ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪

দুই দশকে সুন্দরবনে ৩৫ বাঘের মৃত্যু

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৩:০৩, ৩০ জানুয়ারি ২০১৮ | আপডেট: ১৮:৫০, ৩১ জানুয়ারি ২০১৮

সুন্দরবনে গত দুই দশকে অন্তত ৩৫টি রয়েল বেঙ্গল টাইগারের মৃত্যু হয়েছে। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার সকালে সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের সুন্দরবন সংলগ্ন মোরেলগঞ্জ উপজেলার নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের গুলিশাখালী গ্রামে প্রায় আড়াই বছর বয়সী বাঘ শাবকটিকে পিটিয়ে হত্যা করে গ্রামবাসী। এরমধ্যে লোকালয়ে ঢুকে পড়ায় গ্রামবাসীর পিটুনীতেই অন্তত ১৫টি বাঘের মৃত্যু হয়। এছাড়া চোরা শিকারি, বার্ধক্যজনিত কারণ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে আরও ২০টি রয়েল বেঙ্গল টাইগারের মৃত্যু হয়।

অপরদিকে বনের বাঘের আক্রমণে নারী, পুরুষ মিলিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ২৬৫ জন। বাঘের আক্রমণে আহত হন প্রায় অর্ধশতাধিক মানুষ।
নিহতদের মধ্যে সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের সীমানায় ২৬ জন এবং সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগের সীমানায় ২৩৪ জন নিহত হন। এদের অধিকাংশই বনজীবী যারা বৈধ পাশ নিয়ে বনজসম্পদ আহরণে গিয়ে বাঘের মুখে পড়ে নিহত হন। এই তথ্য সুন্দরবন পূর্ব ও পশ্চিম বিভাগের সংরক্ষিত নথি থেকে পাওয়া।
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মাহমুদুল হাসান জানান, সুন্দরবন পূর্ব বিভাগে লোকালয়ে ঢুকে পড়ে ২০০৭ সালের সিডরের জলোচ্ছ্বাসে, বার্ধক্যজনিত কারণে এবং চোরাশিকারীদের হাতে মোট ১৭টি রয়েল বেঙ্গল টাইগার মারা পড়েছে। এর মধ্যে বন সংলগ্ন মংলা ও শরণখোলা উপজেলার লোকালয়ে ঢুকে পড়ায় পাঁচটি বাঘকে পিটিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয়। স্বাভাবিক মৃত্যু হয় অন্তত চারটি বাঘের। একটি বাঘ মারা যায় ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বরের সিডরের জলোচ্ছ্বাসে। বাকি আটটি বাঘ চোরাশিকারীদের হাতে নিহত হয়।২০০১ সাল থেকে চলতি বছরের ২৮ জুলাই পর্যন্ত সময়ে সুন্দরবন পূর্ব বিভাগে ১৭টি রয়েল বেঙ্গল টাইগার মারা গেছে।

তিনি আরও জানান, বিভিন্ন সময়ে বাঘের আক্রমণে একজন নারীসহ মোট ২৬ জন প্রাণ হারান। এদের মধ্যে ময়না নামে মংলা উপজেলার জয়মনি এলাকার এক বৃদ্ধ গ্রামবাসী ছাড়া বাকি সবাই বনজীবী। নিহতদের মধ্যে ১৪ জন বাগেরহাটের সুন্দরবন সংলগ্ন শরণখোলা উপজেলার ছয়জন, মংলা উপজেলার একজন, রামপাল উপজেলার এবং অপর পাঁচজন খুলনার দাকোপ, পাইকগাছা ও বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার বাসিন্দা। একই সময়ে চারটি পৃথক ঘটনায় বাঘের আক্রমণে একজন বনকর্মীসহ নয়জন আহত হন।

সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা বশিরুল আল মামুন জানান, গত দুই দশকে সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগে মোট ১৫টি রয়েল বেঙ্গল টাইগার নিহত হয়। এর মধ্যে লোকালয়ে ঢুকে পড়ায় মানুষের পিটুনীতে নিহত হয় আটটি। এছাড়া ২০০১ সাল থেকে ২০১৮ সালের ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রায় দুই দশকে সেখানে ২৩৪ জন নারী-পুরুষ বাঘের আক্রমণে নিহত হয়েছেন। এদের অধিকাংশই বনজীবী ও সুন্দরবন সংলগ্ন নদী-খালে চিংড়ি রেণু আহরণকারী।

সুন্দরবনের বণ্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. মদিনুল আহসান বলেন, সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার সংরক্ষণে সরকার ‘বাংলাদেশ টাইগার অ্যাকশন প্ল্যান ২০০৯-১৭ বাস্তবায়ন করছে। এরই অংশ হিসেবে বাঘ রক্ষায় সচেতনতা সৃষ্টি, বাঘের আক্রমণ থেকে বন সংলগ্ন লোকালয়ের জানমাল এবং মানুষের হাত থেকে লোকালয়ে চলে আসা বাঘ রক্ষায় ৮৯টি টাইগার রেসপন্স টিম গঠন করা হয়েছে। গত ১০ বছরে ৯টি বাঘ মানুষের হাতে মারা পড়েছে। দিনদিন মানুষ সচেতন হচ্ছে। তুলনা করলে এখন আগের তুলনায় এখন বাঘ কমই মারা পড়ছে। লোকালয়ে বাঘ ঢুকে পড়লে তা রক্ষায় ভিলেজ টাইগার রেসপন্স টিম (ভিটিআর) কাজ করে থাকে। বাঘ অচেতন করতে আমাদের ছয়টি বন্দুক রয়েছে। গত মঙ্গলবার যে বাঘটি গুলিশাখালী গ্রামে ঢুকে পড়েছিল তা রক্ষায় আমরা প্রস্তুত ছিলাম। কিন্তু বিক্ষুব্দ গ্রামবাসীর কারণে বাঘ শাবকটিকে বাঁচাতে পারিনি। যা খুবই দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেন ওই বন কর্মকর্তা।

তিনি আরও বলেন, সুন্দরবনের ভোলা, বলেশ্বর ও পশুর নদীর বিভিন্ন স্থানে পলি জমে নদী মরে যাচ্ছে। যার কারণে নদীতে পানি কমে যাওয়ায় সুন্দরবন সংলগ্ন বেশকিছু এলাকার লোকালয়ে বাঘ অবাধে ঢুকে পড়ছে। এই নদীগুলোর খনন কাজ করতে প্রকল্প তৈরি করা হচ্ছে। ওই প্রকল্প অনুমোদন পেলে আমরা ওই নদীগুলো খনন করা হবে।

রয়েল বেঙ্গল টাইগার সম্পর্কে কিছু সাধারণ তথ্য-
পৃথিবীতে এখন যে ছয় প্রজাতির বাঘ টিকে আছে তার মধ্যে রয়েল বেঙ্গল টাইগার অন্যতম। বিশ্বের সর্ববৃহৎ একক ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট (বাদাবন) বাংলাদেশের সুন্দরবনে একক জায়গায় পৃথিবীর সব থেকে বেশি রয়েল বেঙ্গল টাইগার বসবাস করে। পূর্ণ বয়স্ক বাঘের ওজন সর্বোচ্চ ২২০ কেজি এবং বাঘিনীর ওজন সর্বোচ্চ ১৬০ কেজি। প্রাকৃতিক পরিবেশে এরা ১০ থেকে ১৪ বছর বাঁচে। তবে বন্দি অবস্থায় এদের আয়ু ১৮-১৯ বছর। বাঘিনী দুই থেকে তিন বছর পর পর এক সঙ্গে দুই থেকে তিনটি বাচ্চা দেয়। বাচ্চারা মায়ের সঙ্গে থাকে দুই বছর। এই সময় বাঘিনী পুরুষ বাঘের সংগ এড়িয়ে চলে। কারণ পুরুষ বাঘের কাছে বাঘ সাবক নিরাপদ না।

তিন প্রজাতির বাঘ পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। যে ১৩টি দেশে বাঘ টিকে আছে সেগুলো হচ্ছে বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার, চীন, ইন্দোনেশিয়া, কম্বোডিয়া, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, লাওস ও রাশিয়া।

এসএইচ/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি