ঢাকা, রবিবার   ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪

৩২শ’ কোটি টাকা বাণিজ্যের আশা, কর্মমুখর সিরাজগঞ্জের তাঁতকুঞ্জ

স্বপন মির্জা, সিরাজগঞ্জ থেকে

প্রকাশিত : ১১:৫২, ২৪ মার্চ ২০২৪ | আপডেট: ১১:৫৪, ২৪ মার্চ ২০২৪

তাঁত শিল্প নির্ভর আর ‘তাঁত কুঞ্জ’ ব্রান্ডিং সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর, বেলকুচি, শাহজাদপুরসহ অন্যান্য এলাকায় ঈদ উপলক্ষে তাঁত শ্রমিকদের ব্যস্ততার শেষ নেই। দিন-রাত চলছে বুননের নানা কাজ। জেলার পাইকারী হাটগুলোতেও বেঁচা-কেনা এখন তুঙ্গে। আশা করা হচ্ছে, এ মৌসুমে ৩২শ’ কোটি টাকা ঘরে তুলবে তারা। 

একইভাবে ঈদ উপলক্ষে ভারতে শত কোটি টাকার রপ্তানী হয়েছে এখানকার বাহারী সুতি শাড়ী-লুঙ্গী।

জানা যায়, সারাবছর মানুষের বস্ত্র চাহিদা মেটাতে তাঁতশিল্প সমৃদ্ধ সিরাজগঞ্জে চৌহালী উপজেলাধীন এনায়েতপুরসহ শাহজাদপুর, বেলকুচি, বেলকুচি, উল্লাপাড়া, সদর, কামারখন্দ উপজেলায় ১৪ হাজার ৮৪৯টি কারখানায় ৪ লাখ ৫ হাজার ৬৭৯টি তাঁত রয়েছে। এতে ২০ লাখ ৮ হাজার মানুষ নিয়োজিত থেকে শাড়ী, লুঙ্গী, ধুতি, গামছা, থ্রি-পিচ সহ অন্যান্য পোশাক তৈরি করছে। 

বর্তমানে ঈদুল ফিতর উপলক্ষে দিন-রাত ব্যাপক চাহিদার শাড়ী-লুঙ্গী তৈরিতে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন তাঁতী ও শ্রমিকেরা। কাজ বেশি করলে মহাজনে সন্তুষ্টি ও বেশি মজুরী পাওয়ার আনন্দে কাজ করছেন শ্রমিকেরা। 

এ ব্যাপারে এনায়েতপুর থানার খামারগ্রামের রনজিৎ কুমার সরকার, সুজন মিয়া, এনামুল হক, গোপালপুর গ্রামের নুর হোসেন জানান, আগে যেখানে দিনে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করেছি। এখন মহাজনের চাপ থাকায় ভোর থেকে রাত ১০-১১ পর্যন্ত কাজ করছি। এতে সপ্তাহে অতীতে ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা মজুরী পেতাম। এখন সেখানে ৫ হাজার টাকার চেয়ে বেশি পাচ্ছি। এতে পরিবারের সবাইকে নিয়ে ঈদ আনন্দ বাড়বে আমাদের।  

অন্যান্য বছরের ন্যায় খামারগ্রামের তাঁত ব্যবসায়ী আফজাল হোসেন লাভলুর কারখানার শ্রমিকেরা এবারও ঈদ বোনাস পাবে বলে আনন্দিত।

ঈদ উপলক্ষে ৮শ’ থেকে ৩ হাজার টাকা দামের সুতি জামদানী, বুটিক, ইকট, সিল্কসহ বাহারী নকশার অন্যান্য শাড়ী এবং ৩শ’ থেকে ২ হাজার টাকা মূল্যের নানা ধরনের লুঙ্গী এবার বাজারে এনেছে তাঁতীরা। জেলার শাহজাদপুর, এনায়েতপুর ও সোহাগপুর পাইকারী হাট ও কারখানাগুলোতে এসব তাঁত কাপড় কিনতে সারাদেশ থেকে আসা ক্রেতাদের পদচারণায় মুখোর। বেঁচা-বিক্রি বেশ ভালোই।

এ ব্যাপারে এনায়েতপুর থানার খামারগ্রামের লাভলু বাবলু কম্পোজিট টেক্সস্টাইল মিলের এমডি তফাজ্জল হোসেন বাবলু ও খুকনী গ্রামের মিটন কটেজ ইন্ডাষ্ট্রিজের সত্তাধিকারী মাঈদুল ইসলামস মিন্টু জানান, ঈদ হচ্ছে আমাদের প্রধান মৌসুম। বেঁচা-কেনা বেশ ভালই। আশা করছি, চলতি মৌসুমে প্রায় ৩২শ’ কোটি টাকার শাড়ী-লুঙ্গী বিক্রি হবে। তবে কাঁচামালের মূল্য বৃদ্ধির ফলে লাভের পরিমাণ আশা অনুযায়ী হবেনা। মূলত তাঁতের কাঁচামাল রং,সুতাসহ অন্যান্য জিনিসের দাম কমলে লাভ বেশি হতো।

অতীতে ভারতের শাড়ীতে দেশের বাজার সয়লাভ হতো। তবে তাঁতীদের উৎপাদিত শাড়ীর গুণগত মান বৃদ্ধির পাশাপাশি বর্তমান সরকার শুল্কমুক্ত কোঠায় ভারতে তাঁতবস্ত্র রপ্তানীর সুযোগ করে দেয়ায় অন্যান্য বছরের মত এবারও ভারতে ঈদ উপলক্ষে চাহিদার শত কোটি টাকার তাঁতের শাড়ী-লুঙ্গী রপ্তানী করেছে ব্যবসায়ীরা। 

এতে সন্তুষ্টির কথা জানালেন খামারগ্রামের সফল তাঁতী ও জাতীয় কারুশিল্পী পদকপ্রাপ্ত আফজাল হোসেন লাভলু। তিনি জানান, এবার তার কয়েক কোটি টাকা মূল্যের ১৫ হাজার পিস শাড়ী ভারতে রপ্তানী হয়েছে। 

এএইচ


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি