ঢাকা, রবিবার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪

বেনাপোল বন্দরে চাঁদাবাজি বন্ধে বিভিন্ন মহলে চিঠি

বেনাপোল প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ১২:৫৭, ৩০ জুন ২০২৪

দেশের সর্ববৃহৎ বেনাপোল স্থলবন্দরে আমদানি পণ্যবাহী ট্রাক থেকে লোড-আনলোডসহ বন্দর নির্ধারিত ফি ছাড়াও অতিরিক্ত ট্রাকপ্রতি এক হাজার থেকে ১৫শ’ টাকা দিতে হচ্ছে। এই চাঁদাবাজি বন্ধে প্রশাসনসহ বিভিন্ন সরকারি মহলের কর্মকর্তাদের কাছে সহযোগিতা চেয়ে আবেদন করেছেন বন্দর ব্যবহারকারী একাধিক সংগঠন। একই সাথে বন্দরে পণ্য খালাসে আধুনিক সুবিধাযুক্ত করার দাবি জানিয়েছে তারা।

সম্প্রতি বেনাপোল ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি মালিক সমিতি ও যশোর জেলা ট্রাক এবং ট্যাংকলরি ও কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির পক্ষ থেকে স্থানীয় এমপি, স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানসহ প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে পত্র দিয়ে বন্দরে চাঁদাবাজি বন্ধে এ আবেদন জানানো হয়।

অভিযোগে বলা হয়েছে, বেনাপোল বন্দরে আমদানি-রফতানি পণ্য ওঠানো, নামানোর কাজে নিয়োজিত ৯২৫ ও ৮৯১ দুই শ্রমিক ইউনিয়নের প্রায় দুই হাজার শ্রমিক রয়েছেন। শ্রমিক সংগঠন দুটি বেসরকারি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের হয়ে বন্দরে পণ্য খালাসের কাজ করেন। বর্তমান বন্দরে পণ্য ট্রাকে ওঠানো ও নামানোর পর শ্রমিকদের বকশিস (চাঁদাবাজি) যেটা আগে তিনশ’ থেকে পাঁচশ’ টাকার মধ্যে ছিল এখন সেটা বেড়ে এক হাজার থেকে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত হয়েছে। অথচ এই সীমাহীন চাঁদাবাজির বিষয়ে স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার বলা সত্বেও তারা এটা বন্ধে কোন কার্যকর ভূমিকা নেয়নি।

অভিযোগকারি সংগঠনের তথ্য মতে, দৈনিক বেনাপোল বন্দর থেকে গড়ে ৬শ’ ট্রাক বিভিন্ন ধরনের পণ্য লোড-আনলোড হয়। ট্রাক প্রতি যদি এক হাজার টাকা করে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হয় তাহলে দিনে চাঁদার পরিমাণ দাঁড়ায় ৬ লাখ টাকা। সরকারি ছুটির দিন বাদ দিলে মাসে ২০ দিন ধরলে দাঁড়ায় ১ কোটি ২০ লাখ টাকা। বছর হিসাবে এর পরিমাণ ১৫ কোটির কাছে।

বেনাপোলের একাধিক সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ব্যবসায়ীরা জানান, বেনাপোল বন্দর দিয়ে দেশের ৭০ শতাংশ ব্যবসায়ীর বাণিজ্যের চাহিদা থাকলেও যথাযথ উন্নয়ন নেই বন্দর কর্তৃপক্ষের। দ্রুত পণ্য খালাসে নতুন শেড, ইয়ার্ড, ক্রেন, ফর্কক্লিপ যুক্ত করা জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ব্যবসায়ীদের গুরুত্ব বুঝে বন্দর আধুনিকায়ন করা জরুরি। দেশের চট্রগ্রাম, মোংলা স্থলবন্দরে লোড ও আনলোডে সিরিয়াল দিলেই পণ্য খালাস হয়ে যায়। অথচ বেনাপোলে বিলের মাধ্যমে সকল টাকা পরিশোধ করলেও অতিরিক্ত অর্থছাড়া কোন ট্রাক লোড ও আনলোড হয়না। এ বিষয়ে পোর্ট কর্তৃপক্ষকে জানালেও কোন মাথাব্যাথা নেই।

আমদানিকারক কামাল হোসেন জানান, দ্রুত পণ্য খালাসে নতুন ক্রেন, ফর্কক্লিপ যুক্ত করা জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে পণ্য খালাসে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে দ্বিগুন লাগছে। আর শ্রমিকদের বকশিষ সেটা আগে ৫০০ টাকার মধ্যে ছিল এখন তা বেড়ে এক হাজার থেকে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত হয়েছে।  যা নিয়ে মাঝে মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিচ্ছে ব্যবসায়ীদের মাঝে।

বেনাপোল ট্রান্সপোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আজিম উদ্দীন গাজী বলেন, বেনাপোল বন্দরে শ্রমিকেরা যে সকল পণ্য খালাস করেন, তার মজুরি ব্যবসায়ীরা বিলের মাধ্যমে পরিশোধ করেন। কিন্তু ট্রাক লোড ও আনলোডের পর বর্তমান বন্দরের শ্রমিকরা জোর পূর্বক ট্রাক প্রতি অতিরিক্ত ১৫শ’ থেকে দুই হাজার টাকা আদায় করছে। কোন কিছু বললে ট্রাক চালকদের সাথে বিভিন্ন হয়রানিসহ ট্রাক আটকের ঘটনাও ঘটছে। এহেন চাঁদাবাজি বন্ধের বিষয়ে বন্দরের পরিচালককে জানানো হলেও তিনি কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। প্রতিকার না পেয়ে অবশেষে স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে চাঁদাবাজি বন্ধ চেয়ে চিঠি দিয়েছি। এতে চাঁদাবাজি বন্ধ না হলে বন্দরে ট্রাক লোড-আনলোড বন্ধ করা ছাড়া কোন উপায় থাকবে না।

এ বিষয়ে বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি সাজেদুর রহমান বলেন, বর্তমানে পণ্য খালাসে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে দ্বিগুণ সময় লাগছে এবং তাছাড়া শ্রমিকদের বকশিস (চাঁদাবাজি) তিনগুন বাড়িয়েছে। এ নিয়ে বন্দরে ব্যাপক ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। তাছাড়া বেশ কয়েক বছর ধরে বেনাপোল বন্দরে নানা অনিয়ম আর অব্যবস্থাপনায় মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে আমদানি-রফতানি বাণিজ্য। 

এ ব্যাপারে বেনাপোল বন্দর হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ওহিদুজ্জামান অহিদ জানান, শ্রমিকদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে সেটি ভিত্তিহীন। তার শ্রমিকেরা বন্দরে কোনভাবে চাঁদাবাজির সাথে জড়িত নেই।

বেনাপোল বন্দর পরিচালক রেজাউল করিম বন্দরে পণ্য খালাসে ক্রেন, ফর্কক্লিপের স্বল্পতার কথা স্বীকার করে জানান, বন্দরে সক্ষমতা বাড়াতে বিভিন্ন উন্নয়ণমূলক কাজ চলছে। আর শ্রমিক চাঁদাবাজির বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে। ইতোমধ্যে চাঁদাবাজির ঘটনায় বন্দরের সহকারি পরিচালকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কোনো ধরনের চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।

এএইচ


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি