং প্রচুর চাহিদা থাকায় এবছর কদবেলের আবাদ বৃদ্ধি করা হয়েছে। নতুন কদবেল বিক্রি করে নিজেকে আরও বেশি স্বাবলম্বী হওয়ার আশা প্রকাশ করছেন। 
নিজের স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি উচ্চমূল্যের  ফলনশীল এ সকল গাছের নতুন যারা উৎপাদন করে স্থানীয় নতুন উদ্যোক্তার উৎসাহ অনুপ্রেরণা যোগাচ্ছে।

আলাপচারিতার এক পর্যায়ে বাগানের মধ্যে প্রায় ৮-৯ জন ব্যক্তিকে কাজ করতে দেখে তিনি বলেন, তার বাগানে বারোমাসি এ সকল লোক গুলো কর্মে নিযুক্ত রয়েছে। একদিকে নিজেকে যেমন স্বাবলম্বী করেছেন তেমন ফল বাগান তৈরি করে অন্য আরও ৮-১০ জনের কর্মসংস্থান করেছেন। এরকম বাড়ির আঙিনায় পতিত জমিতে উচ্চ ফলন  গাছের আবাদে স্থানীয় বেকার সমাজ অনুপ্রেরণা হতে পারে বলে উপজেলা কৃষি অফিসের দাবি। 

এ সকল বিষয় নিয়ে উপজেলা কৃষি অফিসের কর্মকর্তা কৃষিবিদ সবুজ কুমার সাহা বলেন , সমন্বিত উচ্চমূল্যের ফলনশীল গাছের আবাদ করে মনিরুল যে অনুপ্রেরণা দেখিয়েছে তা এলাকার বেকারদের অনুপ্রেরণা হতে পারে।


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি