ঢাকা, সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪

তীব্র তাপদাহে নেমে যাচ্ছে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর

প্রতিনিধিদের খবর

প্রকাশিত : ১২:৪৬, ২৩ এপ্রিল ২০২৪

তীব্র তাপদাহে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। গ্রীষ্ম মৌসুমের শুরু থেকে অধিকাংশ পাম্প ও নলকূপে পানি উঠছে না। দুর্ভোগে এসব অঞ্চলের মানুষ। তাপদাহের প্রভাব পড়ছে পরিবেশ, কৃষকের ক্ষেতসহ সর্বত্র। 

গত কয়েক বছর ধরেই ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নামছে। তবে এ বছর গ্রীষ্ম মৌসুম শুরু হওয়ার আগে ফেব্রুয়ারি মাসের শুরু থেকেই পানির স্তর নামতে শুরু করে। যা চলতি মাসের মাঝামাঝি সময়ে এসে আরও বেড়েছে। 

যশোর পৌরসভা এলাকায় পানির স্তর ২০ ফুটের নিচে নামলে হস্তচালিত নলকূপ থেকে পানি ওঠে না। যদি তা ২২ থেকে ২৩ ফুটের নিচে নেমে যায় তাহলে বাসাবাড়িতে মোটর দিয়ে পানি তোলাও অসম্ভব হয়ে পড়ে। পানি উঠছে না পৌর এলাকার কোন টিউবওয়েলে। 

যশোর পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী বি এম কামাল আহম্মেদ বলেন, “একটা প্রজেক্ট করে আমরা চেষ্টা করছি। পুরাতন নলকূপগুলো নতুনভাবে করতে পারলে পানি চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে।”

এই মুহূর্তে বিএডিসি সেচ বিভাগের দেওয়া তথ্যে সেচ পাম্প এলাকায় পানির লেভেল ৮ দশমিক ৫০ মিটার। আর এক থেকে দুই মিটার নিচে নেমে গেলে এসব সেচ যন্ত্রে পানি ওঠা দুষ্কর হয়ে পড়বে বলে অভিমত বিশেষজ্ঞদের।

সরকারি মাইকেল মধুসুধন মহাবিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগীয় প্রধান ছোলজার রহমান বলেন, “এখানে একসময় যতো ভূপৃষ্ঠস্থ জলাধার ছিল বা পানির উৎস ছিল বা প্রাকৃতিক জলাধার ছিল এগুলো ভরাট করে ব্যক্তিগত উদ্যোগে বা কৃষি বা নগরায়নের আওতায় এনে উৎসগুলো ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে বা অত্যন্ত সংকুচিত বা রাশ করা হয়েছে। ফলে পানি সঞ্চায়ের জায়গা এবং ভূপৃষ্ঠস্থ পানি পাওয়া ও ব্যবহারের জায়গাগুলো এখানে কমে গেছে।”

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের তথ্য মতে, এই মুহূর্তে জেলার ৮ উপজেলাতেই পানির স্তর নেমে গেছে ৩৫ থেকে ৩৮ ফুট। যে কারণে অধিকাংশ টিউবওয়েলেই পানি উঠছে না। 

যশোর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদ পারভেজ বলেন, “কি ধরনের টিউবওয়েল স্থাপন করবে এ ব্যাপারে আমাদের কাছে পরামর্শ চায়। পানির স্তর যদি ৩৭ ফুট পর্যন্ত নেমে যায়  তাতে যেন পানি সরবরাহ ব্যবস্থা সচল থাকে সেভাবেই পরামর্শ দিচ্ছি আমরা।”

তাপদাহে পানি শূন্য হয়ে পড়ছে কুষ্টিয়ার গড়াই, তার উপর জিকে সেচ প্রকল্পের পাম্প মেশিন নষ্ট থাকায় প্রকল্পের খালগুলো পানিশূন্য। 

পানির স্তর নিচে নামায় কুষ্টিয়া শহরের ২১টি ওয়ার্ডের বেশির ভাগ নলকূপেই পানি উঠছে না। এতে গড়াই পাড়ের বাসিন্দারা বেশি বেকায়দায়। 

তাপদাহ তীব্র হওয়ায় এতে প্রভাব পড়ছে কৃষকের ক্ষেত ও পোল্ট্রি খামারেও। ভুট্টা, ধান, আখ থেকে শুরু করে সবজি ক্ষেত মরে যাচ্ছে।

এলাকাবাসী জানান, মওসুমের তিনটি ফসলই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ধান চিটা হয়ে যাচ্ছে। অনেক খামারের মুরগি মারা যাচ্ছে।

আর কৃষিবিদরা বলছেন, গরম অব্যাহত থাকলেও বোরো আবাদের বিপর্যয় হতে পারে। এ জন্য স্যালো ইঞ্জিন চালিত পানির পাম্পগুলো মাটি খুঁড়ে গভীরে বসানোর পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। 

কুষ্টিয়ার কৃষিবিদ সৌতম কুমার শীল বলেন, “দিনের বেলায় যেন সেচটা কম দেওয়া হয়। এটা বিকাল থেকে সন্ধ্যা কিংবা রাতেবেলা সেচটা দিলে পানিটা দীর্ঘসময় মাটিতে থাকবে।”

বৃষ্টি না হলে তাপদাহ থেকে সৃষ্ট সমস্যা কাটবে না বলে মনে করছেন পরিবেশবিদরা।

এএইচ


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি