ঢাকা, শনিবার   ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪

সুরমার পানি বিপদসীমার উপরে, ২০ গ্রাম প্লাবিত

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৯:৩৭, ১৭ জুন ২০২৪ | আপডেট: ১৯:৩৯, ১৭ জুন ২০২৪

সুনামগঞ্জ জেলায় পাহাড়ী ঢলে সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার অনেক উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সোমবার (১৭ জুন) দুপুর ১২টায় সুনামগঞ্জের ষোলঘর পয়েন্টে পানি বিপদ সীমার ২০ সেন্টিমিটার ও ছাতক উপজেলায় ৬২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। 

ভারতের মেঘালয়-চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় সুনামগঞ্জের সীমান্তবর্তী সদর উপজেলার বনগাঁও নখরিয়া ছড়া সীমান্ত নদী, ধোপাজান চলতি নদী, তাহিরপুর উপজেলার যাদুকাটা ও পাটলাই নদী এবং দোয়ারাবাজার উপজেলার খাসিয়ামারা, চিলাই ও ছেলা নদী দিয়ে পাহাড়ী ঢলের পানি প্রবাহিত হয়ে জেলার প্রধান নদী সুরমা কানায়-কানায় ভরপুর হয়ে ভাটির জনপদে স্বল্প মেয়াদী বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। 

অন্যদিকে সিলেট জেলার বন্যার পানি ছাতক উপজেলায় আঘাত হেনে জেলার অন্যতম দেখার হাওর ও জাউয়ার হাওর অতিক্রম করে সুনামগঞ্জ শহরকে প্লাবিত করে চলেছে।

সুনামগঞ্জ পৌরসভার পূর্ব সুলতানপুর, মোহাম্মদপুর, নবীনগর, উত্তর আরপিননগর, তেঘরিয়া, নতুনপাড়াসহ বর্ধিত পৌর এলাকার প্রায় আড়াই শতাধিক বাসাবাড়িতে পানি উঠেছে। সকাল থেকে শহরের কাজিরপয়েন্ট, তেঘরিয়া,পূর্ব সুলতানপুর ও নতুনপাড়াসহ প্রায় ২০টি আবাসিক এলাকার রাস্তাঘাট পানিতে নিমজ্জিত হয়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।

উত্তর সুরমা পাড়ের ইব্রাহিমপুর ও হুরারকান্দা গ্রামের ঈদগাহ ময়দানসহ সদর উপজেলার বেশ কয়েকটি ঈদগাহ বৃষ্টি ও ঢলের পানিতে নিমজ্জিত এবং ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় মুসল্লীয়ানরা দু'দফায় মসজিদের ভেতরে ঈদুল আযহার নামাজ আদায় করেছেন।

বৃষ্টির পানি পাহাড়ী নদী দিয়ে এপারে নামায় জেলার দোয়ারাবাজার উপজেলার লক্ষীপুর ইউনিয়নের পাশ দিয়ে প্রবাহিত খাসিয়ামারা নদীর বেড়ি বাঁধ ও বোগলাবাজার ইউনিয়নের চিলাই নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে আশপাশের ২০টি গ্রাম ও সড়ক প্লাবিত হয়ে প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ দুর্ভোগে পড়েছেন। 

ইতিমধ্যে বৃষ্টি ও বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে জগন্নাথপুর উপজেলার নীচু এলাকা। সুনামগঞ্জ বিশ্বম্ভরপুর ও তাহিরপুর উপজেলার একমাত্র ১০০ মিটার সংযোগ সড়কটিতে পানি উঠে যাওয়ায় গত দু'দিন ধরে জেলা সদরের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। সদর উপজেলার ইব্রাহিমপুর ডলুরা সড়কটি প্লাবিত হয়ে ভোগান্তিতে পড়েছেন প্রায় লক্ষাধিক মানুষ।

সীমান্তের ওপার মেঘালয় চেরাপুঞ্জিতে গেল তিন দিন ধরেই বৃষ্টি হচ্ছে। গেল ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে বৃষ্টি হয়েছে ৩৬৫ মিলিমিটার এবং সীমান্তের ওপারে হয়েছে ৪৪১ মিলিমিটার।

কানাইঘাট ও সিলেটে যেহেতু পানির উচ্চতা বেড়েছে, সুনামগঞ্জের সুরমায় ও কুশিয়ারায় পানি আরেকটু বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্বশীলরা। তবে আবহাওয়াবিধ ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বলেছেন, বড় ধরনের বন্যা হবার মত কোন আশংকা নেই।

দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নেহার নিগার তনু বলেন, টানা কয়েকদিনের বৃষ্টিপাত আর পাহাড়ি ঢলে উপজেলার কয়েক জায়গায় বেড়িবাঁধ ভেঙে কয়েকটি বাড়ি-ঘরের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমাদের ১৭টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত আছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার জানিয়েছেন, সুরমা ও কুশিয়ারার পানি বাড়লেও অন্য নদীগুলো বিশেষ করে কালনী ও যাদুকাটায় পানি দেড় থেকে আড়াই ফুট নীচে রয়েছে। জেলার অন্য নদীগুলোর পানিও বিপদ সীমার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

সিলেট আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ সজিব আহমদ জানিয়েছেন, আগামী ২২ জুন পর্যন্ত পাঁচ দিন সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগের কোন কোন এলাকায় মাঝারী থেকে ভারী বৃষ্টি হতে পারে। তিনি বলেন, বৃষ্টি হবে চেরাপুঞ্জিতেও। এই সময় সুনামগঞ্জে নদীর পানিও বাড়বে।

রাজধানীর আবহাওয়া অধিদপ্তরে কর্মরত আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ জানিয়েছেন, মেঘালয় চেরাপুঞ্জিতে কয়েকদিন হয় নিয়মিতই বৃষ্টি হচ্ছে। একারণে হঠাৎ করে অস্বাভাবিকভাবে নদ নদীর পানি বাড়ছে। তবে বিপজ্জনকভাবে বন্যা হবার আশংকা আপাতত দেখা যাচ্ছে না।

এএইচ


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি