ঢাকা, শনিবার   ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪

স্বর্ণের খোঁজে মাটি খুঁড়ে সন্দিহান হাজারো মানুষ, ১৪৪ ধারা জারি

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ১০:১৪, ২৬ মে ২০২৪ | আপডেট: ১০:১৬, ২৬ মে ২০২৪

ঠাকুরগাঁও জেলা শহর থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরে রানীশংকৈল উপজেলার কাতিহার এলাকার আরবিবি ইট ভাটা। মাস দেড়েক আগে হঠাৎ সেখান থেকে গুঞ্জন ওঠে মাটি থেকে স্বর্ণ পাওয়ার। এই সংবাদ ছড়িয়ে পড়ায় গত বেশ কয়েক দিন ধরে স্থানীয়দের পাশাপাশি বিভিন্ন জেলার থেকে আগত হাজারো মানুষ দিন ও রাত ভর স্বর্ণের খোঁজে মাটি খুঁড়ে সন্দিহান। 

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কায় শনিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ওই ভাটায় ও তার আশপাশ এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে স্থানীয় প্রশাসন। 

লক্ষ টাকার স্বপ্ন দেখে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। কিন্তু সেই স্বপ্ন পূরণে মাটি খুঁড়ে চলেছেন হাজারো মানুষ। শনিবার দিনে ও রাতে এমনি দৃশ্য দেখা আরবিবি ইট ভাটায়। বিভিন্ন বয়সের হাজার হাজার মানুষ কেউ কোদাল, কেউ বাসিলা, কেউ খুন্তি নিয়ে এসেছেন স্বর্ণের খোঁজে। শিশু মহিলা থেকে শুরু করে কিশোর, বয়োজ্যেষ্ঠরাসহ দলে দলে স্বর্ণ পাওয়ার আশায় খুঁড়ে চলেছেন মাটি। 

পাহাড় সম আরবিবি ইট ভাটায় মাটির স্তূপগুলো রাতে স্বর্ণের মতোই জ্বলজ্বল করে জ্বলছিল। রাতের অন্ধকারে মানুষের হাতে থাকা টর্চ লাইট ও মোবাইলফোনের আলোতে ইটভাটার মাটির স্তূপ স্বর্ণালী রূপ ধারণ করে। দূর থেকে যে কেউ দেখলেই গভীর অন্ধকারে টর্চের আলোয় আলোকিত স্বর্ণালী এক পাহাড়ের দৃশ্য দেখে চমকে উঠবে। 

মনে হবে বাংলাদেশের উত্তরের এ প্রত্যন্ত অঞ্চলে অলৌকিকভাবে কোনো স্বর্ণের পাহাড় দাঁড়িয়ে আছে।

হাজারো মানুষের বিশ্বাস আর আস্থা যেন কাতিহারের ইট ভাটার মাটির স্তূপ। কেউ ভাগ্য বদলের আশায় আবার কেউ শখের বসে গভীর রাতে খুঁড়ে চলছেন মাটি।

স্থানীয়রা জানান, বেশ কিছু দিন ধরে চলছে মাটি স্বর্ণের খোঁজে খনন প্রতিযোগিতা। স্থানীয়রাসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলা উপজেলা থেকেও ছোটখাটো যানবাহন নিয়ে স্বর্ণের সন্ধানে ভাগ্য বদলের জন্য ছুটে এসেছেন নানান পেশার মানুষ।

এমনি স্বর্ণের সন্ধানে সন্ধীহান ব্যক্তিরা বলছেন, মাটি খুঁড়ে বেশ কিছুদিন থেকেই অনেকে সোনা পাচ্ছেন এমন কথা শুনে তাই তারাও এসেছেন এখানে। অনেকে ভাগ্য বদলের আশায় দিনের পর দিন ও ঘন্টার পর ঘন্টা মাটি খুঁড়েই চলেছেন কিন্তু সোনা পাচ্ছেন না। 

গভীর রাতে হাতে কোদাল, বাসিলা, খুন্তি, সাবাল দিয়ে মাটি খুঁড়ে ঘেমে যাওয়ায় অনেকের শরীরের ক্লান্তির ছাপ কিন্তু তারপরেও স্বর্ণ খোঁজার চেষ্টার যেন কোন কমতি নেই তাদের।

আর অনেকে মিডিয়া ও ফেসবুকে দেখে পরিবারের বউ বাচ্চা নিয়ে ছুটে এসেছেন এসব দৃশ্য দেখতে। তারা বলছেন, এটি গুজব হলে বা সোনা পাওয়া না গেলে এখানে এতো মানুষ কেন আসবে ও দিনের পর দিন কেন মাটি খনন করবে। 

ইতিমধ্যে এখানে মাটি খুঁড়ে স্বর্ণলংকার পেয়ে ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটিয়েছে পাঁচ শতাদিক মানুষ। অনেকেই সোনা পেয়েছেন তবে ঝামেলায় জড়িয়ে পড়তে পারেন এই ভয়ে মুখ খুলছেন না। অনেকে আবার মাসদেড়েক ধরে রাতভর মাটি খুঁড়েও পাননি সোনা। কিন্তু তারা অন্যকে ভরি ভরি স্বর্ণলংকার পেতে দেখেছেন। তারা বলছেন, যারা সোনা পেয়েছেন তারা আবার অনেকে এলাকা ছেড়ে দূরে চলে গেছে। 

স্থানীয় কয়েকজন জানান, রাজা টংকনাথের বাড়ির বিলুপ্ত এক মন্দিরের পাশ থেকে ইট তৈরির জন্য মাটিগুলো নিয়ে আসা হয়েছে এই ভাটায়। তখনকার জমিদার ও ধনিদের অনেক স্বর্ণলংকার ছিল। তারা মন্দিরে সোনারুপা দিতো। মন্দিরটি ধ্বংসের ফলে সেগুলো হয়তো সেখানকার আশপাশের মাটিতে চাপা পরে। আর সেই মাটির সাথে এসব উঠে আসে এখানে।

এদিকে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কায় ওই ইট ভাটায় ও তার আশপাশ এলাকায় শনিবার রাত সাড়ে ১০টায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে বলে জানান রাণীশংকৈল উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা। 

এএইচ


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি