ঢাকা, শনিবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

তীব্র তাপদাহের প্রভাব, চা গাছে নেই নতুন কুঁড়ি

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ১১:৩২, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

Ekushey Television Ltd.

প্রচণ্ড তাপদাহে চা গাছে আসছেনা নতুন  কুঁড়ি। কোথাও কোথাও জ্বলে পুঁড়ে ছাই হয়ে গেছে গাছ। কোথাও ধরেছে বাঞ্জি দশা। আবার কোথাও ধরেছে লাল রোগ। চা উৎপাদন শুরুর মৌসুমেই নেমে গেছে উৎপাদনের গতি। এ অবস্থায় চা বাগানকে রক্ষা করতে শ্রমিক, বাগান ম্যানেজার ও বিজ্ঞানীরা চেষ্টা চালাচ্ছেন প্রাণান্তকর।  

দাবদাহের এই প্রভাব পড়েছে মৌলভীবাজার জেলার ৯২টি চা বাগানে। 

বৃহস্পতিবার মৌলভীবাজারের বিভিন্ন চা বাগানে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রচণ্ড রোদে শ্রমিকরা পাতা তুলছেন। অনেকেই ঘামে ভিজে গেছেন। তবে যে সকল সেকশনে সেড কম সে সকল সেকশনে গাছের পাতায় ধরেছে ভাজ। যেটিকে তারা চায়ের বাঞ্জি দশা বলেন। কোথাও দেখা যায়, রেডস্পাইডারের আক্রমণে গাছে ধরেছে লাল রোগ। আবার কোথাও গাছের পাতা মরে ঝরে যাচ্ছে।

এ সময় বিগত ডিসেম্বরে প্রুনিং করা কয়েকটি সেকশনে গিয়ে দেখা যায়, গাছে এখন সুটই (নতুন কুঁড়ি) আসেনি। চা শ্রমিক জয়ন্তী তাঁতী জানান, বৃষ্টি না হলে এই গাছে সুট আসবে না। 

শ্রীমঙ্গল ভুরভুরিয়া চা বাগানের একটি সেকশনে গিয়ে দেখা যায়, চা গাছে বাঞ্জি দশা যাতে না ধরে সে জন্য ঔষধ স্প্রে করছেন শ্রমিকরা।

শ্রীমঙ্গল ভাড়াউড়া চা বগানের নারী শ্রমিক বাসন্তি বাউরী বলেন, যে সময় নতুন পাতায় তাদের হাত ভরে যাওয়ার কথা এই সময়ে নতুন সুটের (কুড়ি) জন্য বাঞ্জিদশায় আক্রান্ত পাতা তুলে ফেলতে হচ্ছে শ্রমিকদের। অন্যদিকে, পাতা কম থাকায় প্রতিদিনের ২৪ কেজি পাতাও উঠাতে পারছেন না তারা।

ষাটোর্ধ্ব চা শ্রমিক অলকা বালা জানান, প্রচণ্ড রোদে শরীরের ঘাম ঝড়িয়ে এখন পাতা পান ১০ থেকে ১৫ কেজি। আর পাতা চয়নের পাশাপাশি গাছ রক্ষায় সার, পানি দেয়াসহ তাদের করতে হচ্ছে প্রতিরক্ষামূলক কাজও। তিনি বলেন, ২৪ কেজিতে তাদের নিরিখ প্রতিদিনের বেতন। তাদের অনেকেই ২৪ কেজির উপরে পাতা তুলেন। এর উপরে উঠালে অতিরিক্ত টাকা পান। মূল হাজিরার সাথে এটা সংযুক্ত করে তারা কোন রকমে সংসার চালান। তবে এখন ২০ কেজির উপরে কেউ পাতা উঠাতে পারেন না।

বাংলাদেশীয় চা সংসদের সিলেট অঞ্চলের ব্রান্চ চেয়ারম্যান গোলাম মো. শিবলী জানান, চায়ের জন্য ২০ থেকে ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়ার্স তাপমাত্রা উত্তম। তবে সর্বোচ্চ ২৯ ডিগ্রি পর্যন্ত চা গাছ তাপ সহ্য করতে পারে। এর উপরে গেলেই খরায় পড়বে চা। তবে চা বাগানে সেড টির কারণে ৩৫ ডিগ্রি পর্যন্ত সহনীয়।

শ্রীমঙ্গল জেরিন চা বাগানের ব্যবস্থাপক সেলিম রেজা জানান, বর্তমানে মৌলভীবাজারের তাপমাত্রা রেকর্ড হচ্ছে ৩৫ ডিগ্রির উপরে। এতে ক্ষতির মুখে পড়েছে এ শিল্প। এ থেকে বাঁচার প্রধান পথ বৃষ্টি। বিকল্প হিসেবে বিভিন্ন ইয়াং গাছকে বাঁচাতে পানি দিতে হচ্ছে।

এ অবস্থায় চায়ের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ফিরিয়ে আনতে ইরিগেশনের পাশাপাশি প্রতি চার গাছের মধ্যে মাটি গর্ত করে পঁচা গোবরের সাথে কিছু টিএসপি মিশিয়ে আবার মাটিতে মিলিয়ে দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বাংলাদেশ চা গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক ড. ইসমাইল হোসেন। তিনি জানান, প্রতিদিনই চা গবেষণা কেন্দ্রের টিম বিভিন্ন বাগান ভিজিট করে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। অনেকে তা বাস্তবায়িত করে সফলতাও পেয়েছেন।

আর এ ব্যাপারে বাংলাদেশ চা বোডের প্রকল্প উন্নয়ন ইউনিটের পরিচালক ড. রফিকুল হক বলেন, বাংলাদেশ যেহেতু একটি দুর্যোগপ্রবণ দেশ সেহেতু খরা মৌসুমের জন্য স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বিশেষ করে সমন্বিত ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করতে হবে এবং এই পরামর্শই দিচ্ছে চা বোর্ড।  

সহসা চায়ের জন্য পরিমিত বৃষ্টি না পেলে দেখা দিতে পারে উৎপাদন ঘাটতি। তবে এটি মোকাবেলায় প্রপার সেডটি ব্যবস্থাপনাও ঠিক রাখার পরামর্শ চা বিজ্ঞানীদের।

এএইচ


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি